• ৩রা নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১৮ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বরগুনার মোবাশ্বেরা করিম মিমি বরগুনা তথা বাংলাদেশের গর্ব

report71
প্রকাশিত আগস্ট ৭, ২০২৪, ০৩:১৫ পূর্বাহ্ণ
বরগুনার মোবাশ্বেরা করিম মিমি বরগুনা তথা বাংলাদেশের গর্ব

বরগুনা জেলা প্রতিনিধিঃ
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বরগুনা জেলার কৃতি সন্তান মোবাশ্বেরা করিম মিমি কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক হিসেবে নেতৃত্ব দিয়ে শিক্ষার্থীদের দ্বাবি আদায় রাজপথে আহত হয়েও জীবন বাজি রেখে দিন-রাত আন্দোলন কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে সফলতা অর্জন করায় এলাকা তথা সমগ্র বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করেছেন মিমি। তাই সকল সমন্বয়কের মধ্যে মোবাশ্বেরা করিম মিমি আমাদের বরগুনার গর্ব, সারা দেশের অহংকার। তিনি বরগুনা পৌর শহরের কলেজ রোড এলাকার বাসিন্দা জেলা প্রশাসকের সাবেক নাজির মোঃ মাসুদ করিম ও সংগীত শিল্পী খাদিজা আক্তার মুন্নী দম্পতির মেয়ে। তাদের তিন কন্যা সন্তানের মধ্যে মোবাশ্বেরা করিম মিমি মেজো কন্যা সন্তান।

বিভিন্ন গণমাধ্যম এবং প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে দেখাযায়, গতকাল রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিনের সভাপতিত্বে বঙ্গভবনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত বৈঠক অনুষ্ঠানে সেনাপ্রধান, নৌপ্রধান, বিমান বাহিনীর প্রধান এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পাঁচ সমন্বয়ক আব্দুল্লাহ আল হোসাইন, আরিফ তালুকদার, ওমর ফারুক ও মোবাশ্বেরা করিম মিমি এবং ইঞ্জিনিয়ার মোঃ আনিছুর রহমান। এর মধ্যে চারজন ছাত্র এবং ছাত্রী সমন্বয়কদের মধ্যে শুধু মাত্র নারী সমন্বয়ক হিসেবে বরগুনার কৃকি সন্তান মোবাশ্বেরা করিম মিমি উপস্থিত ছিলেন।

জানা যায়, মোবাশ্বেরা করিম মিমি বরগুনা সানবীম কিন্ডারগার্টেন স্কুল থেকে পিএসসি জিপিএ ৫ পেয়ে, ২০১৩ সালে বরগুনা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে অষ্টম শ্রেণি পাশ করে, ২০১৬-১৭ সালে ধানমন্ডি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করে, ২০১৮-১৯ সালে বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজ থেকে পাশ করে, ২০২২ সালে আমেরিকার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ (এআইউবি) ব্যাচেলর অফ ‘ল’ ডিপার্টমেন্টের আইন বিভাগের ৬ সেমিস্টারে অধ্যায়নরত শিক্ষার্থী। দেশের বর্তমান পরিস্থিতি ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে, রাজধানীতে এআইউবিতে পড়াশোনা করার শোবাধে অন্যান্য সমন্বয়কদের সাথে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ঢাকা সাহাবাগ থেকে ১৫ জুলাই নেতৃত্ব দিয়ে রাজপথে বেরিয়ে পরেন। এর পরে ধারাবাহিক ভাবে ১৬ জুলাই শহীদ মিনারে আন্দোলন কর্মসূচীতে অংশগ্রহন, ১৭ জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়ার সময় ছাত্রলীগের  লাঠিচার্জে বাম হাত, বুক ও পায়ে ব্যাথা পেয়ে গুরুতর আহত হয়ে ১ দিন পরে আবারো ১৯ ও ২০ জুলাই আহত অবস্থায় আন্দোলন কর্মসূচীতে উপস্থিত হয়ে নেতৃত্ব প্রদান করেন, ২৫ জুলাই  আবারো তিনি আন্দোলনে সংঘর্ষে আহত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় চিকিৎসা নিয়ে ৩০ জুলাই রাজপথে আন্দোলনে উপস্থিত হয়, কুড়িল বিশ্বরোড ২ আগষ্ট আন্দোলন করে তিনি বেশ কয়েকবার আহত ও মেরে ফেলার হুমকির মুখে পরলেও আটকে রাখতে পারেনি তাকে। পর্যায়ক্রমে সকল সমন্বয়কদের নেতৃত্বে রাজপথে নেমে আসে লক্ষ- কোটি শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ সকল শ্রেনী পেশাজীবি মানুষ। এ আন্দোলনে পুলিশ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের গুলি ও নির্যাতনে নিহত হয়েছে শত শত শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ। ঘটনাস্থলে ও হাসপাতাল সহ বিভিন্ন স্থানে মৃত্যু বরণ করেন অনেকে। এবং অনেকের মরদেহ খুঁজেই পায়নি পরিবার এখনো।  শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা এমন বর্বরোচিত সময় পার করতে থকলে! ৪ আগষ্ট শাহবাগ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সকল বাঁধা উপেক্ষা করে বিশাল কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা। ৫ আগষ্ট লংমার্চ ডাকলে সকল শ্রেনী পেশাজীবি মানুষ ক্ষিপ্ত হয়ে গণভবন ও সংসদ ভবন দখলের উদ্দেশ্য জরো হয়ে দখল করে নিলেও তার পূর্বেই শেখ হাসিনা ও শেখ রেহেনা গণভবন থেকে হেলিকপ্টার যোগে পালিয়ে দেশ ত্যাগ করেন। এদিকে শত শত শিক্ষার্থীদের রক্তের বিনিময়ে ও মোবাশ্বেরা করিম মিমিসহ সকল সমন্বয়কের কষ্ট ও ত্যাগের বিনিময়ে স্বাধীনতা পেয়ে সার্থক ও সফলতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ। আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠে দেশের রাজধানী ঢাকাসহ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সকল শ্রেনী পেশাজীবি মানুষ।

মোবাশ্বেরা করিম মিমির বাবা মাসুদ করিম বলেন, আমি আজ একজন গর্বিত বাবা! তার শিক্ষার প্রতি ব্যাপক অনুরাগ। দেশের জন্য জীবন বাজি রেখে আমি সরকারি চাকুরিজীবী তাই আমাকে না জানিয়েই ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে ন্যায্য আদায়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে রাজপথে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে! আমি জানতে পেরেছি গতকাল যখন বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি ও সেনা প্রধান আমার মেয়েসহ অন্যান্য সমন্বয়করা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন বৈঠক অনুষ্ঠানে অভিভাবক সহ আমন্ত্রণ পেয়েছি। এর পর থেকেই আমাদের স্ব পরিবারে সেনা বাহিনী নিরাপত্তা দিয়ে রেখেছেন। তবে আমাদের মেয়ের ও পরিবারের প্রতি অনেক ঝুঁকি ছিল সেটা এখন অনেকটাই সিথিল হয়েছে।

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছাত্রী সমন্বয়ক মোবাশ্বেরা করিম মিমি বলেন, আমি একজন মুক্তিযোদ্ধার নাতি হয়েও সকল সমন্বয়ক ও সকল শিক্ষার্থীরা ন্যায্য অধিকার নিয়ে রাজপথে নেমেছিলাম। যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কর্মীরা এজন্য বারবার উঠিয়ে নেয়ার হুমকি প্রদান করলেও, নেতৃত্ব দিতে হাল ছাড়েনি আমি। অধিকার আদায়ে শত শত আমার ভাই ও বোনেরা বুক পেতে জীবন দিয়ে দিয়েছে! এমন অবস্থায় কোনভাবেই ভয় পেয়ে পিছু হাঁটা যাবে না, মনকে বুঝ দিয়ে প্রতিনিয়তই আমাদের কর্মসূচি অনুযায়ী রাজপথে ছিলাম। জীবন চলে গেলেও আজ তো সার্থক হতো! হয়তো চোখে দেখে যেতে পারতাম না! হায়াত ছিল বলে দেখতে পেরেছি। এবং ছাত্র সমাজ দেখিয়ে দিয়েছে অন্যায়ের বিরুদ্ধে কিভাবে লড়তে হয় জীবন বাজি রেখে আমাদের ভাইদের রক্তের বিনিময়ে আজকে স্বাধীনতা পেয়েছি, সার্থক হয়েছি। স্বাধীন পেয়েছি ঠিক ভাই-বোনদের পাবো কই! ভালো থাকুক আমার সকল শহীদ ভাই ও বোনেরা। আমি বরগুনার মেয়ে হয়ে কেন্দ্রীয় ভাবে অন্যান্য সমন্বয়কদের সাথে একসাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নেতৃত্ব দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করতে পেরে আমার সহপাঠী, সহোযোগি, সহযোদ্ধা, বাবা-মা, ভাই-বোন সহ বরগুনা বাসির প্রতি অফুরন্ত ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আমার জন্য সকলে দোয়া করবেন সব সময় যেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পারি। আজক