• ১১ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ২৬শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কারাবন্দি ছেলের ছবি বুকে নিয়ে কাঁদছেন মা, সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগে স্বামীর মুক্তি চাচ্ছেন স্ত্রী

report71
প্রকাশিত নভেম্বর ২৪, ২০২৪, ১২:২৩ অপরাহ্ণ
কারাবন্দি ছেলের ছবি বুকে নিয়ে কাঁদছেন মা, সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগে স্বামীর মুক্তি চাচ্ছেন স্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার, গোপালগঞ্জ : ‘আমার একমাত্র সন্তান কাবুলের বয়স যখন দেড় বছর তখন ওর বাবা মারা যায়। এরপর মানুষের বাড়ি বাড়ি কাজ করে ওকে বড় করে তুলেছি। দু’বছর আগে কাবুলকে বিয়ে করিয়েছি। আমার পুত্রবধু এখন ৯ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। আমি ও আমার পুত্রবধু কেয়াকে দেখার মতো কাবুল ছাড়া কেউ নেই। কাবুল একটি মিথ্যা মামলায় এখন জেলে আছে। আমরা এখন কিভাবে বাঁচবো’।

এভাবেই কান্নাজড়িত কন্ঠে কথাগুলো বলছিলেন গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার টুটাপাড়া গ্রামের মৃত হানিফ শেখের স্ত্রী শেফালী বেগম (৬০)। একমাত্র সন্তান কাবুল কারাগারে থাকায় তার ছবি বুকে নিয়ে কেঁদে কেটে খেয়ে না খেয়ে বৃদ্ধা শেফালী বেগমের এখন দিন কাটছে। সন্তানের চিন্তায় তিনি এখন পাগলপ্রায়।

অন্যদিকে শেফালী বেগমের পুত্রবধূ কাবুলের স্ত্রী কেয়া বেগম এখন ৯ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। এসময় স্বামী কারাগারে থাকায় অন্তঃসত্ত্বা এই নারী তার অনাগত সন্তানের আগমনের চিন্তায় দিন পার করছেন। সন্তান ভূমিষ্ঠের সময় কে তার পাশে থাকবে?

জানাগেছে, টুটাপাড়া গ্রামের মৃত হানিফ শেখের ছেলে কাবুল শেখ এক সময় নিষিদ্ধ ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। এরপর সে ছাত্র রাজনীতি বাদ দিয়ে বিভিন্ন এনজিও থেকে লোন নিয়ে স্থানীয় কুশলা বাজারে একটি মোবাইল ফ্ল্যাক্সিলোড ও ফটোকপির দোকান দেয়। এই দোকানের আয় থেকে বৃদ্ধা মা, অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে নিয়ে কাবুলের সংসার চলতো।

গত ২১ অক্টোবর বিকালে দোকান বন্ধ করে অসুস্থ অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে দেখার জন্য বাড়ির পথে রওনা হলে কুশলা বাজারের পাশ থেকে কোটালীপাড়া থানা পুলিশ কাবুলকে গ্রেফতার করে। ওইদিন রাতেই কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবকদলের ক্রীড়া সম্পাদক শওকত আলী দিদার হত্যা মামলায় অজ্ঞাত আসামী হিসেবে গ্রেফতার দেখিয়ে কাবুলকে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।

কাবুলের স্ত্রী কেয়া খানম বলেন, আমার স্বামীকে মিথ্যা মামলায় আটক করা হয়েছে। আমার বয়স যখন দুই বছর তখন বাবা মারা যায়। অনেক কষ্টে মা আমাকে বড় করেন। মা অসুস্থ হয়ে পড়লে আমি টিউশনি করে সংসার চালাতাম। বিয়ের পর মা আমার সাথে শ্বশুর বাড়িতে থাকেন। স্বামীর সামান্য আয়ে আমাদের সংসার চলতো। হঠাৎ করে আমার স্বামীকে হত্যা মামলার আসামী করে জেলে পাঠানোতে আমরা অসহায় হয়ে পড়েছি।

তিনি আরো বলেন, আমি এখন ৯ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। আগামী ১০ ডিসেম্বর আমার ডেলিভারী ডেট। ঘরে খাবার নেই। আশপাশের মানুষজন আমাদের কিছু কিছু খাবার দিচ্ছে। এভাবে আর কতদিন চলবো? আমার সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগে আমি আমার স্বামীর মুক্তি চাই। তা না হলে বৃদ্ধা মা, শ্বাশুড়ি ও গর্ভের সন্তান নিয়ে আত্মহত্যা করা ছাড়া আমাদের উপায় নেই।

প্রতিবেশি কৃষক মস্তফা মোড়ল বলেন, কাবুল একজন নিরীহ ছেলে। সে কখনোই কারো কোন ক্ষতি করেনি। তাকে একটি হত্যা মামলায় জড়িয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। সে কারাগারে থাকায় কাবুলের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী, বৃদ্ধা মা ও শ্বাশুড়ি এখন মানবেতর জীবনযাপন করছে। এদেরকে বাচাঁতে হলে কাবুলের মুক্তি পাওয়া প্রয়োজন।

কুশলা বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইমরুল হোসেন বলেন, কাবুল কুশলা বাজারের একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। বিভিন্ন এনজিও থেকে লোন নিয়ে ব্যবসা সে করে আসছে। বর্তমানে জেলে থাকায় কিস্তির টাকা ও দোকান ভাড়ার জন্য পাওনাদাররা কাবুলের মাকে চাপ দিচ্ছে। যেখানে কাবুলের পরিবার খেতেই পারছে না সেখানে ওরা কিস্তির টাকা ও দোকান ভাড়া পরিশোধ করবে কিভাবে?

কাবুলের আইনজীবী এ্যাডভোকেট এম এম নাসির আহমেদ বলেন, আগামী ২৮ নভেম্বর কাবুলের মামলার জামিনের শুনানী রয়েছে। আশাকরি এদিন আদালতের কাছে কাবুল সুবিচার পাবে।

কোটালীপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ আবুল কালাম আজাদ জানান, আমরা ছাত্রলীগের সাবেক নেতা কাবুল শেখকে গত ২১ নভেম্বর আটক করে গোপালগঞ্জ সদর থানায় পাঠাই। সদর থানা পুলিশ কাবুলকে স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় নেতা দিদার হত্যা মামলায় আটক দেখিয়ে জেল হাজতে পাঠিয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত ১৩ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি এস এম জিলানী তার বাবা মায়ের কবর জিয়ারতের জন্য টুঙ্গিপাড়ায় আসার পথে ঘোনাপাড়া নামক স্থানে আওয়ামী লীগ ও সহযোগি সংগঠনের নেতা কর্মীদের হামলার শিকার হয়। হামলায় তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা গুরুতর আহত এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় নেতা শওকত আলী দিদার নিহত হয়। এ ঘটনায় ১৭সেপ্টেম্বর নিহত স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা শওকত আলী দিদারের স্ত্রী রাবেয়া রহমান বাদী হয়ে গোপালগঞ্জ সদর থানায় ১১৭জনের নাম উল্লেখ ও ১হাজার ৫শত জনকে অজ্ঞাতনামা আসামী করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। #