মোঃ ইসমাইল ভোলা।।
ভোলা এশিয়া ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভুল চিকিৎসায় সোনিয়া বেগম (২৮) নামের এক অন্তসত্বা নারীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। সোমবার (১৯ আগস্ট) রাত ১২ টায়ে ভোলা শহরের এশিয়া ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এ ঘটনা ঘটে। নিহত সোনিয়া ভোলা সদর উপজেলার পশ্চিম ইলিশা ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মো. কামাল হোসেনের স্ত্রী। তিনি পেশায় গার্মেন্টস কর্মী।
নিহত সোনিয়ার বোন লিমা বেগম জানান, তাঁর বোন সোনিয়া বেগম (২৮) অন্তসত্বা ছিলেন। সোমবার (১৯ আগস্ট) তার সন্তান ভুমিষ্ট হওয়ার কথা ছিলো। তাই বিকেল ৫টার দিকে সোনিয়া বেগমকে ভোলা শহরের এশিয়া মেডিকেল সেন্টারে ভর্তি করান। ভর্তির পর সেখানে থাকা নার্স তাদের হাতে একটি ইনজেকশন ও স্যালাইয়ের স্লিপ ধরিয়ে দিয়ে সেগুলো নিয়ে আসতে বলেন। সেগুলো নিয়ে আসলে কর্তব্যরত নার্স সোনিয়াকে স্যালইন ও ইনজেকশন পুশ করে দিয়ে চলে যায়। এক ঘন্টা পর সোনিয়া শরীরে ব্যাথা বেড়ে যায়। পরে নার্স এসে সমস্যা নেই বলে চলে যায়। রাত ৮টার দিকে তার ব্যাথা আরো কয়েকগুন বেড়ে গিয়ে শরীরে যন্ত্রনা শুরু হয়। তখন নার্সের কাছে গেলে তারা বলেন সমস্য নাই। এর পর সোনিয়া নিজেই স্যালাই বন্ধ করে দিয়ে বোনকে বলে আমার অবস্থা ভালো না আমি মনে হয় আর বঁচবো না। এ অবস্থায়ও কর্তব্যরত নার্সরা পুনরায় এসে স্যালইন চালু করে দিয়ে যায়। এর কিছুক্ষণ পর সোনিয়ার পুরো শরীর কালো হয়ে মুখ দিয়ে লালা বের হয়ে আসলে নার্সরা এসে বলেন, সমস্য নাই ঠিক হয়ে যাবে। এ সময় নার্সরা বিভিন্ন চিকিৎসকের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করেন। কিন্তু চিকিৎসকদের সারা পায়নি। সর্বশেষ রাত সাড়ে ৯টার দিকে ডা. বখতিয়ার মুজাহিদ এসে দেখেন রোগী মারা গেছেন। এর পরও মেডিকেলের নার্স ও কর্তৃপক্ষ বলেতে ছিলেন সমস্য নাই রোগী ঠিক হয়ে যাবে।
নিহত সোনিয়ার বাবা মো. হেলাল উদ্দিন জানান, তার মেয়ের জামাই মো. কামাল গার্মেন্টস কর্মী। স্ত্রী সন্তান নিয়ে গত এক বছর ধরে ঢাকায় থাকতেন। কিছু আগে সোনিয়া অসুস্থ্য থাকায় ছেলেসহ তাকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। গত শুক্রবার তারা গাইনি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ফয়সালকে দেখিয়েছেন। সে আল্টান্সো করে দেখে বলেছেন, গর্ভের বাচ্চা ঠিকঠাক আছে। সোমবার ভুমিষ্ট হওয়ার সম্ভাব্য তারিখ দিয়েছেন। সেই তারিখ অনুযায়ী তারা বিকেল পাঁচটার দিকে এশিয়া মেডিকেল সেন্টারে এসে ভর্তি হয়। সেখানকার লোকজনের অবহেলা ও ভুল চিকিৎসায় তার মেয়ে ও গর্ভের সন্তানের মৃত্যু হয়েছে। তিনি এর সঠিক বিচার দাবি করেন।
মেডিকেলটিতে ভর্তি থাকা আরো ৩-৪জন রোগীর স্বজন জানান, একটা মেডিকেলে সার্বক্ষনিক একজন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও সেখানে কোনো চিকিৎসক থাকে না। অনভিজ্ঞ নার্স দিয়ে তারা চিকিৎসা চালিয়ে থাকেন। রোগীর কোনো সমস্যা হলে নার্সদের ডাকলেও পাওয়া যায় না। এর আগেও এ ধরণের ভুল চিকিৎসায় বেশ কয়েকজন রোগী মারা গেছেন।
এ ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন ভোলার সিভিল সার্জন ডা. কে এম শফিকুজ্জামানা। তিনি এসে নিহতের মরদেহ ও চিকিৎসা ব্যবস্থা পরিদর্শন শেষে তিনি বলেন, সরকারি নিয়মে একটি প্রাইভেট ক্লিনিকের জন্য কমপক্ষে তিন জন চিকিৎসক থাকতে হবে। এক জন চিকিৎসক সার্বক্ষনিকভাবে ক্লিনিকে অবস্থান করতে হবে। কিন্তু এশিয়া মেডিকেলে এধরনের কোনো চিকিৎসককে পাওয়া যায়নি। এছাড়াও যে সকল নার্স রয়েছে তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা কমপক্ষে নার্সিং ডিপ্লোমা থাকতে হবে। যারা এখানে কর্তব্যরত ছিলেন তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা কি সেটি দেখার জন্য তাদের কাগজপত্র চাওয়া হয়েছে কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে।
তিনি আরো জানান, নিয়ম হলো একটি ক্লিনিকে কোনো রোগী ভর্তি হলে আগে একজন চিকিৎসক দেখবেন। তার পর সে যেই চিকিৎসা দিবেন সে অনুযায়ী সকল কিছু রোগীর ফাইলে লেখা থাকবে। কিন্তু সোনিয়ার বেলায় সেটির কোনটিই ফলো করা হয়নি। এ বিষয়ে একজন গাইনী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। তিন দিনের মধ্যে তাদেরকে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হবে। তদন্তে যে দোষী প্রমানিত হবে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ সময় পর্যন্ত এশিয়া মেডিকেল সেন্টারে গাইনী সকল কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।
ভোলা সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, খবর পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করেছেন। নিহতের পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে পরবর্তী আইনী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।