• ১৫ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৩০শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গোপালগঞ্জে বিএনপি-আওয়ামী সমর্থকদের সাথে সংঘর্ষে নিহত দিদারের মরদেহ হস্তান্তর, হয়নি মামলা, আটক-২

report71
প্রকাশিত সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২৪, ১৩:১৮ অপরাহ্ণ
গোপালগঞ্জে বিএনপি-আওয়ামী সমর্থকদের সাথে সংঘর্ষে নিহত দিদারের মরদেহ হস্তান্তর, হয়নি মামলা, আটক-২

স্টাফ রিপোর্টার, গোপালগঞ্জ : গোপালগঞ্জে বিএনপি
ও স্বেচ্ছাসেবক দল এবং আওয়ামী সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে নিহত কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের ক্রীড়া সম্পাদক শওকত হোসেন দিদারের মরদেহ নিজ বাড়ী ঢাকার জুরাইনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। মরদেহের ময়না তদন্ত শেষে পুলিশ তার নিহতের স্ত্রী রাবেয়া রহমান ও শ্বশুর হাবিবুর রহমানের কাছে বুঝিয়ে দেয়া হয়।

এদিকে, গোপালগঞ্জে বিএনপি ও স্বেচ্ছাসেবক দল এবং আওয়ামী সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে নিহত কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের ক্রীড়া সম্পাদক শওকত হোসেন দিদারের নিহত ও নেতাকর্মীরা আহত হবার প্রতিবাদে গোপালগঞ্জে বিক্ষাভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে জেলা ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দল। এ ঘটনায় মামলা দায়ের না হলেও জড়িত সন্দেহে দুইজনকে আটক করেছে পুলিশ।

এ হামলার ঘটনা নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে চলছে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ। স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের দাবী আওয়ামী সন্ত্রাসীরা এ হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে। তবে আওয়ামী লীগ বলছে, এ ঘটনার আওয়ামী লীগ জড়িত নয়।

জানাগেছে, আজ শনিবার সকাল ১১ টার দিকে গোপালগঞ্জ ২৫০-শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের মর্গে নিহতের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। পরে স্বজনেরা একটি এ্যাম্বুলেন্সে করে মরদেহ নিয়ে ঢাকার জুরাইনের উদ্দেশ্যে গোপালগঞ্জ থেকে রওনা হন। জুরাইন কবরস্থানে তার মরদেহ সমাধিস্থ করা হবে বলে পারিবারিক সূত্রে জানাগেছে।

এদিকে, এ ঘটনার প্রতিবাদে আজ শনিবার বিকালে বৃষ্টি উপক্ষো করে জেলা শহরের লঞ্চঘাট থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে নেতাকর্মীরা। মিছিলটি জেলা শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে স্থানীয় স্বর্ণ পট্টিতে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক সাজ্জাদ হোসেন হিরার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে জেলা বিএনপির আহবায়ক শরীফ রফিকুজ্জামান, সদস্য ডা, কে এম বাবার, এ্যাড তৌফিকুল ইসলাম তৌফিকসহ দলীয় নেতাকর্মীরা বক্তব্য রাখেন। এ কর্মসূচীতে জেলা বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদলসহ অঙ্গসংঘঠনের নেতাকর্মীরা অংশ নেন। এছাড়া কোটালীপাড়া উপজেলায় বিক্ষোভ করেছে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দল।

অপরদিকে, গোপালগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় নেতা শওকত আলী দিদারের নিহতের ঘটনায় আলিমুজ্জামান চৌধুরী (৫০)ও সিজার শেখ(৪২)নামে দুই জনকে আটক করেছে পুলিশ। আজ শনিবার বিকেলে ওই দুই জনকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের বাড়ী সদর উপজেলার ঘোনাপাড়া এলাকায়।

গোপালগঞ্জ সদর থানার ওসি মো. আনিচুর রহমান জানিয়েছেন, আলিমুজ্জামান চৌধুরী ও সিজার শেখকে কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের ক্রীড়া সম্পাদক শওকত হোসেন দিদার নিহতের ঘটনায় সংশ্লিষ্টতা রয়েছে এমন সন্দেহে আটক করা হয়। কিন্তু ওই ঘটনায় এখন পযর্ন্ত মামলা না হওয়ায় এঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে আদালতে পাঠানো হয়। আদালত তাদেরকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

নিহতের স্ত্রী স্ত্রী রাবেয়া রহমান বলেন, আমি আমার স্বামীর মরদেহ বুঝে নিয়েছি। ঢাকার জুরাইনে জানাযা শেষে তাকে দাফন করা হবে। আমরা স্বামীকে যারা হত্যা করেছে আমি তাদের বিচার চাই। পারিবারিক ও দলীয় সিদ্ধান্ত শেষে মামলা দায়ের করা হবে।

নিহতের শ্বশুর হাবিবুর রহমান বলেন, আমরা জামাই গোপালগঞ্জে এসেছিল। তাকে এভাবে হত্যা করা হবে তা আমরা স্বপ্নেও ভাবিনি। আমরা এ হত্যাকান্ডের বিচার চাই।

গোপালগঞ্জ জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক সাজ্জাদ হোসেন হিরা বলেন, আমি এ গাগী বহহরে ছিলাম। গাড়ি বহরটি ঘোনাপাড়া আসলে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা অতর্কিতভাবে হামলা চালায়। এতে কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের ক্রীড়া সম্পাদক শওকত হোসেন দিদার নিহত ও অনেকে আহত হন। পূর্বপরিকল্পিত হবে আওয়ামী লীগ এ হামলা চালিয়েছে।

গোপালগঞ্জ জেলা বিএনপির সদস্য এ্যাভোকেট তৌফিকুল ইসলাম তৌফিক বলেন, এটি পূর্বপরিকল্পিত হামলা। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে পথসভা শেষ করে টুঙ্গিপাড়ায় যাচ্ছিলাম। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা পরিকল্পনা করে এ হামলা চালিয়েছে। আমরা এঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত শেষে বিচারের দাবী জানাই।

জেলা বিএনপির আহবায়ক শরীফ রফিকুজ্জামান বলেন, এ ঘটনায় এখনো মামলা করা হয়নি। কারন সে একজন রাজনৈতিক কর্মী। দলীয় সিদ্ধান্তের পর মামলা দায়ের করা হবে।

তবে এ হামলার কথা অস্বীকার করে জেলা আওয়ামী লাগের দপ্তর সম্পাদক ইলিয়াস হক বলেন, গতকাল যে গটনা ঘটেছে এটার সাথে আওয়ামী লীগ কোন ভাবেই জড়িত নয়। বিক্ষুব্ধ জনতার সাথে বিএনপি নেতাকর্মীদের কথা কাটাকাটির এক পয্যায়ে এ সংঘর্ষ ঘটে। এ ঘটনায় আওয়ামী লীগসহ কোন সংঘঠনের নেতাকর্মী জড়িত নয়। বিএনপির বহিরাগতরা কর্মীরা ঘোনাপাড়ায় বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার ব্যানার ছিড়ে ফেলতে গেলে বিক্ষুব্ধ জনতা বাধা দেয়। আওয়ামী লীগের সুনাম নষ্ট করতে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় জেলা শহরের বেদগ্রাম মোড়ে পথসভা শেষ করে গাড়ি বহর নিয়ে টুঙ্গিপাড়া যাচ্ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাসহ কর্মীরা। এসময় তাদের গাড়ী বহর সদর উপজেলার ঘোনাপাড়া মোড়ে পৌছালে আওয়ামী লীগের ব্যানার ফেস্টুন ছেড়াকে কেন্দ্র করে আওয়ামী সমর্থকদের সাথে বিবাদে জড়ায় বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। এক পর্যায়ে উভয় গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ ঘটে। এতে কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের ক্রীড়া সম্পাদক শওকত হোসেন দিদার নিহত হয়। এছাড়া কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী ও তার স্ত্রী গোপালগঞ্জ জেলা মহিলা দলের সভাপতি রওশন আরা রত্নাসহ ৩৫ জন আহত হন। #