ভোলা প্রতিনিধি ॥
ভোলায় ৭০ বছরের পুরানো দখলীয় বসতবাড়িতে জোরপূরবর্ক পূর্বের ঘরে ভেঙে নতুন ঘর উত্তোলন করে জমি দখলে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে আব্দুল হক কালু গংদের বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত আব্দুল হক কালু ভোলা সদর উপজেলার বাপ্তা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড চাচড়া মৃত মোতাহার হোসেনের ছেলে।
শনিবার (১৬ই নভেম্বর) দুপুর ২টার দিকে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আদলতের নিষেধাজ্ঞা থাকা ভোলা সদর উপজেলার বাপ্তা চাচড়া নামক গ্রামের মহাজনের পোল সংলগ্ন ভোলা-ইলিশ মহাসড়কের পশ্চিম পাশে ওই বিরোধীয় জমিতে বালু ভরাট ও চারপাশে টিন দিয়ে বাউন্ডারি’র কাজ চলছে। এসময় অভিযুক্তদের বিশাল একটা দলবল ওই জমির আশেপাশে ঘুরাফেরা করতে দেখা গেছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ভোলা সদর উপজেলার চাচড়া, জেএল নং৪২, এসএ খতিয়ান নং-১২৩৪, মোট জমির পরিমান ২.৫৬ একর, দাগ নং-৪২৯৫/৪২৯৬/৪২৯৭/৪৭৮৪/৪৭৮৫/৪২৭৬/৪২৭৭। এসকল খতিয়ানে রেকর্ডীয় মালিক ফাতেমা খাতুন ৫ গন্ডা অংশে ৫.৩০ শতাংশ এবং বিগত ১৮ই জুলাই ১৯৬৮ তারিখে ৩২২৮নং দলিলে রেকর্ডীয় মালিক জালাল আহাম্মদ থেকে এবং ২৩শে জুন ১৯৮৩ তারিখে ৪২৪৭নং দলিলে মোহাম্মদ আলীর ওয়ারিশ আব্দুর করিম থেকে খরিদ সূত্রে ১.১৭ শতাংশ এবং ১৬ই মার্চ ১৯৬০ তারিখে ১৫৮৪ দলিলে রেকর্ডীয় মালিক মনু মিয়া থেকে খরিদ ২.০০ শতাংশসহ খরিদ ও ওয়ারিশসহ মোট জমির পরিমান ৩০.৯৮ শতাংশ বসতবাড়ী করে ভোগ দখল করে আসছেন মৃত মোতাহার হোসেনের ছেলে আবু সাদিদ। এই বসতবাড়ির মধ্যে ৪৭৮৫ ও ৪৭৮৪নং দাগের মোট ১৫ শতাংশ জমি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে অভিযুক্তরা বিভিন্ন ভাড়াটিয়া বাহিনী নিয়ে দখলে নেওয়ার চেষ্টা করে আসছেন। পরে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে একাধিকবার সালিশিতে সকল পক্ষকের দলিল-দলিলাদি পর্যালোচনা করে পর্বের ভোগ দখলদার আবু সাদিদের পক্ষে রায় আসে। সেই রায় উপেক্ষা করে বিভিন্ন সময় দখল করার চেষ্টা করলে আবু সাদিদ বাদী হয়ে বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভোলায় ১৪৪/১৪৫ ধারায় ১১ই নভেম্বর ২০২৪ইং তারিখে মোঃ আব্দুল হক কালু, মোঃ জাকির, রিয়াজ মাতাব্বর, বিল্লাল, মোঃ হারুন ও মোঃ মনির হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
উক্ত মামলায় আদালত ওই জমিতে সকল ধরনের কার্যক্রমের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এছাড়াও নৌ-কন্টিজেন্ট কমান্ডার ভোলা বরাবর জোরপূর্বক ঘর ভাংচুর করে জমি দখলের অভিযোগে একটি অভিযোগপত্র দাখিল করেন। সেই অভিযোগের আলোকেও বিরোধীয় জমিতে সকল ধরনের কার্যক্রমের সকলের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে আগামী ১৪ই ডিসেম্বর ২০২৪ইং তারিখে উভয় পক্ষকে সকাল ১১টায় কাগজপত্রসহ উপস্থিত থাকার নির্দেশ দেয়। আদালতের নিষেধাজ্ঞার আদেশনামা ভোলা সদর থানার এএসআই গুলজার হোসেন সরেজমিনে সকলের উপস্থিতিতে সকল ধরনের কার্যক্রম বন্ধ রাখার জন্য ১১ই নভেম্বর নির্দেশা দিয়ে আসেন।
আদালত নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্বেও আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে স্থানীয় বিজেপির নেতা রিয়াজউদ্দিন ও দখলবাজের অন্যতম মূলহোতা ভোলা জজকোর্টের কর্মচারী বিল্লাল হোসেনের ক্ষমতা বলে এ ধরনের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। এ এছাড়াও প্রায় ৭০ বছর ভোগদখল মালিকানাধীন থাকা আবু সাদিদ গংদের কেউ বাধা দিতে বা এই জমির আশেপাশে আসলে কুপিয়ে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত আব্দুল হক কালু জানান, আমরা এই জমির বরিশালের একটি ডিগ্রীর রায়ের বলে মালিকানাধীন হিসেবে রয়েছি। কিন্ত দখলে যেতে পারিনি, বর্তমানে আমরা দখলে রয়েছি। আব্দুল হক কালু গংদের থেকে বর্তমানে ক্রয়সূত্রে মালিক দাবি করা বিজেপির নেতা রিয়াজউদ্দিন জানান, গত চার বছর পূর্বে ক্রয় সূত্রে মালিক থাকা সত্বেও জমিতে দখলে যেতে পারিনি। বর্তমানে আমরা আমাদের জমি বুঝে নিয়ে ঘর উত্তোলনসহ অন্যান্য কাজ শুরু করেছি। আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কাজ করার বিষয়ে জানতে চাইলে জানান, তারা জানান, আমরা নিষেধাজ্ঞার আদেশ এখন অবধি পাইনি। আপনারা যেহেতু দেখিয়েছেন আমরা এখনই কাজ বন্ধ করে রাখবো। তবে ঘটনাস্থল থেকে সাংবাদিকরা চলে আসলে ফের বিকাল পযর্ন্ত কাজ করছেন বলে খবর পাওযা গেছে।
এবিষয়ে ভোলা সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান, আদালতের নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে পুলিশ ঘটনা স্থলে বিবাদীসহ উভয়পক্ষকে জানিয়ে এসেছে। বর্তমান যে পক্ষ কাজ করবে সেই পক্ষের বিরুদ্ধে অন্য পক্ষ আদালতে অভিযোগ দাখিল করবেন, পরে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী পুলিশ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করবেন।