২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার

শিরোনাম
তেলবাহী লড়ি উল্টে গিয়ে আগুন লেগে এক জনের মৃত্যু। ভূমি বিষয়ক তথ্যাদি স্কুলের পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ গ্রহণ করো হয়েছে-ভূমিমন্ত্রী মির্জা ফকরুলরা তারেক জিয়ার নির্দেশে জনগনের সাথে প্রতারনা ও তামশা করছে-আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিগ বার্ড ইন কেইজ: ২৫ শে মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধুর গ্রেফতার  ঢাবি ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে ১ কোটি টাকার বৃত্তি ফান্ড গঠিত হাইকোর্টের রায়ে ডিন পদে নিয়োগ পেলেন যবিপ্রবির ড. শিরিন জয় সেট সেন্টার’ থেকে মিলবে প্রশিক্ষণ, বাড়বে কর্মসংস্থান: পীরগঞ্জে স্পীকার বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস আগামীকাল টুঙ্গিপাড়ায় যাচ্ছেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী, সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন বিশিষ্ট রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী সাদি মোহম্মদ আর নেই

একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমাদের শিক্ষা

আপডেট: অক্টোবর ২, ২০২২

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন

   মো: মনিরুজ্জামান

প্রতিটি মানুষের জীবনেই একটি প্রত্যাশা বা স্বপ্ন থাকে। মানুষ তার জীবনকে আনন্দময়, নান্দনিক ও মানবিক করে গড়ে তুলতে চায়। বেঁচে থাকার জন্য চায় একটি নিরাপদ ও টেকসই জীবিকার উপায়। সে এমন একটি পেশায় নিজেকে নিয়োজিত করতে চায় যা তাকে দিবে ভবিষ্যত নিরাপত্তা ও সামাজিক মর্যাদা। নিজেকে সে এমন অবস্থানে নিয়ে যেতে চায় যাতে করে সে পরিবার, সমাজ, দেশ তথা বিশ্বে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও মানবিক উন্নয়নে অবদান রাখতে পারে।
মানুষ একটি সামাজিক জীব এবং জন্মের পর থেকে তাকে একটু একটু করে শিক্ষার মাধ্যমে একজন পরিপূর্ণ মানুষ হয়ে উঠতে হয়। তাই প্রানীদের মধ্যে শুধুমাত্র মানুষকে প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক উপায়ে শিক্ষালাভ করতে হয়। শিক্ষার মূল লক্ষ্য হল প্রত্যেকটি মানুষের মধ্যে এমন কিছু দক্ষতা ও মানবিক গুনাবলীর সংমিশ্রন ঘটানো যাতে করে সেই ব্যক্তি তার দৃষ্টিভঙ্গি ইতিবাচক পরির্বতন ঘটিয়ে নিজেকে অর্থনৈতিক ও সামাজিক ভাবে একজন মানবিক মানুষ হিসাবে প্রতিষ্ঠা করতে পারে।
বর্তমান পৃথিবী দ্রুত গতিতে পরিবর্তীত হচ্ছে। পরির্বতনশীল এ বিশ্বে মানুষের জীবন ও জীবিকার ধরণ ও প্রতিনিয়ত বদলে যাচ্ছে। মানুষের জীবন ও জীবিকার আমূল পরির্বতন এবং উন্নতির শুরুটা হয়েছিল ১ম শিল্প বিপ্লবের ভেতর দিয়ে ১৭৮৪ সালে বাষ্পীয় ইঞ্জিন আবিস্কারের মাধ্যমে। এর ফলে যোগাযোগ ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব পরির্বতন সাধিত হয়েছিল। এর ও প্রায় ৮৬ বছর পর বিদ্যুৎ আবিস্কারের মধ্য দিয়ে ১৮৭০ ২য় শিল্প বিপ্লব ঘটে। বিদ্যুতের বহুবিদ ব্যবহার করে শিল্প কারখানা ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে ব্যাপক উৎকর্ষ সাধিত হয়ে জীবন ও অর্থনীতির ব্যাপক পরিবর্তন সূচিত হয়। মানুষের জীবনে নতুন নতুন কর্মক্ষেত্রের সুযোগ তৈরী হয় এবং প্রয়োজন হয় এ পরিবর্তনের সাথে সংগতি রেখে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করার।

পরিবর্তন একটি চলমান প্রক্রিয়া এবং মানুষ সব সময়ই চায় তার বর্তমান অবস্থার উন্নয়ন করতে। ২য় শিল্প বিপ্লবের প্রায় ১০৯ বছর পর হয় ৩য় শিল্প বিপ্লব। ইন্টারনেট ও কম্পিউটারের আবিস্কারের প্রভাবে যোগাযোগ, তথ্য – প্রযুক্তি, অর্থনীতি ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে ব্যাপক বৈচিত্র্য সাধিত হয়ে মানুষের জীবন ও পেশায় আমূল পরিবর্তনের সূচনা করে।
প্রযুক্তির উন্নয়নের মাত্রা পৃথিবীর ইতিহাসের যে কোন সময়ের চেয়ে অভাবনীয় গতিতে এগিয়ে চলছে। ৪র্থ শিল্প বিপ্লব পর্যায়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিকাশ, নজিরবিহীন পরিবর্তন ঘটিয়ে চলছে মাুনষের জীবিকা ও জীবনযাপন প্রণালীতে। এর ফলে বর্তমান কর্মক্ষেত্র ও পেশার অনেক কিছুই ভবিষ্যতে থাকবে না। ২০৩০ সালের মধ্যে প্রচলিত কর্মজগতের ৩ ভাগের ২ ভাগ বিলুপ্ত হয়ে যাবে। আমাদের দেশে ৬৫% শিক্ষার্থী যারা এখন প্রাথমিক শিক্ষা স্তরে রয়েছে তারা তাদের শিক্ষা জীবন শেষ করে যখন কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করবে তখন তাদের যে ধরনের পেশা হবে তা এখনও অজানা। হয়ত সেই সময় গাড়ী চালনার জন্য কোন চালক প্রয়োজন হবে না। ট্রাফিক পুলিশের প্রয়োজন হবে না। ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রয়োজন হবে না ব্যাংকে যাওয়ার বা বাজার করার জন্য প্রয়োজন হবে না কাগজের নোট সঙ্গে রাখার।
ভবিষ্যতে এমন এমন অনেক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে যার অনেক কিছুই বর্তমান সময়ে অবস্থান করে ধারণা করাও অসম্ভব। বিশ্বায়নের ফলে দেশে-দেশে, সমাজে সমাজে ভৌগলিক দূরত্ব কমে যাচ্ছে এবং কর্মক্ষেত্রের সুযোগ ও হচ্ছে অবারিত।
৪র্থ শিল্প বিপ্লবের এ যুগে বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তির অকল্পনীয় পরিবর্তন সাধিত হবে। পরিবর্তীত এ বিশ্ব পরিস্থিতির সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হলে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন প্রয়োজন। তিনশত বছরের পুরাতন শিক্ষা ব্যবস্থা দিয়ে ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি রোবোটিকস, কৃত্রিম বৃদ্ধিমত্তার যুগে টিকে থাকা যাবে না।
এই উপলব্ধি থেকে বাংলাদেশ সরকার ২০১৭-২০১৯ ব্যাপী বিভিন্ন গবেষণা পর্যালোচনাকরে নতুন বিশ্বপরিস্থিতিতে টিকে থাকার মতো যোগ্য করে নতুন প্রজন্মকে গড়ে তুলতে প্রাক -প্রাথমিক থেকে দ্বাদশ শ্রেনি পর্যন্ত অবিচ্ছিন্ন শিক্ষাক্রম উন্নয়নের উদ্যোগ নিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২১ সালে সংশোধিত পাঠ্যক্রম অনুমোদন দিয়েছেন। পরবর্তিতে ৩০ মে ২০২২ প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রনালয় ও শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের জাতীয় কারিকুলাম সমন্বয় কমিটির যৌথ সভার কারিকুলামের রূপ রেখা অনুমোদিত হয়।
নি:সন্দেহে এটি একটি যুগপোযোগি ও বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সক্ষম দক্ষ জনগোষ্ঠী তৈরীতে সহায়ক শিক্ষাক্রম। ২০২৩ সাল থেকে এটি বাস্তবায়ন শুরু হবে এবং ২০২৫ সাল থেকে পুরোদমে বাস্তবায়িত হবে।
এটি বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন বৈশ্বিক নাগরিক তৈরীতে সহায়ক পাঠ্যসূচী ও পাঠ্যপুস্তক উন্নয়ন, দক্ষ শিক্ষকমন্ডলী তৈরী এবং সহায়ক অন্যান্য উপকরণ ও অবকাঠামো উন্নয়ন। এ বিপুল কর্মযজ্ঞের সার্বিক বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন সংশ্লিষ্ট সকলের স্ব:তস্ফূর্ত অংশগ্রহন। সরকারের একার পক্ষে কখনই সম্ভব নয় এটির সফল বাস্তবায়ন।
এ জন্য শিক্ষকদের আধুনিক প্রশিক্ষণ, শিক্ষাক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বাজেট বরাদ্ধ এবং এর যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও মনিটরিং একান্ত প্রয়োজন। সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার সমন্বিত অংশগ্রহন ও মনিটরিং এ উদ্যোগকে সার্থক করে তুলতে পারে। এর পাশাপাশি অভিভাবক ও কমিউনিটিকে শিক্ষা ব্যবস্থায় সংযুক্ত করতে হবে নিবিড়ভাবে।
বর্তমানে আমাদের দেশের প্রায় ২৪ শতাংশ লোক স্বাক্ষর জ্ঞানহীন, এই বিপুল সংখ্যাক জনগোষ্ঠীকে শিক্ষার বাহিরে রেখে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন ও সম্ভব নয়। একটি শিক্ষিক মা যেমন একটি শিক্ষিত পরিবার তৈরী করতে পারে, তেমনি এই ২৪% জনগোষ্ঠিকে অনানুষ্ঠানিক বা উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার আওতায় এনে শিক্ষিত করে তোলা এবং পরিবর্তিত শিক্ষা ব্যবস্থায় তাদের সম্পৃক্ত করা এখন সময়ের দাবী। সরকারের উচিত বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাকে সাথে নিয়ে এ বিপুল জনগোষ্ঠিকে স্বাক্ষর করে গড়ে তোলা ও কারিগরি শিক্ষার আওতায় নিয়ে আসা।শিক্ষাক্ষেত্রে অভিভাবকদের অংশগ্রহন সফল শিক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়নের অন্যতম নিয়ামক। অনেক সুন্দর আয়োজন ও অভিভাবকদের অনিহার কারণে ভেস্তে যায়। কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে দেশে ও বিদেশে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ থাকা সত্ত্বেয়ও আমাদের অভিভাবকদের অসচেতনতা, অনাগ্রহের ফলে দেশে লক্ষ লক্ষ শিক্ষিত বেকার তৈরী হচ্ছে। তাই এ শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মনোভাব পরিবর্তনের জন্য ব্যাপক প্রচারণা প্রয়োজন।
আমরা চাই আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা এমনভাবে পরিচালিত হোক যেখান থেকে শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষা শেষ করে পছন্দমত পেশায় অংশগ্রহন সুযোগ পাক। অর্থ্যাৎ কর্মক্ষেত্র বা পেশা ভিত্তিক শিক্ষাক্রম চালু করা যাতে করে শিক্ষা ব্যবস্থা দক্ষতা ভিত্তিক যোগ্য পেশাদার কর্মীবাহিনী তৈরী করতে পারে। শিক্ষার্থীরা শুধু অর্থনৈতিকভাবেই অবদান রাখবেনা বরং তারা বৈষম্যহীন মানবিক ও মূল্যবোধ সম্পন্ন নাগরিক হিসাবে গড়ে উঠবে। ২ স্তরের শিক্ষা ব্যাবস্থা গড়ে তুলতে হবে। প্রাথমিক স্তর ও উচ্চ শিক্ষা স্তর। প্রাথমিক স্তর হবে মূল্যবোধ নৈতিকতা ও কর্মমূখী শিক্ষা স্তর এবং উচ্চ শিক্ষা হবে গবেষণা ও উন্নয়ন ভিত্তিক।
সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতায় একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সক্ষম একটি দেশ প্রেমিক, নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন এবং আমাদের সংস্কৃৃতিমনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নির্ভর দক্ষ জনগোষ্ঠী তৈরী করা হোক আমাদের শিক্ষার মূল লক্ষ্য।

মো: মনিরুজ্জামান
যুগ্ম পরিচালক,
শিক্ষা ও টিভিইটি
ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন।
০১৭১৪৯৪৮৫৬৭
monir2077@gmail. com

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন
     
Website Design and Developed By Engineer BD Network