আব্দুল্লাহ আল মানছুর,কুমিল্লা প্রতিনিধি:
কুমিল্লা চৌদ্দগ্রাম কনকাফৈত ইউনিয়নের তারাশাইল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কামরুজ্জামানের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে পরীক্ষার নামে অতিরিক্ত অর্থ আদায়, শিক্ষার্থীদের দরিদ্র তহবিলের অর্থ আত্মসাতসহ নানা নিয়োগ বাণিজ্য অনিয়ম-দুর্নীতি করেছেন অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক। আওয়ামীলীগ সরকারের ১৪ বছরে বিদ্যালয়ের প্রায় ১০ লক্ষ টাকা আত্মসাত করেছেন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ চৌদ্দগ্রাম উপজেলার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ও তারাশাইল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কামরুজ্জামান। নানা অনিয়ম, চাকরির বাণিজ্যসহ দুর্নীতি করার মাধ্যমে চৌদ্দগ্রাম উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কিনেছেন কোটি টাকার একাধিক জমি, চৌদ্দগ্রাম পৌরসভাধীন এম এম শপিং কমপ্লেক্স নামক বহুতল মার্কেটও। প্রধান শিক্ষক কামরুজ্জামানের দুর্নীতি ঢেকে রাখতে নামে মাত্র তার আপন ভাইদেরকেও এমএম শপিং কমপ্লেক্সে’র ভবন নির্মানে অংশীদার দেখানোর তথ্য পাওয়া গেছে। তারাশাইল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ চৌদ্দগ্রাম উপজেলার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক আওয়ামীলীগ সরকারের ক্ষমতা’র অপব্যবহার করে সাবেক এমপি মুজিবুল হকের যোগসাজশে মেধাবী চাকরি প্রার্থীদের বঞ্চিত করে শশুরবাড়ীর লোকদের দিয়েছেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের চাকরি। প্রধান শিক্ষকের দুর্নীতির এমন কর্মকান্ডে হতবাক অভিবাবকসহ সচেতন মহল। অভিভাবক ও সংশ্লিষ্টরা প্রতিবেদককে বলেন, এটা তো প্রধান শিক্ষক কামরুজ্জামানের ২০১৯(১) বছরের অর্থ আত্মসাত করার তথ্য। তিনি যে গত ১০ বছর বিদ্যালয়ের অর্থ আত্মসাত করেনি তার কোন নিশ্চয়তা আছে। একজন প্রতিষ্ঠান প্রধান যদি অনিয়ম দুর্নীতি করে সম্পদের পাহাড় গড়তে পারে তাহলে তার কাছ থেকে আগামী প্রজন্ম কী শিখবে। সরেজমিনে গিয়ে বিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষকদের কাছ থেকে জানা যায়-চৌদ্দগ্রাম উপজেলা’র এমপিওভুক্ত তারাশাইল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কামরুজ্জামান ২০১৯ সালের জানুয়ারী থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বিদ্যালয়ের রশিদ বইয়ের আয় হিসাব উলট পালট করছে, বিদ্যালয়ের ভবন বিক্রির রিকন্ডিশন, মনোনয়ন বিক্রয়, সকল ক্লাশের মূল্যায়ন পরীক্ষার অর্থ, ফরম ফিলাপ, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায়কৃত রেজিষ্ট্রেশন ফি ও বিদ্যালয়ের অন্যান্য নিজস্ব তহবিলের টাকা বিদ্যালয়ের নামে সোনালী ব্যাংক ও মধুমতি ব্যাংকে জমা না দিয়ে প্রধান শিক্ষক কামরুজ্জামান তার পকেট কে ভারী করার জন্য নয় লক্ষ নব্বই হাজার আটশত ছাপ্পান্ন টাকা আত্মসাত করে। বিষয়টি তৎকালীন বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি’র সভাপতি মোহাম্মদ এনামকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন শিক্ষক মৌখিক ভাবে অভিযোগ দেন। পরবর্তীতে তৎকালীন বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ এনাম তারাশাইল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের দুর্নীতির বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে তদন্ত কমিটি গঠন করেন। পরবর্তীতে বিশিষ্ট সমাজ সেবক ও বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ফারুক আহম্মদ পাটোয়ারীকে আহবায়ক করে ৪জনকে নিয়ে নিরীক্ষা উপ-কমিটি গঠন করা হয়। নিরীক্ষা উপ কমিটির আহবায়ক ফারুক আহম্মদসহ সদস্যরা হলেন-খাঁন আইয়ুব আলী, সদস্য রোকেয়া আক্তার(শিক্ষক) ও প্রধান শিক্ষক প্রতিনিধি মাহবুবুল হক ভূঁইয়া। প্রধান শিক্ষককের দুর্নীতি বন্ধ করতে ২০২০সালের জুলাই মাসে নিরীক্ষা কমিটির আহŸায়ক ও সদস্যরা কামরুজ্জামানের দুর্নীতির প্রমাণ পেয়ে স্বাক্ষরিত প্রতিবেদন দাখিল করেন। প্রতিবেদনে দেখা যায়-তারাশাইল উচ্চ বিদ্যালয়ের বিভিন্ন রশিদের নাম্বার গড়মিল রয়েছে। কিছু কিছু রশিদ বইয়ের পাতায় টাকার অংক লিখা থাকলেও অর্থের গড়মিল থাকতে দেখা গেছে। উক্ত অভিযোগের বিষয়ে জেলা শিক্ষা অফিসার রফিকুল ইসলামকে ফোন করলে তাহার ফোনটি রিসিভ করেননি। বর্তমান বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ বলেন-দুর্নীতির বিষয়টি আমার জানা নেই,তদন্ত সাপেক্ষে অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হইবে। এদিকে বিদ্যালয়ের অর্থ আত্মসাতকারী প্রধান শিক্ষক কামরুজ্জামান সাবেক রেলপথমন্ত্রীকে মুজিবুল হক এমপিকে তারাশাইল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পক্ষ থেকে স্বর্ণের নৌকা উপহার দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিদ্যালয়ের টাকা আত্মসাত ও নানা অনিয়মের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক কামরুজ্জামান বলেন,আমি কোন টাকা আত্মসাত করিনি। আমি অপরাধী হলে অবশ্যই আমি শাস্তি মেনে নিবো।