আব্দুল্লাহ,জেলা প্রতিনিধিঃ বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের দুই নেতাকে গুম করার পর গভীর রাতে হাত ও চোখ বাঁধা অবস্থায় পায়ে গুলি করে পঙ্গু করার অভিযোগে র্যাব-ডিবি ও পুলিশের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন কার্যালয়ে এসে ভিক্টিম ছাত্রশিবির নেতারা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চেয়ে এ অভিযোগ দায়ের করেন।
এসময় তাদের সঙ্গে ছিলেন ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় আইন সম্পাদক আবদুল্লাহ আল নোমান ও সহকারী আইন সম্পাদক আমানুল্লাহ আদিব।
২০১৬ সালে গুম হওয়া ইসলামী ছাত্রশিবিরের যশোরের চৌগাছার নেতারা হলেন— মো. রুহুল আমিন, তিনি ছাত্রশিবিরের যশোর জেলা পশ্চিম চৌগাছা উপজেলা সাহিত্য সম্পাদক ছিলেন এবং ইস্রাফিল হোসেন চৌগাছা থানার সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন।
অভিযোগ দায়ের করার বিষয়ে ছাত্রশিবিরের আইন সম্পাদক আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার গত ১৫ বছরের শাসন আমলে ছাত্রশিবিরের ওপর সর্বোচ্চ বর্বরতা চালানো হয়। অভিযোগ দায়েরকারী দুই শিবির নেতা এই বর্বরতার শিকার। পুলিশের বর্বর নির্যাতনের কারণে তাদের পা কেটে ফেলা হয়েছে এবং কৃত্রিম পা লাগানো হয়েছে। রুহুল আমিন ও ইস্রাফিল হোসেনকে গভীর রাতে নির্জন স্থানে নিয়ে হাতে হ্যান্ডকাপ পরানো হয় এবং চোখ বাঁধা অবস্থায় তাদের দুজনের দুপায়ে গুলি করে ঝাঝরা করে দেওয়া হয়। চৌগাছা থানার ৯ জন পুলিশ ও ডিবি সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তবে তদন্তের স্বার্থে তাদের নাম প্রকাশ করা হচ্ছে না।
রুহুল আমিন ও ইস্রাফিল হোসেনের গুমের ঘটনা
মো. রুহুল আমিন ইসলামী ছাত্রশিবিরের যশোর জেলা পশ্চিম চৌগাছা উপজেলা সাহিত্য সম্পাদক ছিলেন। ইস্রাফিল হোসেন একই থানা সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন। ২০১৬ সালের ৩ আগস্ট সাংগঠনিক কাজ শেষ করে রুহুল আমিন বাড়ি যাওয়ার পথে বন্দুলীতলা শফি মল্লিকের ইটভাটার মোড় থেকে চৌগাছা থানার একজন এস আই এবং দুজন এ এস আই তাদেরকে গ্রেফতার করে চৌগাছা থানায় নিয়ে যায়। ৪ আগস্ট তাদেরকে ডিবি কার্যালয়ে পাঠানো হয়। সারাদিন জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদেরকে আবার চৌগাছা থানায় নিয়ে আসার পথে কয়ারপাড়া এলাকায় আসলে দুজনেরই দুই হাত পেছন মুড়ো করে হ্যান্ডকাপ পড়ানো হয় এবং চোখ বেঁধে ফেলা হয়। গভীর রাতে তাদের নিয়ে যাওয়া হয় বন্দুলিতলার নির্জন মাঠে। সেখানে নিয়ে দুজনের হাটুতে পুলিশ গুলি করে পা ঝাঝরা করে দেয়। সেখান থেকে তাদেরকে উপজেলা সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। রাতেই তাদের রেফার করা হয় যশোর সদর হসপিটালে। সেখানে ২দিন চিকিৎসার পর কোনও উন্নতি না হওয়ায় তাদেরকে ঢাকার পঙ্গু হসপিটালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ভর্তি হওয়ার ৭দিন পর পায়ে পচন ধরলে ডাক্তার পা কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত দেয় এবং পা কেটে ফেলা হয়। ইত্যেমধ্যে বিভিন্ন মিডিয়াতে প্রচার করে যে বন্ধুক যুদ্ধে ২ শিবির নেতা আহত। তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র মামলা রুজু করে ২ মাস চিকিৎসার পর পাঠিয়ে দেওয়া হয় যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে।