আপডেট: আগস্ট ৫, ২০২২
লাইব্রেরি হলো জ্ঞানের আধার। কিন্তু সম্প্রতি এই জ্ঞানের সাগরে ঢেউয়ের দেখা মিলছে না। তথ্য প্রযুক্তির অগ্রগতির কারণে স্কুলের লাইব্রেরিতে পা পড়ছে না শিক্ষার্থীদের। নতুন প্রজন্মের এই শিক্ষার্থীদের অনেকের জানাই নেই স্কুলে গ্রন্থাগার বা লাইব্রেরি রয়েছে। অনেকেও চেনেনও না লাইব্রেরি। লাইব্রেরি বলতে চেনেন শিক্ষক মিলনায়তন কক্ষকে! যেখানে যাওয়া তাদের সাধ্য নেই।
এই সুযোগে কোন বিদ্যালয়ের লাইব্রেরি রূপ নিয়েছে বসতঘর ও বইয়ের গোডাউনে। এশিয়া মহাদেশের মধ্যে অন্যতম প্রাচীন সরকারি বরিশাল জিলা স্কুলে প্রভাতি ও দিবা শাখায় ২৩শ’ শিক্ষার্থী রয়েছেন। এই বিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে ২৩ হাজার বই রয়েছে। সরকারি অনুদানে প্রতিবছর জুন-জুলাই মাসে বই কেনা হলেও কক্ষ সংকটের কারণে বইগুলো জ্ঞান আরোহণে তা কোনো ভূমিকা রাখছে না। এছাড়া লাইব্রেরি পরিচালনায় দুই শাখায় কমপক্ষে চারজন লাইব্রেরিয়ান প্রয়োজন হলেও কখনোই এ পদে কেউ ছিল না।
লাইব্রেরি রক্ষণাবেক্ষণে নেই কোনো অফিস সহায়কও। এ সুযোগে লাইব্রেরি কক্ষে খাট বিছিয়ে রাত্রীযাপন করা হচ্ছে। লাইব্রেরির কার্যক্রম চলমান না থাকায় সেখানে গিয়ে বই পড়াতো দূরের কথা, অধিকাংশ শিক্ষার্থী জানেই না যে স্কুলে পাঠাগার আছে। ফলে লাইব্রেরির জন্য বরাদ্দ ২৩ হাজার বইয়ে ধুলো জমেছে। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়েছে হাজার খানেক বই। জিলা স্কুলের অস্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী অংকন জানান, এই স্কুলে ক্লাস থ্রিতে ভর্তি হলেও কোনোদিন লাইব্রেরিতে যাননি। এমনকি কোথায় লাইব্রেরি কক্ষ তাও তার অজানা। তিনি চেনেন না।
জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম সম্প্রতি যোগদান করেছেন জানিয়ে বলেন, লাইব্রেরি রুমে খাট রাখা হয়নি। কক্ষ সংকটের কারণে ঘুমানোর রুমে বইয়ের আলমিরা রাখা হয়েছে। ১১ কক্ষে মেরামত কাজ চলমান থাকায় তা ব্যবহার করা যাচ্ছে না। মেরামত শেষে লাইব্রেরি গুছিয়ে নেওয়া হবে। বরিশালের আরেকটি প্রাচীনতম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ব্রজমোহন বিদ্যালয় (বিএম স্কুল)। এই স্কুলের লাইব্রেরিরও অবস্থাও বেহাল। সর্বশেষ যিনি এই স্কুলের লাইব্রেরিয়ান তিনি যোগদান করেন ২০১৫ সালে। কিন্তু তিনিও কখনো দেখেননি লাইব্রেরিতে এসে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করতে।
এই স্কুলের লাইব্রেরিতে প্রাচীন যে বইগুলো রয়েছিল তা ধ্বংস হয়ে গেছে। উইপোকা কেটে দিয়েছে এই জ্ঞানের ভাণ্ডারকে। এখন টিকে আছে মাত্র ৮/৯শ বই। আর এই লাইব্রেরি ঠাসা উপজেলা শিক্ষা অফিসের অতিরিক্ত বইয়ে। গত ডিসেম্বরে যে বইগুলো বিভিন্ন স্কুলের বিতরণের জন্য এসেছিল, তার অতিরিক্ত বইগুলো এখানেই ফেলে রাখা হয়েছে। আর এই ফেলে রাখা বইয়ের কারণে স্কুল লাইব্রেরি রূপ নিয়েছে গোডাউনে।
এসব বইতে ঢেকে গেছে লাইবেরির ৭/৮টি আলমিরা। চাইলেই এখন কোন বই আলমিরা থেকে বের করা যাচ্ছে না। এই বিদ্যাপিঠের শিক্ষার্থী সাকিবের কাছে জানতে চাওয়া হয় তাদের স্কুলের পাঠাগারটি কোথায়? লাইব্রেরি বলতে শিক্ষক মিলনায়তনকেই চেনে সে। সাকিবের মতো অনেক ছাত্রছাত্রীই জানে না তাদের স্কুলে লাইব্রেরি রয়েছে। একজন লাইব্রেরিয়ান রয়েছে। তবে সেই লাইব্রেরিয়ান এখন শিক্ষকের মর্যাদা পেয়েছেন। যার কারণে তিনি লাইব্রেরি ছেড়ে ক্লাসে পাঠদানে বেশি ব্যস্ত।
সহকারী শিক্ষক কাম গ্রন্থাগারিক, তথ্য ও বিজ্ঞান বিষয়ের দায়িত্বে থাকা টুটুল মজুমদার জানান, ২০১৫ সালে এই স্কুলে যোগদান করেছেন। কিন্তু কখনোই শিক্ষার্থীরা লাইব্রেরিতে পড়তে আসেনি। এমনকি বইও নেয়নি।