২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার

শিরোনাম
তেলবাহী লড়ি উল্টে গিয়ে আগুন লেগে এক জনের মৃত্যু। ভূমি বিষয়ক তথ্যাদি স্কুলের পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ গ্রহণ করো হয়েছে-ভূমিমন্ত্রী মির্জা ফকরুলরা তারেক জিয়ার নির্দেশে জনগনের সাথে প্রতারনা ও তামশা করছে-আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিগ বার্ড ইন কেইজ: ২৫ শে মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধুর গ্রেফতার  ঢাবি ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে ১ কোটি টাকার বৃত্তি ফান্ড গঠিত হাইকোর্টের রায়ে ডিন পদে নিয়োগ পেলেন যবিপ্রবির ড. শিরিন জয় সেট সেন্টার’ থেকে মিলবে প্রশিক্ষণ, বাড়বে কর্মসংস্থান: পীরগঞ্জে স্পীকার বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস আগামীকাল টুঙ্গিপাড়ায় যাচ্ছেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী, সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন বিশিষ্ট রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী সাদি মোহম্মদ আর নেই

অভিযান-১০ ট্রাজেডি: একমাসেও খোঁজ মেলেনি ৩০ জনের

আপডেট: জানুয়ারি ২৪, ২০২২

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন

ডেস্কঃ যাত্রীবাহী এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার একমাস পূর্ণ হয়েছে। একমাসেও খোঁজ মেলেনি নিখোঁজ ৩০ যাত্রীর। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে অজ্ঞাত পরিচয়ে ২৪ জন সমাহিত করা হয়েছে। আজও নিখোঁজদের খুঁজে বেড়াচ্ছেন স্বজনরা।

বরগুনা জেলা প্রশাসনের কন্ট্রোলরুম সূত্রে জানা গেছে, সদ্য শেষ হওয়া বছরের ২৩ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত পৌনে তিনটার দিকে ঝালকাঠর সুগন্ধা নদী পার হওয়ার সময় বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ লঞ্চের ইঞ্জিন রুমের মেশিনারি বিস্ফোরণ হয়ে আগুনের সূত্রপাত ঘটে।

ঘটনার পরপরই নিহত-আহতদের উদ্ধার, নিহতদের মরদেহ হস্তান্তর শেষে দাফনকার্য সম্পন্ন, আহতদের হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা সেবা, নিখোঁজদের উদ্ধার অভিযান এবং লঞ্চ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দায়ের ও গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়।

আরো জানা গেছে, নিখোঁজ ৩০ জনের বিপরীতে ৪৮ জন স্বজনের ডিএনএ নমুনা পরীক্ষা করেছে সিআইডি ফরেনসিক বিভাগ।

আর ঝালকাঠীর সুগন্ধা ও বিষখালী নদীর আশপাশের এলাকা থেকে ৪১ জনের মরদেহ উদ্ধার এবং বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসাপাতাল ও ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৮ জনের মৃত্যুসহ মোট ৪৮ জনের মৃত্যু হয়েছে।

লঞ্চের অগ্নিকাণ্ডের দুর্ঘটনায় সর্বশেষ ১৮ জানুয়ারি শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দগ্ধ মনিকা রানী হালদার (৪০) নামে শিক্ষিকা মারা যান।

রোববার (২৩ জানুয়ারি) বিকেলে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন বরগুনা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মেহেদী হাসান।

চলতি মাসের ১৯ জানুয়ারি বুধবার এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নৌ আদালতের মামলায় কারাগারে থাকা সাত আসামির জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন নৌ আদালতের বিচারক স্পেশাল মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জয়নাব বেগম এ আদেশ দেন।

মামলার আসামিরা হচ্ছেন লঞ্চটির স্বত্বাধিকারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স আল আরাফ অ্যান্ড কোম্পানির চার মালিক মো. হামজালাল শেখ, মো. শামিম আহম্মেদ, মো. রাসেল আাহাম্মেদ ও ফেরদৌস হাসান, লঞ্চের ইনচার্জ মাস্টার মো. রিয়াজ সিকদার, ইনচার্জ চালক মো. মাসুম বিল্লাহ, দ্বিতীয় মাস্টার মো. খলিলুর রহমান ও দ্বিতীয় চালক আবুল কালাম।

এর আগে অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় গত ২৬ ডিসেম্বর নৌ আদালতে মামলা করে নৌপরিবহন অধিদপ্তরের প্রধান পরিদর্শক মো শফিকুর রহমান ।

এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ত্রুটিপূর্ণ ইঞ্জিন থেকেই লঞ্চে আগুন লেগেছে। আর এর জন্য লঞ্চের চার মালিক, দুই ইনচার্জ মাস্টার, সুকানি, দুই ইঞ্জিনচালক ও চালকের সহকারী কে সরাসরি দায়ী করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন নৌ-মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি।

গত ৩ জানুয়ারি সোমবার রাতে নৌপরিবহন সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ্ উদ্দিন চৌধুরীর কাছে এ প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়।

প্রতিবেদনে ইঞ্জিন ত্রুটিপূর্ণ থাকার পরও লঞ্চের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়ায় কারণে নৌপরিবহন অধিদপ্তরের সদরঘাটের সার্ভেয়ার ও ইন্সপেক্টও এবং মেয়াদোত্তীর্ণ লাইসেন্স সংক্রান্ত বিধিবিধান লঙ্ঘনের জন্য ইঞ্জিন পরিবর্তন করা ডকইয়ার্ডের মালিককেও দায়ী করা হয়েছে।

পাশাপাশি প্রতিবেদনে টিকিট কেটে যাত্রী তোলা ও লঞ্চের রোটেশন প্রথা বাতিলসহ বেশ কিছু সুপারিশ করেছে নৌ-মন্ত্রণালয়ের এই তদন্ত কমিটি।

স্ত্রী-সন্তান হারা বরগুনার সুমন হোসেন বলেন, লঞ্চ চলাচলকারী কর্তৃপক্ষের কারণেই লঞ্চে আগুন লেগে এত লোক মারা গেছে। আগুন লাগার সাথে সাথে লঞ্চটি নদীর পাড়ে থামালে এত লোক মারা যেত না। দুর্ঘটনার একমাস হলেও লঞ্চে থাকা আমার স্ত্রী, দুই কন্যা ও শ্যালকের ছেলের আজও সন্ধান পাইনি। থানা পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, ঝালকাঠী ও বরগুনা ডিসি অফিসে বাববার নিখোঁজের তথ্য দিলে তারা খুঁজে বের করে দিতে পারেনি।

স্থানীয় গবেষক ও প্রবীণ সাংবাদিক আনিসুর রহমান খান স্বপন বলেন, লঞ্চে একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটছে। এতে যাত্রী সাধারণ ও লঞ্চ কর্তৃপক্ষ উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। প্রতিদিন লঞ্চ ছাড়ার সময় লঞ্চের ফিটনেস পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা এবং গ্যাসসিলেন্ডার ব্যবহার না করার প্রতি খেয়াল বাড়তে হবে। পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ আর নজরদারী না থাকায় দিনে দিনে বাড়ছে নৌদুর্ঘটনা।লঞ্চ পরিচালনা স্টাফদের মধ্যে সর্তকতা ও সচেতনতা সৃষ্টি না হলে কোন মামলা দিয়ে যাত্রীসেবা নিশ্চিত এবং দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করা সম্ভব নয় বলে মনে করছেন এই গবেষক।

অভ্যন্তরীণ লঞ্চ মালিক সমিতির সহ-সভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, লঞ্চ মালিক ও স্টাফরা সব সময়ই সর্তক থাকি। যাতে কোন দুর্ঘটনা না ঘটে। যাত্রীসেবা ব্যাহত না হয়। কিন্তু তারপরও কিছু না কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটছে।

বরিশাল অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের যুগ্ম পরিচালক ও নৌবন্দর কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, নৌ পথে পুরোপুরি শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা ও যাত্রীসেবা নিশ্চিত করতে আমরা নিষ্ঠা-স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করি। পাশাপাশি নৌ পথে যেকোন ধরনের বিশৃঙ্খলা পেলে তাৎক্ষণিক যে ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকি।বর্তমানে লঞ্চমালিক-স্টাফদের বিরুদ্ধে যেসব মামলা হয়েছে বর্তমানে ২টি মামলা মেরিন কোর্টে বিচারাধীন রয়েছে।

আর সেই মামলাগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে কোর্ট। আমরা চাই ঢাকা-বরিশাল রুটটি সুন্দর ও সুশৃঙ্খল রুটে পরিণত হোক, পুরোপুরি শৃঙ্খলা ফিরে আসুক জানান তিনি।

সূত্র: বার্তা২৪.কম

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন
     
Website Design and Developed By Engineer BD Network