• ১১ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ২৬শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গোপালগঞ্জে আমন ধানে নতুন আশা জাগিয়েছে ব্রি ধান-১০৩ জাত

report71
প্রকাশিত নভেম্বর ১৬, ২০২৪, ১০:৫৮ পূর্বাহ্ণ
গোপালগঞ্জে আমন ধানে নতুন আশা জাগিয়েছে ব্রি ধান-১০৩ জাত

স্টাফ রিপোর্টার, গোপালগঞ্জ : আমন ধানে নতুন আশা জাগিয়েছে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল ধানের জাত ব্রি ধান-১০৩। স্বল্প জীবনকাল সম্পন্ন এ ধানের জাতে রোগবালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণ প্রচলিত জাতের চেয়ে অনেক কম। এ জাতটি বিদ্যমান জাতের তুলনায় বিঘাপ্রতি ১ থেকে ২ মণ বেশি ফলন দিয়েছে। খড়ের উৎপাদনও বেশ ভালো। আমন মৌসুমে সবেচেয়ে বেশি ফলন দিতে সক্ষম চিকন নতুন এ জাতের ধান কৃষকের মাঠে চাষাবাদে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে আশার আলো জাগিয়েছে।

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রধান ও সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো: রোমেল বিশ্বাস বলেন, আমরা ধানের উৎপাদন বৃদ্ধি ও দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে ব্রি উদ্ভবিত উচ্চ ফলনশীল এবং হাইব্রিড ধান নিয়ে গোপালগঞ্জ, বাগেরহাট ও নড়াইল জেলায় কাজ করছি। চলতি আমন মৌসুমে ৩ জেলায় ব্রি ধান-১০৩ এর প্রদর্শনী প্লট করা হয়। গোপাগঞ্জ সদর উপজেলার বোড়াশী গ্রামের কৃষক এসএম লিয়াকত শেখের জমিতে উৎপাদিত ধান কেটে পরিমাপ করে দেখা গেছে প্রতি বিঘায় (৩৩ শতাংশ) এ ধান ২১ মণ ফলন দিয়েছে। বাগেরহাট ও নড়াইল জেলায় এ ধান আশানুরূপ ফলেছে। তাই আমন মৌসুমে দেশের ধানের উৎপাদন বৃদ্ধি ও কৃষকের আর্থসামাজিক অবস্থার বিপ্লব ঘটাবে ব্রি ধান-১০৩।

তিনি আরো বলেন, ব্রি ধান-১০৩ এ আধুনিক উফশী ধানের সব বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। ধানের দানা লম্বা ও চিকন। ১ হাজারটি পুষ্ট ধানের ওজন প্রায় ২৩ দশমিক ৭ গ্রাম। এ ধানের প্রোটিন এবং অ্যামাইলোজের পরিমাণ যথাক্রমে ৮.৩ শতাংশ এবং ২৪ শতাংশ। প্রতি হেক্টরে এ জাতটির গড় ফলন ৬ দশমিক ২ টন। গোপালগঞ্জে ফলেছে ৬ দশমিক ২৫ মেট্রিক টন। উপযুক্ত পরিচর্যা পেলে প্রতি হেক্টরে ৭ দশমিক ৯৮ টন পর্যন্ত ফলন দিতে সক্ষম। এ জাতের ধান গাছের গড় জীবনকাল ১৩০ দিন (১২৮-১৩৩ দিন)। ২০২২ সালে এ ধানের জাত অবমুক্ত করা হয়েছে। এ বছর কৃষকের মাঠে আমন সৌসুমে এ ধান সবচেয়ে বেশি ফলন দিয়েছে। এ ধান চাষাবাদ করে কৃষক ১ ফসলী জমিকে ২ ফসলী ও ২ ফসলী জমিকে ৩ ফসলী জমিতে পরিণত করতে পারেন। ফসলের নীবিড়তা বৃদ্ধি করে কৃষক লাভবান হবেন।

ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয়ের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা সৃজন চন্দ্র দাস জানান, এ জাতটি রোপা আমন মৌসুমে বৃষ্টিনির্ভর চাষাবাদ উপযোগী। এ ধানের চাষাবাদ অন্যান্য উফশী রোপা আমন ধানের মতোই। বীজ বপনের উপযুক্ত সময় ১৫ জুন থেকে ৭ জুলাই পর্যন্ত। সারের মাত্রা অন্যান্য উফশী জাতের মতোই। এ ধানের জাতে রোগবালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণ নেই বললেই চলে। তাই ধান উৎপাদনে খরচ সাশ্রয় হয়। আমরা আগামী আমন মৌসুমে কৃষককে দিয়ে এ জাতের ধান বেশি বেশি চাষাবাদ করাব। সেভাবেই বীজ উৎপাদন করা হয়েছে।

গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার বোড়াশী ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা বিনোদিনী সিকদার বলেন, আমার ব্লকে ব্রি ধান-১০৩ এর ২টি প্রদর্শনী প্লট করে ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট। প্রতিটি প্লটেই ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষক লাভজনক এ ধান চাষে আগ্রহ দেখাছেন। ব্রি বীজ দিলে আগামী বছর আমরা এ ধানের চাষাবাদ ছড়িয়ে দিতে পারব। এতে দেশের খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি কৃষক আর্থিকভাবে লাভবান হবেন।

গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার বোড়াশী গ্রামের কৃষক এসএম লিয়াকত শেখ বলেন, স্থানীয় আমনে বিঘায় ৪/৫ মণ ফলন পেতাম। সময় লাগত ১৮০ দিন। পরে কৃষি বিভাগের পরামর্শে আমানের উফশীসহ অন্যান্য জাত করেছি। সেখানে বিঘায় ১৮/২০ মণ ফলন পেয়েছিলাম। কিন্তু এ বছর ব্রি ধান-১০৩ করে বিঘায় ২২ মণ ধান পেয়েছি। সময় লেগেছে ১৩০ দিন। এ ধানের পোকার আক্রমণ হয়নি। সেচ খরচ লাগেনি। ফলনও ২ মণ বেশি পেয়েছি। কম খরচে বেশি ধান পেয়ে লাভবান হয়েছি। এ ধান কেটে জমিতে বছরে ৩ থেকে ৪ টি ফসল করতে পারছি। আমি আগামীতে এ ধান করব। বীজ পেলে আমরা প্রতিবেশীরাও এ ধান চাষাবাদ করবে বলে জানিয়েছেন।

গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাফরোজা আক্তার বলেন, ব্রি ধান-১০৩ উফশী জাত। এ ধান হাইব্রিড ধানের মতোই ফলন দিয়েছে। তাই লাভজক ব্রি ধান-১০৩ জাতের আবাদ আগামী বছর অন্তত ১০ হেক্টরে ছড়িয়ে দেব। #