সঞ্জিব দাস, গলাচিপা পটুয়াখালী,প্রতিনিধি
৭০-বছরে-লক্ষাধিক-গাছ-লাগানোর-দাবি-সিরাজুলেরখালি জায়গা পেলেই সেখানে গাছ লাগান পটুয়াখালীর সিরাজুল ইসলাম। গলাচিপা উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবদুল্লাহ আল হেলাল বলেন, ‘নিজ উদ্যোগে গাছ লাগানোর বিষয়টি জানা আছে তার। এটি একটি ব্যতিক্রম বিরল ঘটনা। প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে। যদি সে চায়, তাহলে তার জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গাছের চারা, বীজ, সার, কিটনাশকসহ যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা দেয়া হবে।’
শুধু নিজের বাড়িতেই নয় অন্যের বাড়িতে, সড়কের পাশে, মূলত খালি জায়গা পেলেই সেখানে গাছ লাগিয়ে আসেন এবং পরে তা পরিচর্যাও করেন পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার ডাকুয়া ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্বআটখালী গ্রামের সিরাজুল ইসলাম। গ্রামে অনেকেই তাকে গাছ পাগল নামে ডাকেন। ৭০ বছর ধরে লক্ষাধিক গাছ লাগিয়েছেন বলে দাবি করেন সিরাজুল ।সিরাজুলের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ৮০ বছর বয়সী সিরাজুল ১৯৮৬ সালে কামিল পাস করে বিভিন্ন মসজিদে ইমামতি করেছেন। এর আগেই ১০ থেকে ১১ বছর বয়সে গাছ লাগানোর প্রতি তার ঝোঁক ছিল এবং সেই থেকে গাছ লাগাতে থাকেন। ইতোমধ্যে লক্ষাধিক গাছ লাগিয়েছেন বলে দাবি করেন সিরাজুল ইসলাম। এর মধ্যে ফলজ হিসেবে নারকেল, সুপারি, পেয়ারা, জাম্বুরা, গাবগাছ ছাড়াও তালগাছ, মেহগনি, চাম্বল, সুন্দরী গাছও লাগিয়েছেন তিনি। সিরাজুল ইসলাম জানান, শুধু নিজের বাড়িতেই নয় অন্যের বাড়িতে, সড়কের পাশে, মূলত খালি জায়গা পেলেই সেখানে গাছ লাগিয়ে আসেন। পরে তা পরিচর্যাও করেন তিনি। শুধু নিজের গ্রামেই নয়, আশেপাশের অন্তত ১০ গ্রামজুড়ে আছে তার লাগানো নানান প্রজাতির গাছ।
গাছ লাগানোর ভাবনা কীভাবে এলো জানতে চাইলে সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘আসলে অনেক কারণেই গাছ লাগানোর ভাবনা আসে। যেমন হাদিস শরীফে আছে গাছ লাগানো সুন্নত, ছদকায়ে জারিয়া। সড়কের পাশে গাছ লাগিয়েছি পথিকের ছায়া দেয়ার জন্য। এ ছাড়াও সরকারের নির্দেশনা রয়েছে পতিত জায়গা রাখা যাবে না। এসব বিষয় চিন্তা করেই বেশি করে গাছ লাগাতে শুরু করেছি। মূলত গাছ লাগানো সুন্নত, গাছে অক্সিজেন দেয় এমন ধারণা থেকেই গাছ লাগানোর প্রথম ভাবনা।’বর্তমানে নানা অসুখে ভুগছেন সিরাজুল ইসলাম। টাকার অভাবে উন্নত চিকিৎসা না করাতে পারাসহ আছে অনেক আক্ষেপ। আর্থিক সহযোগিতা চাওয়ার পাশাপাশি সিরাজুলের শেষ ইচ্ছা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার।
সিরাজুল জানান, অর্থের প্রয়োজনে তিনি গাছ বিক্রিও করেন, তবে যাদের জায়গায় গাছ লাগিয়েছিলেন তাকেও বিক্রির অর্ধেক ভাগ দিচ্ছেন তিনি। বাকি টাকা দিয়ে বাড়িতে চারা উৎপাদনে ব্যয় করছেন।
এক সময় বাজার থেকে চারা কিনে রোপণ করলেও এখন অর্থের অভাবে তা পারছেন না সিরাজুল। সম্পত্তি বলতে রয়েছে, তার ৬০ শতাংশ জমি। এতে তার তিন মাসের সংসার চলে। বাকি নয় মাস মেয়েদের সাহায্যে চলতে হয় তাকে। গাছের চারা কিনতে না পারায় এখন বাড়িতেই চারা উৎপাদন করছেন তিনি। স্থানীয়রা সিরাজুলের গাছ লাগানোকে সমর্থন করছেন। তার দেখাদেখি সমাজের আরও মানুষ উদ্বুদ্ধ হচ্ছে বৃক্ষরোপণে। বাড়ির পাশে সিরাজুলের ভাইয়ের ছেলে দেলোয়ার হাওলাদার বলেন, ‘আমার বৃদ্ধ চাচার এই গাছ লাগানো নেশায় পরিণত হয়েছে। সারাদিন গাছ লাগানোয় ব্যস্ত থাকবে, আবার রাত হলে কলস ভর্তি পানি নিয়ে গাছের গোড়ায় ঢালবে। অন্যের বাড়িতে গাছ লাগানোর পর দিনরাত গাছের পরিচর্যা করার সময় অনেকে বিরক্ত হলেও চাচার হাসিতে সবাই চুপ হয়ে যায়। অনেকে তো চাচাকে গাছ পাগল বলে ডাকে।’ ৭০ বছরে লক্ষাধিক গাছ লাগানোর দাবি সিরাজুলের
গাছকে জড়িয়ে ধরে আছেন সিরাজুল ইসলাম।
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের এলাকায় বিদ্যুতের লাইন টানার সময় চাচার কয়েকটি গাছ কেটে ফেলা হয়েছিল। গাছগুলো রক্ষা করতে না পেরে তখন আমার চাচা কেঁদেছিলেন। আমার চাচা এখন নানা অসুখে ভুগছেন। টাকার অভাবে উন্নত চিকিৎসা হচ্ছে না।’ একই গ্রামের মুদি দোকানদার মনির হোসেন বলেন, ‘গাছ লাগানো যেন তার নেশা আর পেশায় পরিণত হয়েছে। আমাদেরও ভাল লাগছে তার গাছ লাগানোর অবস্থা দেখে। আগে যেহানে খালি জায়গা ছিল এহন হেইআনে ওনার লাগানো গাছ অনেক বড় অইছে।’ ডাকুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিশ্বজিৎ রায় বলেন, ‘আমি মুগ্ধ হয়েছি সিরাজুল ইসলামের গাছ লাগানোর দৃশ্য দেখে। আমার ইউনিয়নের এই গ্রামটির চেহারাই পাল্টিয়ে দিয়েছেন তিনি, শুধু গাছ লাগিয়ে। এখন সবুজে সমারোহ।’তিনি বলেন, ‘বন বিভাগ থেকে সরকারিভাবে ইউনিয়ন পরিষদে গাছের কিছু চারা বরাদ্দ দেয়া হয় সেখান থেকে কিছু চারা আমরা সিরাজুল ইসলামকে দেয়ার ব্যবস্থা করব। যাতে তার একটু সুবিধা হয়।’ গলাচিপা উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবদুল্লাহ আল হেলাল বলেন, ‘নিজ উদ্যোগে গাছ লাগানোর বিষয়টি জানা আছে তার। এটি একটি ব্যতিক্রম বিরল ঘটনা। প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে। যদি সে চায়, তাহলে তার জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গাছের চারা, বীজ, সার, কিটনাশকসহ যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা দেয়া হবে।’