• ১১ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ২৬শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মাকে হারিয়ে ও বাবা গ্রেফতার হওয়ায় সদ্যজাত দুইবোনসহ তিন বোনকে নিয়ে বিপাকে গোপালগঞ্জের শিশু সাজ্জাদ

report71
প্রকাশিত নভেম্বর ১৩, ২০২৪, ১১:৪৭ পূর্বাহ্ণ
মাকে হারিয়ে ও বাবা গ্রেফতার হওয়ায় সদ্যজাত দুইবোনসহ তিন বোনকে নিয়ে বিপাকে গোপালগঞ্জের শিশু সাজ্জাদ

স্টাফ রিপোর্টার, গোপালগঞ্জ : দুই সন্তানকে জন্ম দিয়ে মারা গেছেন স্ত্রী। সদ্যজাত দুই সন্তানকে নিয়ে দুই চোখে যখন আধার ঠিক তখনি রাজনৈতিক হত্যা মামলায় গ্রেফতার হন গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার জামাল মিয়া। মাকে হারিয়ে ও বাবা গ্রেফতার হওয়ায় সদ্যজাত দুই বোনকে নিয়ে অথৈআ সাগরে ছোট দুই ভাই-বোন। এখন তাদের ভবিষ্যত যেন অন্ধকারে। জামাল কোন রাজনীতি না করলেও হত্যা মামলায় গ্রেফতার করার ক্ষুদ্ধ এলাকাবাসী। তবে পুলিশ বলছে স্বেচ্ছাসেক দল নেতা হত্যায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। দ্রুত তদন্ত শেষে জামালকে মুক্তি দেয়ার দাবী পরিবার ও স্থানীয়দের।

আজ বুধবার সকালে সরেজমিনে কোটালীপাড়া উপজেলার চিত্রাপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা ও জানাগেছে, গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার চিত্রাপাড়া গ্রামের ১৩ বছরের শিশু ও স্থানীয় এম এম খান উচ্চবিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র সাজ্জাদ মিয়া। বোন ফারিয়ার বয়স ৭ বছর। সদ্যজাত দুই বোনের জন্ম হওয়ার ৬ দিনে মাথায় পরপারে পাড়ি দেন মা সাথি বেগম। মাকে হারিয়ে চোখে আধার নেমে আসলেও বাবাকে নিয়ে ভবিষ্যতের দিন দেখছিলো সাজ্জাদ। তবে বাবা হত্যা মামলায় গ্রেফতার হওয়ায় সেই ভবিয্যত যেন এখন ফিকে হতে বসেছে।

গত শুক্রবার ৮ নভেম্বর রাতে নিজ বাড়ি থেকে কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের ক্রীড়া সম্পাদক শওকত আলী দিদার হত্যা মামলায় জামাল মিয়াকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপর এলাকাবাসী পুলিশের দ্বারস্থ হলেও পারেনি ছাড়াতে। পরদিন শনিবার তাকে আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগরে পাঠানো হয়। এরপর থেকে শিশু সাজ্জাতের চোখে যেন অন্ধকার নেমে আছে। ছোট তিন বোনকে নিয়ে অথৈই সাগরে নিমজ্জিত হয় সাজ্জাত। সদ্যজাত দুই বোনকে দেখাশোনা করছেন নানী ও দাদী। আর এলাকাবাসীর সহযোগীতায় চলছে এখন সাজ্জাদের পরিবার। তবে পরিবারের অভিযোগ কোন রাজনীতি না করলেও জামালকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এমনি তাকে ছাড়ানা জন্যও দাবী করা হয় পঞ্চাশ হাজার টাকা এমন অভিযোগ ভুক্তোভোগী পরিবারের।

তবে প্রতিবেশিরা বলেছে, জামাল কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নয়। তারপরেও তাকে একটি রাজনৈতিক হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। এতে উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে চরম বিপাকে পরেছে চার ভাইবোন। দ্রুত জামালের মুক্তি দাবী স্থানীয়দের। এদিকে, জামালের পরিবারের প্রতি সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে এলাকাবাসী ও রাজনৈতিক দল। তারা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় জামালের মুক্তি দাবী জানান।

ভুক্তোভোগি জামাল মিয়ার শিশু সন্তান সাজ্জাদ মিয়া জানায়, এক মাস আগে আমাদের মা মারা গেছেন। এখন পুলিশ বাবাকে ধরে নিয়ে গেছে। বাবা এখন জেলে। ঘরে অসুস্থ দাদি। আমাদের দেখাশোনা করার মতো কেউ নেই। আত্মীয় স্বজন যা দিচ্ছে তাই দিয়ে আমাদের সংসার চলছে। এখন আমার ও আমার বোনের লেখাপাড়া বন্ধ হতে বসেছে। আমরা এখন কীভাবে বাঁচব?’ কয়েক দিন পরই আমার বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হবে। আমার স্কুলের বেতন ও পরীক্ষার ফি কে দেবে? আমার এক মাস বয়সী দুই বোনের দুধের টাকা কে দেবে? আমি আমার বাবাকে ফেরত চাই।

ভুক্তোভোগি জামাল মিয়ার ভাই মনির মিয়া বলেন, আমার ভাইয়ের প্রথম সন্তান সাজ্জাদ মিয়া এম এম খান উচ্চবিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। দ্বিতীয় সন্তান ফারিয়া চিত্রাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণির ছাত্রী। এ ছাড়া এক মাস বয়সী দুটি কন্যা সন্তান রয়েছে। এই দুই কন্যা সন্তান জন্মের ছয় দিনের মাথায় জামালের স্ত্রী সাথী বেগম মারা যায়। আমার বৃদ্ধা মায়ের দেখাশোনা আমার ভাই জামালই করত। এখন জামালের চার শিশু সন্তান ও বৃদ্ধা মায়ের দেখাশোনা করার কেউ নেই। আমার ভাই বর্তমানে কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত নেই। এক সময় সে আমতলী ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক ছিল। পুলিশ কী কারণে আমার ভাইকে ধরে নিয়ে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে জেলহাজতে পাঠিয়েছে তা আমাদের জানা নেই।

প্রতিবেশী কাইয়ুম মিয়া বলেন, ‘জামাল কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নাই। তারপরেও তাকে কেন একটি রাজনৈতিক হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে জেলহাজতে পাঠানো হলো? জামালের অবুঝ চার শিশু সন্তানের দায়িত্ব এখন কে নিবে? জামালকে যেভাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ অন্যায় ও অমানবিক। তাই এই চার শিশুসন্তান ও অসুস্থ বৃদ্ধা মায়ের দিকে তাকিয়ে আমরা এলাকাবাসী জামালের মুক্তির দাবি জানাই।

স্থানীয় ইউপি সদস্য সেলিম মিয়া বলেন, জামাল মিয়াকে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে। তাকে গ্রেফতারের পর পরিবারটি এখন অন্ধকারে নিমোজ্জিত হয়েছে। সদস্য জমজ শিশুর তিন দিন পর পর দুধ প্রয়োজন হয়। জামাল মিয়া গ্রেফতার হওয়ায় শিশু দুটির জন্য দুধ কিনতে পারছে না। জামাল মিয়ার বড় ছেলে ও বড় মেয়িটির স্কুলে যাওয়া এখন বন্ধের পথে। আমরা মিথ্যা মামলা থেকে জামাল মিয়ার মুক্তি চাই।

কোটালীপাড়া উপজেলা জামায়েত ইসলামীর সাধারন সম্পাদক ফরিদ উদ্দিন মাসুদ বলেন, জামাল মিয়াকে গ্রেফতার করা হয়েছে এখন এটা আদালতের বিষয়। আমরা পরিবারটির পাশে দাঁড়াবো এবং আইনী সকল প্রকার সহযোগীতা করবো।

স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মী মিজানুর রহমান বুলু বলেন, জামাল মিয়ার সদ্যজাত দুটি সন্তানসহ ছোট চারটি সন্তান রয়েছে। তার স্ত্রীও মারা গেছে। মানবিক কারনে তাকে গ্রেফতার না করলেও পারতো। আমি মনে করি এটি মানবাধিকার লংঘন করা হয়েছে। আমি মানবাধিকার সংগঠনগুলোর প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করছি তারা যেন এই পরিবারটির পাশে দাঁড়ায়।

কোটালীপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ বলেন, জামাল মিয়া ঢাকার তেজগাঁও থানা শ্রমিক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিল বলে আমরা জেনেছি। তাই তাকে রাজনৈতিক মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে তার দুটি সদ্যজাত সন্তানসহ ছোট ৪টি সন্তান রয়েছে বলে জানা ছিলো না। #