• ১৭ই এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ৪ঠা বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ


বিএনপি যতবার নির্বাচন বানচাল করতে চেয়েছিল তাতে বাংলাদেশের মানুষ সাড়া দেয়নি-প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত জানুয়ারি ১৪, ২০২৪, ১৩:৩১ অপরাহ্ণ
বিএনপি যতবার নির্বাচন বানচাল করতে চেয়েছিল তাতে বাংলাদেশের মানুষ সাড়া দেয়নি-প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

স্টাফ রিপোরটার, গোপালগঞ্জ : প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি যতবার নির্বাচন বানচাল করতে চেয়েছিল তাতে বাংলাদেশের মানুষ সাড়া দেয়নি। এখন কারো ভোট চুরি করলে সে ধরে নেয়। দৃষ্টান্ত হচ্ছে ৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারীর নির্বাচন। খালেদা জিয়া ক্ষমতায় থেকে নির্বাচন করেছিল। সেখানে কিন্তু সারা দেশে সমস্ত প্রশাসন, গোয়েন্দ সংস্থা, আইনশৃংখলা রক্ষাকারী সংস্থা, স্বসস্ত্র বাহিনী সবাইকে নামিয়ে দিয়ে নির্বাচন অুনষ্ঠিত করে কিন্তু সেখানে ভোটার যায়নি। তারপরেও সিল মেরে বাক্সে ভরে ভোট নিলেও ২২ পার্সেন্টের বেশি ভোট হয়নি। এত কষ্ট করার পরেও ২১ পার্সেন্ট ভোট হয়েছিল মাত্র। জনগণ কিন্তু মেনে নেয়নি, তারা যে ভোট চুরি করেছে। যে কারেন আন্দোলন হয়, ৩০শে মার্চ খালেদা জিয়া পদত্যাগে বাধ্য হয়। ভোট চুরির অপরাধে নাকে খত দিয়ে খালেদা জিয়ার বিদায়।

আজ রোববার (১৪ জানুয়ারী) দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফরের দ্বিতীয় দিনে নিজ নির্বাচনী এলাকা গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলা পরিষদ চত্বরে আয়োজিত শুভেচ্ছা ও মত বিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।

শেখ হাসিনা আরো বলেন, তারা এখন আন্দোলন করে গণতন্ত্রের জন্য, যারা গণতন্ত্রের “গ” ও বোঝে না। তাদের আন্দোলন মানুষ পুড়িয়ে মারা, গণতন্ত্রের “গ” কেন গণতন্ত্র বানানও করতে পারবে না। তারা জানে জ্বালাও পোড়াও। জীবন্ত মানুষকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে পুড়িয়ে মারা, বাসে আগুন, গাড়ীতে আগুন, লঞ্চে আগুন, রেলে আগুন। এর আগে ২০১৩ করেছে, ১৪ সালে করেছে ও ১৫ সালেও এসব করেছে, এখন আবার এই নির্বাচন ঠেকাতেও আন্দোলন করতে গিয়ে ট্রেনে আগুন দিয়ে এমন ভাবে পুড়িয়েছে মা সন্তানকে বুকে নিয়ে পুড়ে কয়লা হয় গেছে। এই দৃশ্য কোন মানুষ সহ্য করতে পারে না। যে কারনে তারা যতই চিৎকার করুক, চেচামেচি করুক তাদের কথায় জনগণ সারা দেয়নি। যারা এই ধরনের জঘন্য কাজ করেছে তাদের কোন ছাড় নাই। তাদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি, নেবো।

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, এখন ডিজিটাল বাংলাদেশ, সবার হাতে মোবাইল ফোন, সব জায়গায় সিসি ক্যামেরা আছে, ঠিক যারা এ কাজগুলো করছে তাদেরকে খুঁজে খুঁজে বের করে গ্রেফতার করা হবে, ইতিমধ্যে অনেককে গ্রেফতার করা হয়েছে। যারা হুকুমদাতা, যারা জ্বালাও পোড়াও কারার জন্য হুকুম দিয়েছে তাদেরকেও আমরা গ্রেফতার করেছি এবং তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিয়ে আর যেন ভবিষ্যতে এভাবে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করতে না পরে, এই ধরনের জঘন্য কাজ করতে না পরে সেটাই আমরা চাই। আমাদের সামনে অনেক কাজ। আমরা যে উন্নয়ন করে আজকে বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি, বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিকর্তন করতে পেরেছি।

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, আপনারা জানেন ষড়যন্ত্র চক্রান্ত কখনো শেষ হয় না। এই ষড়যন্ত্রের মোকাবেলা করেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। শক্ত একটা ঘাঁটি আছে বলেই আমি যে কোন ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করতে পারি। সেই শক্তি আপনারা দিযেছেন। টুঙ্গিপাড়া-কোটালীপাড়ার মানুষ আমার বড় শক্তি, বাংলাদেশের মানুষ আমার বড় শক্তি। আগামীতেও বাংলাদেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকবে। আমাদের কৃষক, শ্রমিক, মেহনতি মানুষ এমনকি যারা একেবারেই অনগ্রসর গোষ্ঠি প্রত্যেকের জন্য কাজ করেছি। প্রত্যেকটি জীবন যেন অর্থবহ হয়, উন্নয়ন হয়, সমৃদ্ধিশালী হয় সেই কাজটাই আমরা করেছি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরো বলেনছেন, আমি এসেছি শুধু আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞতা জানাতে। ৭ জানুয়ারীর নির্বাচনে আপনার আমাকে ভোট দিয়েছেন এবং কোটলীপাড়াবাসী ও টুঙ্গিপাড়াবাসী আমার সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিয়ে আপনারই আমার নির্বাচন করেছেন। আর আপনাদের ভোটেই জয়ী হয়ে আজকে আমি বাংলাদেশের জনগনের সেবা করার সুযোগ পেয়েছি। তাই আপনাদের প্রতি, কোটালীপাড়াবাসীর প্রতি, যারা আমাকে ভোট দিয়েছেন তাদের সকলের প্রতি কৃতজ্ঞাতা জানাচ্ছি। আপনাদের দোয়া ও আর্শিবাদ চাই। আপনাদের জন্য আমার ভালবাসা রইল। আজ আপনাদের আশ্রয়েই বারবার নির্বাচিত হয়েছি।

আওয়ামী লীগ সভাপতি আরো বলেন, এই দেশ, যেই দেশ, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবু সারাটা জীবন কষ্ট করে সংগ্রাম করে এবং তার ডাকে সারা দিয়ে এই বাংলাদেশের জনগণ অস্ত্র হাতে নিয়ে যুদ্ধ করে বিজয় এনে স্বাধীন করেছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব তার জীবনটাকেই উৎসর্গ করেছিলেন বাংলার দু:খী মানুষের মুখে হাসি ফোটাবার জন্য। আর এই কাজ করতে যেয়ে তিনি জীবনটাও দিয়ে গেছেন। জীবন দিয়েছিলেন আমার মা, আমার ভাই।

শেখ হাসিনা আরো বলেন, রেহানা ও আমি জার্মানীতে ছিলোম। মাত্র ১৫ দিন আগেই দেশ ছেড়ে যাই। তারপরই অমানিশার অন্ধকার আমাদের জীবনে নেমে আসে। ১৫ আগষ্ট ৭৫ সাল, একদিন শুনলাম মা-বাবা-ভাই কেউ নেই, দেশেও আসতে পারিনি। এমনি কি জিয়াউর রহমান পাসপোর্টটিও দেয়নি। পাসপোর্টের সময় শেষ হয়ে গেছে আর পাইনি। বিদেশের মাটিতে আশ্রয় নিয়ে আমরা রিফিউজি হিসাবেই ছিলাম। ৮১ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আমাকে সভাপতি নির্বাচিত করে। আমার ছেলে মেয়ে রেখে আমি আসি আপনাদের মাঝে। আপনারাই আমার সব ধরনের সহযোগীতা করেছেন। যে কারনে আমি বার বার জয়ী হতে পেরেছি, বার বার মানুষের জন্য কাজ করার সুযেগ পেয়েছি।
উন্নয়েনের চিত্র্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, আমাদের একটাই লক্ষ্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবু যে স্বপ্ন দেখেছেনে, দু:খী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো, এদেশের মানুষের অন্ন-বস্ত্র, বাসস্থান চিকিৎসা, শিক্ষার ব্যবস্থা করে যাওয়া। আর সেই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করতে চাই। আপনাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ এই জন্য অন্য এমপিরা যার যার নিজের এলাকা নিয়ে ব্যস্ত থাকে। আমার বাংলাদেশের ৩’শটি আসনের দায়িত্ব, সারা বালাদেশের উন্নয়নের দায়িত্ব। যে কারনে আমি সেভাবে নির্বাচন আপনাদের কাছে এসে করতে পারি না। আমি আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞতা জানাই এই কারনে যে, আমার সকল দায়-দায়িত্ব আপনারই নিয়ে নিয়েছেন। আপনারই তো আমাকে হারানো মা, বাবা, ভাইয়ের স্নেহ দিয়েছেন, ভালবাসা দিয়েছেন, যার ফলে আমি নিশ্চিন্ত মনে কাজ করতে পারছি।

চক্রান্ত-ষড়যন্ত্রের কথা মনে করে শেখ হাসিনা বলেন, আপনার জানেন গত নির্বাচনে অনেক বাধা বিপত্তি ছিল, অনেক চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র ছিল, কোন ভাবেই যেন নির্বাচন না হয়, না হতে পারে। এটাই ছিল আসল চক্রান্ত। অথচ একটি গণতান্ত্রিক সরকার ছাড়া, কোন রাজনীতিবিদ ক্ষমতায় না থাকলে কোন দেশের উন্নতি হয় না। এটা আমাদের দেশের জন্য প্রমানিত সত্য। ৭৫ সাল পর্যন্ত জাতির পিতা ছিলেন, সেই ৭২ সাল থেকে ৩ বছর ৭ মাস ৩ দিন। যুদ্ধবিদ্ধস্ত ধ্বংসস্তুপের উপর দাঁড়িয়ে বাংলাদেশকে গড়ে রেখে যান স্বল্পোন্নত দেশে। কিন্তু এরপরে যারা ক্ষমতায় এসেছিল প্রথমে ২১ বছর এরপর প্রায় ৮ বছর তুলনা করে দেখেন বাংলাদেশের কোন উন্নতি হয়নি। উন্নতি তখনই হয়েছে কেবল যখনি আওয়ামী লীগ সরকারে এসেছে। ৯৬ সালে প্রথম সরকার গঠন করি, বাংলাদেশের মানুষের খাদ্য চাহিদা পূরণ করি, স্বাক্ষরতার হার বৃদ্ধি করি, বিদ্যুত উৎপাদন বৃদ্ধি করি, রাস্তাঘাট ব্রীজ ব্যাপকভাবে করি।

তিনি বলেন, এরপর ২০০১ এ ক্ষমতায় আসতে পরিনাই, সেটাও একটা চক্রান্ত ছিল। ইমারজেন্সী হয়, বিএনপির দুর:শাসান, দূর্নীতি এবং লুটপাট, মানি লন্ডারিং, গ্রেনেড হামলা, বোমা হামলা, নানা করনেই জনগন বিরক্ত হয়ে পরে যার কারেন ইমারজেন্সি আসে। তাদের দুর:শাসনের কারনে, সেই জঙ্গীবাদ, বাংলাভাই সৃষ্টি করে মানুষের জীবনের শান্তি কেড়ে নিয়েছিল। ২০০৮ সালের নির্বাচন, সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নির্বাচিত হয়। এককভাবে আওয়ামী লীগ ২৩৩টি সিট পেয়েছিল। বিএনপি পেয়েছিল মাত্র ৩০টি সিট। তারপর থেকে তারা ইলেকশনে আসতে চায় না। ইলেকশন বানচাল করতে চায়।

ধন্যবাদ জানিয়ে শেক হাসিনা বলেন, ধন্যবাদ জানাই আপনাদেরকে, তাদের সমস্ত ষড়যন্ত্র আপনারা ধুলিসাৎ করে দিয়েছেন। নির্বাচন পরিচালনার জন্য যেভাবে আপনারা কমিটি করেছেন, মানুষের কাছে গিয়েছেন ভোটদের কাছে গেছেন, ভোটরদের অনুরোধ করেছেন, ভোটারাও ছুটে এসেছেন। ভোটরদের কাছেও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলবো এত সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন করে আপনাদের দৃষ্ঠান্ত দেখিয়েছি, পৌঁছে দিয়েছি।

বিগত নির্বাচন নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের ৭৫ এর পরে যেকটি নির্বাচন হয়েছে সেখানে জনগনের ভোট ছিল না। মিলিটারি এসেছে জনগনের ভোট নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ আসার পরই জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করেছে। সেই সাথে সাথে মানুষের খাদ্যোর নিরাপত্তা থেকে শুরু করে উন্নয়ন, বিশেষ করে গ্রামের মানুষ যাতে ভালভাবে বাঁচতে পরে চলতে পারে জীবন জীবিকার ব্যবস্থা করতে পারে। আমাদের তরুন সমাজ তাদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, করোনা ভাইরাসের কারনে জিনিসপত্রে দাম বেড়েছে। আবার হামলা শুরু হয়েছে। এজন্য সামনে আরো দুর্দিন আসতে পারে। আমাদের দেশের মাঠি উর্বর। আমাদের মানুষ আছে। এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে। সাথে সাথে হাস-মুরগী, গরু-ছাগল পালন করতে হবে। আমাদের খাদ্য আমাদের উৎপাদন করতে হবে।

এর আগে, দুপুরে সড়ক পথে টুঙ্গিপাড়া থেকে কোটালীপাড়া পৌছান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে কোটালীপাড়া উপজেলা পরিষদ চত্বরে আয়োজিত শুভেচ্ছা ও মত বিনিময় সভায় যোগ দেন। এরআগে সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজ বাসভবনে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেন। পরে তিনি রাষ্ট্রীয় কর্মসূচী শেষ করে ঢাকার উদ্দেশ্যে কোটালীপাড়া ত্যাগ করেন।

এর আগে, দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফরের প্রথম দিন শনিবার সকাল ৯টায় গণভবন থেকে সড়ক পথে টুঙ্গিপাড়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বেলা সাড়ে ১১টায় টুঙ্গিপাড়ায় পৌঁছান শেখ হাসিনা। বেলা ১১টা ৫০ মিনিটে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধি সৌধ বেদিতে পুস্পস্তাপর্ক অর্পণ করে গভীর শ্রদ্ধা জানান। পরে বোন শেখ রেহানাকে সাথে নিয়ে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের শহীদ সদস্য এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে অত্মত্যাগকারী শহীদের আত্মার শান্তি কামনা করে ফাতেহা পাঠ ও বিশেষ মোনাজাতে অংশ নেন। পরে দলীয় প্রধান হিসাবে মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী পরিষদের সদস্যদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা জানান। পরে দুপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজ বাসভবনে নবনিযুক্ত মন্ত্রীদের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে অংশ নেন। #