২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার

শিরোনাম
তেলবাহী লড়ি উল্টে গিয়ে আগুন লেগে এক জনের মৃত্যু। ভূমি বিষয়ক তথ্যাদি স্কুলের পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ গ্রহণ করো হয়েছে-ভূমিমন্ত্রী মির্জা ফকরুলরা তারেক জিয়ার নির্দেশে জনগনের সাথে প্রতারনা ও তামশা করছে-আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিগ বার্ড ইন কেইজ: ২৫ শে মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধুর গ্রেফতার  ঢাবি ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে ১ কোটি টাকার বৃত্তি ফান্ড গঠিত হাইকোর্টের রায়ে ডিন পদে নিয়োগ পেলেন যবিপ্রবির ড. শিরিন জয় সেট সেন্টার’ থেকে মিলবে প্রশিক্ষণ, বাড়বে কর্মসংস্থান: পীরগঞ্জে স্পীকার বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস আগামীকাল টুঙ্গিপাড়ায় যাচ্ছেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী, সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন বিশিষ্ট রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী সাদি মোহম্মদ আর নেই

ঢাবি ভর্তি পরীক্ষায় সি-ইউনিটের প্রথম স্থান অধিকার করেছে গোপালগঞ্জের জিলহাজ শেখ

আপডেট: জুন ৯, ২০২৩

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন

স্টাফ রিপোর্টার গোপালগঞ্জ : মনোযোগ দিয়ে লেখাপড়া করলে মফস্বলে থেকেও প্রথম হয়ে বড় বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়া যায় তার উজ্বল দৃস্টান্ত মো: জিলহাজ শেখ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি পরীক্ষায় সি-ইউনিটের মানবিক বিভাগে প্রথম স্থান অধিকার করেছে গোপালগঞ্জের শিক্ষার্থী জিলহাজ। ভর্তি পরীক্ষার নৈর্ব্যক্তিক ও লিখিত ১০০ নম্বরের মধ্যে সে পেয়েছে ৭৯.২৫ নম্বর। তার এই কৃতিত্বে পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সহপাঠিদের মধ্যে বইছে আনন্দের বন্যা। আগামীতে অ্যাডমিন ক্যাডার হয়ে দেশের জন্য কাজ করতে চান জিলহাজ।

আজ শুক্রবার দুপুরে গোপালগঞ্জ শহরতলীর পুরাতন মানিকদাহের বাড়ীতে গিয়ে দেখা ও জানাগেছে, মানিকদাহ গ্রামের ব্যবসায়ী শহর আলী শেখ ও গৃহীনি শিরীন আক্তারের ছেলে মো: জিলহাজ শেখ। ৩ ভাই ও ১ বোনের মধ্যে জিলহাজ ৩য় ও ভাইদের মধ্যে দ্বিতীয়। ছোটবেলা থেকেই লেখাপড়ায় তার ছিল গভীর আগ্রহ।

পুরাতন মানিকদাহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাইমারী পড়া শেষ করে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হয় জেলা শহরের ঐতিহ্যবাহী এস এম মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে। সেখান থেকে ৪.৮৩ পয়েন্ট নিয়ে এসএসসি পাশ করে। পরে উচ্চ শিক্ষার জন্য শহরের হাজী লাল মিয়া সিটি কলেজে ভর্তি হন জিলহাজ। এ কলেজের মানবিক শাখা থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ পেয়ে কৃর্তিত্বের সাথে উত্তীর্ন্ন হন।

এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি জন্য গোপালগঞ্জ শহরের অপটিমাম বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং সেন্টারে ভর্তি হন। সেখানের বিভিন্ন গাইড লাইন নিয়ে চলে প্রস্তুতি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সি ইউনিটের মানবিক বিভাগের ভর্তি পরীক্ষার অংশগ্রহণ করে জিলহাজ শেখ। সেখানে ৭৯.২৫ নম্বর পেয়ে মেধা তালিকায় প্রথম স্থান অধিকার করে। এছাড়া এসএসসি, এইসএসি ও খর্তি পরীক্ষার নাম্বার মিলে অর্জন করেন ৯৮.৯১ পয়েন্ট। যা দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ।

জিলহাজের এ কৃতিত্বে পুরো পরিবারে চলছে আনন্দের বন্যা। নিজের ইচ্ছামত বিষয় নিয়ে পড়শোনা করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার পাশিপাশি মানুষের মত মানুষ হবে দেশের জন্য কাজ করবে প্রত্যাশা পরিবারের সদস্যদের। তার এই সাফল্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান লাল মিয়া সিটি কলেজ, অপটিমাম কোচিং সেন্টার, সহপাঠি ও প্রতিবেশীরা আনন্দিত। প্রতিটি ক্লাসে তার উপস্থিতি, অধ্যবসায় ছিল চোখে পড়ার মত। প্রথম স্থান পাওয়ায় অপটিমাম কোচিং সেন্টারের পক্ষ থেকে দেয়া হয় সংবর্ধনা।

আল্লাহতালা, মা-বাবা, ভাই-বোন ও শিক্ষকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে প্রথম স্থান পাওয়া শিক্ষার্থী মো: জিলহাজ শেখ বলেন, পরিবারের সবার আমার প্রতি আস্থা ছিল, যা আমাকে শক্তি হিসাবে কাজে দিয়েছে। এই শক্তিই কাজে লাগিয়ে আমি ভাল ফলাফল করেছি। কলেজে উঠেই আমার স্বপ্ন ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করবো। সেজন্য আমি কলেজ থেকে প্রস্তুতি নেয়া শুরু করি। তবে এসএসসিতে ৪.৮৩ পেয়ে আপসেট ছিলাম। এরপরই ভালভাবে পড়াশোনা করি। সেখান থেকে এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পাই। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রস্তুতির জন্য গোপালগঞ্জের স্থানীয় কোচিং সেন্টার অপটিমাম বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং সেন্টারে ভর্তি হই। সেখান থেকে আমাকে সকল ধরেনর সহযোগীতা করে। তবে আমি কখনো ঘন্টা হিসাবে পড়াশোনা করিনি। রুটিন হিসাবে প্রতিদিনের পড়াশোনা শেষ করেছি। আমার ইচ্ছা লেখাপড়া শেষে অ্যাডমিন ক্যাডার হবো। সেখান থেকে দেশের জন্য কাজ করতে চাই।

জুনিয়রদের ঢাকা না যাওয়ার আহবান জানিয়ে মো: জিলহাজ শেখ আরো বলেন, যারা মেধাবী তাদের মধ্যে একটি ভূল ধারনা রয়েছে ঢাকায় গিয়ে কোচিং করতে হবে এটা ঠিক নয়। মফস্বল শহর থেকে ঢাকায় গিয়ে সেখানকার পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিতে অন্তত ৪ মাস সময় লাগে। এতে প্রস্তুতি নেয়া যায় না। কোচিং করতে ঢাকায় গিয়ে সময় নষ্ট না করে স্থানীয় কোচিং সেন্টারের মাধ্যমে প্রস্তুতি নিলে ভাল ফলাফল করা সম্ভব।

সহপাঠি আরাফাত রহমান তমাল বলেন, মো: জিলহাজ শেখ আমার সহপাঠি। একই সাথে ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছি। ও প্রথম হয়েছে। এতে আমার প্রচন্ড ভাল লাগছে। আশাকরি ও ভাল অবস্থানে গিয়ে দেশ ও দশের জন্য কাজ করবে।

অপটিমাম বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং সেন্টারে শিক্ষক আরিফুল ইসলাম জাইহিন ও আবির হোসেন বলেন, মো: জিলহাজ শেখ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য আমাদের অপটিমাম বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং সেন্টারে ভর্তি হন। ওর পড়াশোনা, পরীক্ষার ফলাফল দেখে আমরা ধরে নিয়েছিলম ও ভাল কিছু করবে। ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হয়ে সে আমাদের ও আমাদের প্রতিষ্ঠানের সুনাম বয়ে এনেছে।

অপটিমাম বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং সেন্টারে পরিচালক মো: সাব্বির রহমান বলেন, মো: জিলহাজ শেখ প্রথম হয়ে আমাদের গর্বিত করেছে। আমরা আশায় ছিলাম ও ভাল রেজাল্ট করে। সে আমাদের আস্থার প্রতিদান দিয়েছে। এজন্য আমরা তাকে সংবর্ধনা দিয়েছি। আশা করি মফস্বলের শিক্ষার্থীরা ঢাকায় না ছুটে স্থায়ীয় কোচিং সেন্টারের উপর ভরসা রাখবে।

মো: জিলহাজ শেখের বড় ভাই মিনহাজ শেখ বলেন, আমি আমার ছোট ভেইকে সব সময় পড়ালেখায় সাহায্য করেছি। কিভাবে পড়তে হবে, কি কি বিষয় দেখতে হবে। তার এই রেজাল্টে আমরা খুবই খুশি। আশা করি সেখান থেকে ভাল করে পড়ালেখা শেষ করে দেশের জন্য কাজ করবে।

মো: জিলহাজ শেখের মা শিরীন আক্তার বলেন, ছেলের রেজান্টে আমি প্রচন্ড খুশি। পড়ালেখার জন্য ওকে কখনে বকা দিতে হয়নি। পড়ালেখা সে নিজের ইচ্ছা মত করেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে সে তার পড়ালেখা আগের মতই চালিয়ে যাবে। পড়াশোনা শেষ করে মানুষের মত মানুষ হয়ে ফিরে আসবে।

মো: জিলহাজ শেখের বাবা শহর আলী শেখ বলেন, ছোট বেলা থেকে পড়ালেখার প্রতি জিলহাজের আগ্রহ ছিল। কখনো ধমক দিয়ে ওকে পড়তে বসাতে হয়নি। আমার ছেলের রেজান্টে আমি খুব খুশি। এখন উচ্চ শিক্ষা শেষ করে পছন্দ মত পেশা বেছে নিয়ে সবার জন্য কাজ করবে এমনটাই আশা করছি।

হাজী লাল মিয়া সিটি কলেজের অধ্যক্ষ পলাশ কুমার বিশ্বাস বলেন, নিয়ম ও নৈতিকতার মাধ্যমে লেখাপড়া করলে সাফল্য পাওয়া সম্ভব তার উজ্জ্বল দৃস্টান্ত মো: জিলহাজ শেখ। কলেজর পড়ার সময় ওর মেধা, ইচ্ছা শক্তি ছিল প্রবল। আমরা শিক্ষকরা ওকে সব সময় গাইড করেছি। পরীক্ষায় সে ভাল ফলাফল করেছে। ওর এই ফলাফলে আমরা শিক্ষকরা খুবই আনন্দিত। #

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন
     
Website Design and Developed By Engineer BD Network