স্টাফ রিপোর্টার, গোপালগঞ্জ : গোপালগঞ্জে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দিপনার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে শারদীয় দূর্গপূঁজা। জেলার মন্দিরগুলোতে দেবীর কল্পারম্ভ, বিহিত পূঁজা আর অঞ্জলী প্রদানের মধ্যে দিয়ে আসৃষ্টি-স্থিতি বিনাশীনি দেবী দুর্গার মহা অষ্ঠমী পূঁজা অনুষ্ঠিত হয়। মন্দিরগুলো দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখোর হয়ে উঠেছে। পরিবার-পরিজন আর বন্ধুদের নিয়ে জেলার বিভিন্ন মন্দির ঘুরে ঘুরে দেখছে প্রতিমা। এ পূঁজাকে কেন্দ্র করে নেয়া হয়েছে ব্যপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা। আগামী ২৪ অক্টোবর বিজয়া দশমীর মধ্য দিয়ে শেষ হবে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয়া দূর্গা পূঁজা।
আজ রোববার (২২ অক্টোবর) সকালে সাড়ে ৯টা থেকে জেলার ১ হাজার ৩০২ টি মন্দিরে দেবীর কল্পারম্ভ ও বিহিত পুঁজা মধ্য দিয়ে এক যোগে মহা অষ্টমীর পূঁজা শুরু হয়। মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করে পুরোহিতের চন্ডি পাঠে ধর্মীয় আবহ সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন ফল আর মিষ্টি দিয়ে নৈবেদ্য সাজিয়ে দেবীকে অর্পন করা হয়। এসময় পুরোহিতের চন্ডীপাঠ, উলু ও শংখ ধ্বনি এবং ঢাকের আওয়াজে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে মন্দিরগুলো। পূণ্য লাভ আর পাপ মোচনের আশায় মন্ত্র উচ্চারণ করে দেবীর পায়ে অঞ্জলী দেন ভক্তরা। মহা অষ্টমী আর মহানবমীর মিলনক্ষণে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে সাড়ে ৮টার মধ্যে মন্দিরে মন্দিরে অনুষ্ঠিত হবে সন্ধি পুঁজা। এসময় বিভিন্ন স্থানে কালীপূঁজাসহ নারী জাতিকে সম্মান জানানো হবে। তবে এবছর জেলার কোথায় কুমারী পূঁজা অনুষ্ঠিত হয়নি।
এদিকে, গোপালগঞ্জে এ বছর ১ হাজার ৩০২ টি মন্দিরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে শারদীয় দূর্গাপূঁজা। পুরোহিতের চন্ডিপাঠ, মন্ত্র উচ্চারণ, উলু ও শংখ ধ্বনি এবং ঢাকের বাজনায় মুখোরিত হয়েছে উঠেছে মন্দির প্রঙ্গান। দেবী দূর্গা সাথে লক্ষী, স্বরসতী, গনেশ ও কার্ত্তিতের প্রতিমা দেখতে ভীড় করছেন দর্শনার্থীরা। পরিবার পরিজন আর বন্ধুদের নিয়ে এসে মন্দিরে মন্দিরে ঘুরে ঘুরে প্রতিমা দেখছেন তারা। মা দূর্গার আশির্বাদে দেশ ও জাতির কল্যাণে শান্তি নেমে আসবে বলে মনে করেন, দর্শনারীরা। শুধু বড়রা নয় শিশুদের মাঝে বইছে ব্যপক উসাহ। নতুন পোশাক পড়ে মা-বাবার সাথে বিভিন্ন মন্দিরে গিয়ে দেখছে প্রতিমা।
দূর্গাপূঁজা নির্বঘ্ন করতে বিভিন্ন মন্দির পরিদর্শন করেছে জেলা প্রশাসক কাজী মাহবুবুল আলম, পুলিশ সুপার আলবেলি আফিসাসহ প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা। এ বছর দূর্গাপূঁজায় ভিন্নতা আনতে করা হয়েছে নানা আয়োজন। মন্দিরে ডেকোরেশনসহ সড়কগুলোতে করা হয়েছে আলোকসজ্জ্ব। রয়েছে দর্শনার্থীদের প্রসাদের ব্যবস্থা। পূঁজা শেষ করতে ব্যস্ত রয়েছেন আয়োজকেরা।
দর্শনার্থী অনিমা বিশ্বাস বলেন, স্বামী, মেয়েসহ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে প্রতিমা দেখেতে বের হয়েছি। শহরের বিভিন্ন মন্দিরগুলো ঘুরেছি। সব মন্দিরের ভাল ব্যবস্থা করা হয়েছে। নির্বিঘ্নে আমরা প্রতিমা দেখেছি, খুব ভালাছে।
দর্শনার্থী রিক্তা সরকার বলেন, পরিবারের সবাইকে নিয়ে ঘুরতে বের হয়েছ। বিভিন্ন মন্দিরে গিয়ে প্রতিমা দেখলাম। খুবই ভাল লাগছে। আগামীতেও এমন আয়োজনের মধ্যে দিয়ে পূঁজা অনুষ্ঠিত হবে আশা করি।
দর্শনার্থী বন্যা মন্ডল বলেন, আজ অষ্টমীতে মা দূর্গার পায়ে অঞ্জলী দিয়েছি। রাতে বিভিন্ন মন্দির ঘুরে দেখিছি। মায়ের কাছে চাওয়া মা যেন সবার মঙ্গল করে।
শিশু প্রত্যাশা মন্ডল বলে, নতুন জামা পরে মা-বাবার সাথে প্রতিমা দেখতে বের হয়েছি। প্রতিমা দেখলাম খুব ভাল লাগছে।
দর্শনার্থী সুকুমার বিশ্বাস বলেন, পরিবারের সবাইকে নিয়ে ঘুরতে বের হয়েছি। প্রতিবছর আমার এই কয়েকটি দিনের অপেক্ষায় থাকি। মা যে দেশ ও জাতির উপর মঙ্গল ও আশির্বাদ প্রদান করে।
আয়োজক দিলীপ কুমার সাহা বলেন, এবার নতুন নতুন থিম নিয়ে পূঁজার আয়োজন করেছি যাতে দর্শনার্থীরা প্রতিমা দেখতে এসে আনন্দ করতে পরে। সড়কের বিভিন্ন স্থানে আলোকসজ্জা করা হয়েছে। নিরাপত্তার জন্য মন্দিরে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে।
আয়োজক টিটু বৈদ্য বলেন, মন্দিরসহ সড়কগুলোতে আলোকসজ্জা করা হয়েছে। দর্শনার্থীদের জন্য করা হয়েছে প্রসাদের ব্যবস্থা। আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি নিরাপত্তার জন্য নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক রয়েছে।
গোপালগঞ্জ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারন সম্পাদক দুলাল বিশ্বাস বলেন, গোপালগঞ্জে হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রীষ্টানসহ সকল শ্রেনী পেশার মানুষ সহঅবস্থানে বিরাজ করে। ধর্ম যার যার হলেও আমরা সকলে মিলে উৎসব পালন করে থাকি। মান্দিরগুলোতে ব্যাপক নিরাপত্তা রয়েছে। আশা করি নির্বিঘ্নে শারদীয় দূর্গাপঁজা অনুষ্ঠিত হবে।
গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসক কাজী মাহবুবুল আলম বলেন, এ বছর গোপালগঞ্জ জেলায় ১ হাজার ৩০২ টি মন্দিরে শারদীয় দূর্গাপূঁজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আমরা বিভিন্ন মন্দির পরিদর্শ করছি। দূর্গাপূঁজা নির্বিঘ্নে শেষ করতে মন্দিরগুলোতো নিছিন্দ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এছাড়া প্রসাদ বিতরনের জন্য মন্দিরগুলোতে চাউল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। আশা করি আনন্দঘন পরিবেশের মধ্যে দিয়ে এ পূঁজা শেষ হবে। #