শেখ ফামিদা নাজনীন
অথচ আমরা এখনো ভালো আছি,
নিশ্চিন্তে সম্পন্ন করছি নিত্য সংসারধর্ম।
দেখা হলে পরস্পরকে সম্বোধন করছি হাসিমুখে,
বিশ্বকাপ ক্রিকেটের গত রাতের ম্যাচটা কেমন ছিল,
তা নিয়ে দুদন্ড আলাপ করতে ভুল করছি না।
পরস্পরের প্রায়ই সাদা হয়ে যাওয়া চুল নিয়ে,
ঠাট্টা তামাশা চলছে প্রতিনিয়ত।
গতকাল দুপুরের খাবারে,
জলপাই ডাল দিয়ে দুমুঠো ভাত বেশি খাওয়া হয়েছিল বলে,
যে বদহজম হয়েছে,
সেই অস্বস্তিটুকু প্রকাশ করতেও বাদ রাখছি না।
অথচ কুদসের মাটিতে হাজার হাজার জলপাই গাছ,
ভেঙে পড়ছে, পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে।
আর আমরা জলপাই আচারের রেসিপি জানতে,
চোখ রাখছি রান্নার চ্যানেলে।
আমাদের ঘরে ফুলের মত ফুটফুটে শিশু দুটিকে,
বার্ষিক পরীক্ষার পর কোথায় বেড়াতে নিয়ে যাবো,
তার লিস্টি করছি।
তাদের স্কুলের ইউনিফর্মে একটু ময়লা লাগলেই,
সাবান পানিতে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিচ্ছি তৎক্ষণাৎ।
অথচ বিধ্বস্ত গাজার লক্ষ লক্ষ ফুটন্ত গোলাপ,
ধ্বসে যাওয়া বাড়ির নিচে চাপা পড়ে,
শুষ্ক পাপড়ির মত গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে,
ধুলোবালির সাথে মিশে যাচ্ছে।
আমরা এখনো ভালো আছি,
আমাদের রমণীরা সীমালঙ্ঘনের নেশায়,
পোশাকের স্বাধীনতা দাবি করে,
অর্ধনগ্ন গাত্রে রাজপথে তামাশা সৃষ্টি করে চলেছে,
আর সেই সংবাদ প্রচার করতে,
রাস্তার মোড়ে কতিপয় সাংবাদিকের উপচে পড়া ভিড়।
আমাদের বুদ্ধিদীপ্ত নারীগণ,
ঠিক কতটা উঁচুতে উঠলে পুরুষতান্ত্রিক সমাজকে শাসন করা যায়,
সেই মাত্রা নির্ধারণ করতে হিমশিম খেয়ে চলেছে অনবরত।
অথচ সমগ্র ফিলিস্তিন জুড়ে নারী কন্ঠের আর্তচিৎকার!
প্রিয়জন হারানোর যন্ত্রণা নিয়ে,
প্রতিনিয়ত তারা ধৈর্যের পরীক্ষা দিয়ে চলেছে,
দেখিয়ে চলেছে সর্বস্ব হারানোর পরও,
স্রষ্টার প্রতি নির্ভরশীলতার চরম পরাকাষ্ঠা।
আমরা যখন নতুন পোশাকের খোঁজে
ঘুরে বেড়াচ্ছি এক শোরুম থেকে অন্য শোরুমে,
তারা প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে ছুটে বেড়াচ্ছে,
গাজার এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে।
তারপরও আমরা ভালো আছি এবং
সুখী-সংসারী মানুষের চকচকে আদল নিয়ে,
স্রষ্টার সামনে দাঁড়াবার দুঃসাহস পুষে রাখছি বুকের ভেতর।