• ১৯শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ৫ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বদ্ধপুকুরে গার্ডার ব্রিজ, জলে গেল কোটি টাকা

report71
প্রকাশিত জানুয়ারি ২৩, ২০২৪, ১২:৪০ অপরাহ্ণ
বদ্ধপুকুরে গার্ডার ব্রিজ, জলে গেল কোটি টাকা

আসাদুল ইসলাম, গাইবান্ধা

এক পাশে পুকুর, আর এক পাশে ছোট্ট ডোবা। তার ওপর বাড়ি। রয়েছে উঁচু ভিটা, বাঁশঝাড়, গাছ ও কবরস্থান। মাঝখান দিয়ে চলে গেছে মেঠোপথ। নেই কোনো পানিপ্রবাহের উপায়ও। কিন্তু তবুও পুকুর সদৃশ সেই জায়গার ওপর কোটি টাকা ব্যয়ে ১২ মিটার দৈর্ঘ্যের আরসিসি গার্ডার ব্রিজ নির্মাণ করেছে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলা স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তর।

অপরিকল্পিতভাবে নির্মাণের ফলে জলে গেল এ টাকা। জনগনের কোনো কল্যাণে তো আসবেই না, বরং ঢিলেঢালাভাবে নির্মাণ কাজ চলমান থাকায় তা বাড়িয়েছে দুর্ভোগ- এমন অভিযোগ স্থানীয়দের।

জানা যায়, ১৯৮৮ সালের বন্যায় ব্রহ্মপুত্র নদের তীরবর্তী বাঁধ ভেঙে পানি ঢোকার পর উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়নের বডুয়াহাট থেকে গাইবান্ধা সদরের কামারজানী যাওয়া রাস্তায় ফুলমিয়ার বাজারের কাছাকাছি ছোট্ট একটি পুল (সেতু) নির্মাণ করেছিল এলজিইডি। ছিল পানি চলাচলের জন্য উন্মুক্ত নালা। কিন্তু কালক্রমে বন্ধ হয়ে যায় সেই নালা, বন্ধ হয় পানিপ্রবাহের পথ। বাড়ি করে মানুষ। সময়ের তাগিদে রাস্তা পাকাকরণের উদ্যোগ নেয় এলজিইডি। প্রয়োজন দেখা দেয় পুরোনো পুলের স্থলে নতুন পুল তৈরির। উদ্যোগ নেয় উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর। ১২ মিটার দৈর্ঘ্যের আরসিসি গার্ডার ব্রিজ নির্মাণের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয় কোটি টাকা। আর কাজ পান সাইদুর রহমান নামের এক ঠিকাদার।

সরেজমিনে দেখা যায়, ওই গার্ডার ব্রিজের উত্তরপাশে রয়েছে পুকুর, বাড়ি, সবজি চাষের উপযোগী ভিটা ও গাছপালা। আর দক্ষিণপাশে রয়েছে বাঁশঝাড়, কবস্থান, ছোট্ট ডোবা, বাড়ি ও বহুকাল আগের পুরোনো রাস্তা। ব্রিজের চারপাশে নেই কোনো পানিপ্রবাহের পথ। দেখেই মনে হবে এটি বদ্ধ কোনো জলাশয় বা পুকুর। সেই পুরোনো ছোট্ট পুলের স্থলেই ১২মিটার আরসিসি গার্ডার ব্রিজ নির্মাণ করেছে উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর। পেরিয়েছে নির্ধারিত সময়। এখনো তৈরি হয়নি ব্রিজের উইং ওয়াল। বসানো হয়নি রাস্তার উভয়পাশের পিলার। যাত্রীদের ঠেলে তুলতে দেখা যায় বিভিন্ন বাহন।

সাবেক মেম্বার আ. হামিদ সরকার ও সাহেদুল ইসলামসহ স্থানীয়রা বলছেন, সেই যে ১৯৮৮ সালে বন্যা উঠেছিল, ওই ধরণের বন্যা হয় না আর। এখন যা হয়, তা হলো বৃষ্টির পানি। চারপাশে পানিপ্রবাহের কোনো পথ না থাকায় ব্রিজটি কোনো কাজে আসবে না। তাদের ভাষ্য মিছেমিছি করা হয়েছে এটি। পানি প্রবাহের জন্য নালা না করলে জলে যাবে ব্যয়ের এ কোটি টাকা।

এদিকে, ১২ মিটার দৈর্ঘ্যের আরসিসি ব্রিজটি নির্মাণে বরাদ্দ কতটাকা তা জানেন না বলে জানিয়েছেন তদারকির দায়িত্বে থাকা উপসহকারী প্রকৌশলী মো. রবিউল ইসলাম। তিনি বলেন,”গতমাসে আমি বদলী হয়েছি। ব্রিজটি কাজে আসবে কি না, তা জানি না। আর এটি কেন করা হয়েছে তা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষই বলতে পারবেন।”

বর্তমানে ওই ব্রীজের কাজ তদারকির দায়িত্ব থাকা উপসহকারী প্রকৌশলী মো. মইনুল ইসলাম বলেন, “নতুন এসেছি। বরাদ্দ কত জানি না। ফাইল দেখে জানাতে চাইলেন তিনি।

চারপাশে পানিপ্রবাহের পথ বন্ধ থাকা পুরোনো ছোট পুলের জায়গায় নতুন আরসিসি গার্ডার ব্রিজটির অনুমোদন নিয়েছিলেন উপজেলা প্রকৌশলী সামসুল আরেফিন খাঁন। যিনি বদলী হয়েছেন সম্প্রতি। তার কাছে বিষয়ট ফোনে জানার চেষ্টা করলে প্রথমে ফোন ধরেননি। আবার ফোন দিলে কেটে দেন তিনি।

উপজেলা প্রকৌশলী মো. আব্দুল মান্নাফ বলেন, “আমি নতুন। ওই জায়গাটা সম্পর্কে আমার ধারণা নেই। আমি সাব এসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারকে পাঠাবো। তিনি দেখে আসবেন।