সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি :
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে আবাদি জমিতে অনাবাদি দেখিয়ে নামমাত্র টাকা দিয়ে, আবার অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ৬৫০ বিঘা জমির জায়গায় ৮৫০ বিঘা জমি দখল করে নেয় বেক্সিমকো গ্রুপের তিস্তা সোলার প্রকল্পের মাধ্যমে।
ব্যাংক, পুঁজিবাজার লুটপাট শেষে রক্ষা পায়নি উত্তর জনপদের তিস্তা পাড়ের সাধারণ খেটে খাওয়া কৃষকের জমিও। নামমাত্র মূল্যে জমি কিনলেও জমির টাকা না পাওয়া অন্তত ৫০ জন কৃষক খেটে খাওয়া মানুষ দিশেহারা। সোলার প্রকল্প থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে সরকারের কাছ থেকে টাকা বুঝে নিলেও অসহায় জমির মালিকগণকে টাকা না দিয়ে ঘুমাচ্ছে বছরের পর বছর।
সরেজমিনে তিস্তা পাড়ের এলাকা ঘুরে দেখা যায়,২০১৭ সালে উপজেলার তারাপুর ইউনিয়নের দুর্গম চর লাটশালা ও চর খোর্দা এলাকায় নির্মাণ কাজ শুরু তিস্তা সোলার লিমিটেড। বেক্সিমকো গ্রুপের এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা।ওই বছরের ২৬ অক্টোবর সরকারের সাথে চুক্তি হয়, পরবর্তীতে ২০ বছর ১৩ টাকা ৯০ পয়সা করে প্রতি ইউনিট কেনা হবে। পাঁচ বছর ধরে টানা কাজ করে বসানো হয় সাড়ে পাঁচ লাখ সোলার প্যানেল সহ ইনভার্টার।
২০২৩ সালের ৮ জানুয়ারি থেকে শুরু হয় উৎপাদন। প্রথমে ডিসি বিদ্যুৎ উৎপাদনের পর এসিতে রুপান্তরিত হয়ে চলে যায় মেইন কন্ট্রোলরুমে। এবং তারাপুর ইউনিয়নের দুর্গম চর লাটশালা ও চর খোর্দা এলাকা ঘুরে দেখা যায়- বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে দুই স্তরের কাঁটাতারের বেড়া। পূর্বানুমতি ছাড়া প্রবেশের অনুমতি নেই।তার উপরে মরার উপর খাঁড়ার ঘা, পাশের জমি গুলোতে আবাদ না হওয়ায় মাথায় হাত পড়েছে খেতে খাওয়া সাধারণ কৃষকের।
তিস্তা সোলার প্যানেলের গর্ভে নিজের দুই একর জমি আছে বলে দাবি করেন ওই এলাকার বাসিন্দা একাব্বর মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘কাক কী কমো, হামার জমি তো গেছে। তামরা আগত কাঁটাতার দিয়া জমি দখল করছে। তারপর দামদর করে। হামার মতো ম্যালা মানুষের জমি ওমার দখলত। আইজ দেয় কাইল দেয় করি টেকায় আর দেয় না।’
এলাকাবাসী দাবি করেন ক্ষুধা, মঙ্গা ও বন্যা প্রতিরোধে পানির ন্যায্য হিস্যা প্রাপ্তি ও তিস্তা মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা, বেক্সিমকো পাওয়ার কম্পানির নির্মিত তিস্তা পাওয়ার প্লান্টে প্রকল্পের স্বচ্ছতা নিরূপণে অবিলম্বে রাষ্ট্রীয় তদারকি নিশ্চিত করা। প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণকালে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে দখলকৃত ও অবমূল্যায়িত নদীবিধৌত জমির মালিকদের ন্যায্য অধিকার দ্রুত বাস্তবায়ন করা। জমি দখলের সময় যেসব খুনের ঘটনা ঘটেছে, তাতে লুটেরা সালমান এফ রহমানসহ জড়িত সবার কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা। কম্পানির উৎপাদিত বিদ্যুতের সঠিক ব্যবস্থাপনা ও স্থানীয় বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ-পরবর্তী সুষ্ঠু বণ্টনের ব্যবস্থা করা। অধিকতর বৈদেশিক বিনিয়োগের মাধ্যমে তিস্তা অববাহিকায় নদীবান্ধব শিল্পের বিকাশের মাধ্যমে প্রশিক্ষিত কর্মীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা এবং লুটেরাদের অবৈধ সম্পদের উৎস নিরূপণে রাষ্ট্রীয় জবাবদিহি নিশ্চিত করে প্রয়োজনে আদালতের সুদৃঢ় হস্তক্ষেপ কামনা করা।