২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

শিরোনাম
মির্জা ফকরুলরা তারেক জিয়ার নির্দেশে জনগনের সাথে প্রতারনা ও তামশা করছে-আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিগ বার্ড ইন কেইজ: ২৫ শে মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধুর গ্রেফতার  ঢাবি ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে ১ কোটি টাকার বৃত্তি ফান্ড গঠিত হাইকোর্টের রায়ে ডিন পদে নিয়োগ পেলেন যবিপ্রবির ড. শিরিন জয় সেট সেন্টার’ থেকে মিলবে প্রশিক্ষণ, বাড়বে কর্মসংস্থান: পীরগঞ্জে স্পীকার বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস আগামীকাল টুঙ্গিপাড়ায় যাচ্ছেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী, সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন বিশিষ্ট রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী সাদি মোহম্মদ আর নেই শিক্ষার মান নেমে যাওয়ায় উদ্বেগ শিক্ষার মান উন্নয়ন না হলে শুধু বদলী নয় কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে-মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষন পাঠ করলো ৭’শ শিক্ষার্থী

শেষ বাউন্ডারি মেয়র সাদিকের তিন চাকায় জমজমাট বরিশালের রাজনীতি

আপডেট: মে ১৮, ২০২২

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন

ব্যাটারিচালিত তিন চাকার (থ্রি-হুইলার) গাড়ির ১০ থেকে ১২ হাজার চালককে পক্ষে টানা নিয়ে জমজমাট বরিশালের রাজনীতি। সম্প্রতি উচ্চ আদালতের রায়ে শহর গ্রামের অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোতে ব্যাটারিচালিত এসব যান চলতে পারবে বলে নির্দেশনা আসার পর তা আরও জমে উঠেছে।

এ রাজনীতির একদিকে বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ এবং অন্যদিকে বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) বরিশাল জেলা সদস্য সচিব ডা. মনিষা চক্রবর্তী। তিনি গত সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন সাদিকের বিরুদ্ধে। এই দুপক্ষ ছাড়াও চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের শ্রমিক সংগঠনও চাইছে থ্রি হুইলার চালকদের পক্ষে টানতে।

সবমিলিয়ে এ কয়েক হাজার মানুষ এখন হয়ে উঠেছে বরিশাল মহানগরের রাজনীতির ঘুঁটি। একদিকে মেয়র সমর্থিত থ্রি হুইলার চালক সংগঠনের নেতাদের বিরুদ্ধে সমাবেশ করে চাঁদাবাজির অভিযোগ করছেন বাসদ নেতা মনিষা। অন্যদিকে বাসদের বিরুদ্ধেও একইভাবে চাঁদাবাজির অভিযোগ মেয়র সাদিকের। বিষয়টি নিয়ে দুপক্ষের পালটা-পালটি সমাবেশ, বিক্ষোভ আর স্মারকলিপি দেওয়াও চলছে প্রায় প্রতিদিন। অবশ্য এক্ষেত্রে শেষ খেলাটা খেলেছেন সিটি মেয়র সাদিক।

সোমবার বিকালে নগরের বঙ্গবন্ধু উদ্যানে তিন চাকার চালকদের এক জমায়েতে আগামী তিন মাসের মধ্যে সব থ্রি হুইলারকে বৈধতা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। বিষয়টিকে জয়ের জন্য মেয়র সাদিকের লাস্ট বাউন্ডারি হিসাবে দেখছেন সবাই। এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে বিপুলসংখ্যক চালকের সমর্থন তিনি নিয়ে নিলেন-এমনটাই বলছেন অনেকে। সবমিলিয়ে এ তিন পক্ষের টানাটানিতে দারুণ বিপাকে ব্যাটারিচালিত যানবাহন চালকরা।

বরিশাল নগরে নানা কারণে ব্যাটারিচালিত থ্রি হুইলার সব সময়ই একটি আলোচনার বিষয়। কখনো পুলিশ, কখনো ক্ষমতাসীন দলের নেতা আবার কখনো বা এদের নিয়ে নানা আন্দোলনে নামা কতিপয় রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে সব সময়ই রয়েছে চাঁদাবাজির অভিযোগ। যদিও এই জাতীয় থ্রি হুইলার চলাচলের অনুমোদনের বিষয়টি সব সময়ই ছিল ধোঁয়াশা। কখনো বলা হয়েছে এগুলো চলতে পারবে না আবার কখনো শুধু অভ্যন্তরীণ সড়কে চলতে পারবে বলেছেন সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিরা। বৈধভাবে চলাচল প্রশ্নে জটিলতা থাকায় বিভিন্ন সময়ে এসব থ্রি-হুইলার চালকরা ব্যবহৃত হয়েছেন রাজনৈতিক দল আর নেতাদের দাবার ঘুঁটি হিসাবে।

আন্দোলনের মাধ্যমে চলাচলের অনুমতি আদায় করার কথা বলে একপক্ষ যেমন তাদের নিয়ে করেছে মিছিল-মিটিং তেমনি বৈধতা এনে দেওয়ার কথা বলে অন্যরাও নিয়েছেন সুযোগ-সুবিধা। এভাবে চলতে থাকার একপর্যায়ে গত মাসে উচ্চ আদালতের দেওয়া এক রায়ে মহাসড়ক বাদে শহর-গ্রামের অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোতে চলাচলের অনুমতি পায় ব্যাটারিচালিত থ্রি-হুইলার। যদিও এ অনুমোদন কিভাবে বা কারা দেবে সেই বিষয়টি এখনও পরিষ্কার নয়। বিআরটিএর একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘নির্মাণ পদ্ধতি এবং চলাচলের আওতা প্রশ্নে এসব থ্রি-হুইলারকে বিআরটিএ থেকে লাইসেন্স দেওয়ার কোনো আইনি সুযোগ নেই। তাছাড়া ব্যাটারিচালিত এসব যানবাহন মোটর ভেহিক্যাল আইনের আওতায়ও পড়ে না। এক্ষেত্রে বিআরটিএ থেকে এদেরকে লাইসেন্স দিতে হলে নতুন করে আইন পাশ করতে হবে।’

এর আগে এসব ব্যাটারিচালিত থ্রি হুইলারকে লাইসেন্স দিয়েছিল বরিশাল সিটি করপোরেশন। হলুদ অটোরিকশা হিসাবে ওই লাইসেন্স দেওয়ার পাশাপাশি প্রতিবছর তা নবায়নও করত তারা। শুধু বরিশাল সিটি করপোরেশনই নয়-সারা দেশের প্রায় সব পৌরসভা আর নগর কর্তৃপক্ষ থেকে এভাবে দেওয়া হয়েছিল লাইসেন্স। পরে অবশ্য নিম্ন আদালতের রায় এবং সরকারি নির্দেশনার কারণে বন্ধ হয়ে যায় ওই প্রক্রিয়া। নিম্ন আদালতের ওই রায়ে ব্যাটারিচালিত এসব যানবাহনকে ঘোষণা করা হয়েছিল অবৈধ হিসাবে। সর্বশেষ উচ্চ আদালতের রায়ে কেটে গেছে সেই জটিলতা। এখন আর অবৈধ নয় এসব যানবাহন।
বরিশাল নগরে এক সময় ২ হাজার ৬১০টি ব্যাটারিচালিত তিন চাকার বাহনকে (ব্যাটারিচালিত রিকশা নয়) লাইসেন্স দিয়েছিল বরিশাল সিটি করপোরেশন। পরে অবশ্য সরকারি নির্দেশনার কারণে বন্ধ রাখা হয় এর নবায়ন। সাদিক আব্দুল্লাহ মেয়র হওয়ার পর বছর দুই চালু ছিল এই প্রক্রিয়া। নিম্ন আদালতে চলাচল অবৈধ ঘোষিত হওয়ার পর একদিকে যেমন বিষয়টি নিয়ে উচ্চ আদালতে আপিল আর আইনি লড়াই চালাতে থাকেন থ্রি-হুইলারের পক্ষে থাকা নেতারা, তেমনি মাঠপর্যায়ে চলতে থাকে এসব থ্রি হুইলারকে বৈধতা দেওয়ার আন্দোলন। বরিশালে মূলত এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দেয় বাসদ।

নিয়মিত ভিত্তিতে তারা চালাতে থাকে মিছিল, সমাবেশ, মানববন্ধন আর বিক্ষোভ। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নেতৃত্বেও হয় কয়েকটি সমাবেশ। এরইমধ্যে সরকার সমর্থিত শ্রমিক লীগের সহযোগিতায় গঠিত হয় তিন চাকার চালকদের পৃথক আরেকটি সংগঠন। তারাও নানাভাবে দাবি জানাতে থাকে থ্রি হুইলারকে বৈধতা দেওয়ার। একম একটি অবস্থায় উচ্চ আদালতের রায়ে যখন বৈধতার ঘোষণা আসে তখনই জমে উঠে খেলা। পূর্বের নিয়মে সিটি করপোরেশনই এসব থ্রি হুইলারের লাইসেন্স দেবে এমনটা চাউর হয়ে নগরে। ফলে বেড়ে যায় শ্রমিক লীগ নেতৃত্বাধীন থ্রি হুইলার চালকদের সংগঠনের গুরুত্ব।

এদিকে বাসদ দাবি তোলে বিআরটিএর মাধ্যমে এসব থ্রি হুইলারকে লাইসেন্স দেওয়ার। অনেকের মতে সিটি করপোরেশন লাইসেন্স দিলে থ্রি-হুইলার চালকদের পুরো সমর্থনটা চলে যাবে মেয়র সাদিকের দিকে। এমন ভাবনা থেকেই তাদের এই দাবির উত্থান। কেননা বরিশালে বাসদের মূল শক্তি ডা. মনিষা চক্রবর্তীর ব্যক্তিগত ইমেজ। আর সিটি নির্বাচন প্রশ্নে মনিষার মূল প্রতিদ্বন্দ্বী মেয়র সাদিক।

এমন পরিস্থিতিতে সোমবার বিকালে নগরীর বঙ্গবন্ধু উদ্যানে সমাবেশের ডাক দেয় সরকারি দল সমর্থিত থ্রি হুইলার চালকদের সংগঠন। একই দিন সকালে বাসদও থ্রি হুইলার চালকদের সমাবেশ ডাকে অশ্বীনি কুমার হল চত্বরে। সকালের ওই সমাবেশে যোগ দেন হাজারখানেক থ্রি হুইলার চালক। সমাবেশে সরকার সমর্থিত থ্রি হুইলার চালকদের সংগঠনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ আনেন ডা. মনিষাসহ বাসদ নেতারা। এরপর দাবি সংবলিত স্মারকলিপি দেওয়া হয় নগর ভবনের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা এবং জেলা প্রশাসকের কাছে।

স্মারকলিপিতে বিআরটিএ কর্তৃক থ্রি হুইলারের লাইসেন্স
দেওয়ার দাবি জানানোর পাশাপাশি আবারও অভিযোগ আনা হয় চাঁদাবাজির। এসব অভিযোগের জবাব আসে বিকালে বঙ্গবন্ধু উদ্যানে শ্রমিক লীগ সমর্থিত থ্রি হুইলার চালকদের সমাবেশ থেকে। মেয়র সাদিকের উপস্থিতিতে এ সমাবেশে যোগ দেন কয়েক হাজার তিন চাকার চালক। নিজেদের হলুদ অটোগুলো সঙ্গে নিয়ে সমাবেশে যোগ দেন তারা। এখানে বক্তৃতায় চাঁদাবাজির পালটা অভিযোগ করেন মেয়র সাদিক।

বৈধতা পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে আন্দোলনের নামে চাঁদা নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। একইসঙ্গে ঘোষণা দেন আগামী ৩ মাসের মধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করে বরিশাল নগরে চলাচলকারী সব থ্রি হুইলারকে বৈধতা দেওয়ার। নগরবাসীর মতে, ১০ হাজার চালক মানে তাদের পরিবার মিলিয়ে কম করে হলেও ৩০ থেকে ৪০ হাজার মানুষ। বিপুলসংখ্যক এই মানুষের সমর্থন পেতে বা ধরে রাখতে নেতাদের এমন লড়াইয়ে কে জেতে আর কে হারে সেটাই এখন দেখার অপেক্ষা।
সূত্র ঃ যুগান্তর

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন
     
Website Design and Developed By Engineer BD Network