ওয়াহিদ-উন-নবী,বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি
একদিকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক শুচিতা শরমিনের উপর বিভিন্ন অভিযোগ এনে পদত্যাগের দাবি অন্য দিকে যোগদান করতে আসা নতুন নিয়োগ পাওয়া কোষাধ্যক্ষ কর্নেল (অব.) আবু হেনা মোস্তফা কামাল খান কে স্বৈরাচারের দোসর’ আখ্যা দিয়ে ক্যাম্পাস ত্যাগ করতে বাধ্য করেন শিক্ষার্থীদের একাংশ। কোষাধ্যক্ষ কে মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের একটি পক্ষ। তাঁর নিয়োগের প্রতিবাদে ও উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আজ বুধবারও ( ২৭ নভেম্বর) ক্যাম্পাসে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ হয়েছে।
উপাচার্য পদত্যাগের দাবি ও ট্রেজারারে’র যোগদানের বাঁধার মাঝে’ই আজ বুধবার দুপুর ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর রাহাত হোসাইন তার পদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন। শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে রেজিস্ট্রার বরাবর তিনি পদত্যাগপত্র জমা দেন।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, প্রক্টরের বিরুদ্ধে তাঁদের কোনো অভিযোগ নেই। নিজের নীতিনৈতিকতা বজায় রাখতে তিনি পদত্যাগ করেছেন বলে মনে করছেন শিক্ষার্থীরা। পদত্যাগ বিষয়ে সাবেক প্রক্টর রাহাত হোসাইন ফয়সাল জানান, দায়িত্ব পালনকালে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের প্রতি সবসময়ই খেয়াল রাখার চেষ্টা করেছি। আমার পায়ের নখের একটি অপারেশন হয়েছে গত সপ্তাহে ঢাকায়। যার কারণে আমার বিশ্রাম প্রয়োজন, বিশ্রামে থাকার জন্যই মূলত পদত্যাগ করা। পেছনে অন্য কোনো কারণ নেই।”
জানা যায়, গণ–অভ্যুত্থান পরবর্তী ছাত্র আন্দোলনে তোপের মুখে পড়ে গত ২০ আগস্ট পদত্যাগ করেন তৎকালীন উপাচার্য প্রফেসর ড. বদরুজ্জামান ভূঁইয়া। দীর্ঘদিন উপাচার্য শূন্য থাকার পর ২৩ শে সেপ্টেম্বর অধ্যাপক ড. শুচীতা শরমিনকে নিয়োগ দেওয়া হয়।
দায়িত্ব গ্রহণ পরবর্তী কোন সংকট কাটিয়ে উঠতে না পারলেও বিভিন্ন বিতর্কে জড়িয়ে পড়ছেন উপাচার্য শুচিতা শরমিন। শিক্ষার্থীদের ভাষ্যমতে, বিভিন্ন ফাইলপত্র সময় মতো স্বাক্ষর না করা, স্বৈরাচার সরকারের মদদপুষ্ট শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিভিন্ন দায়িত্ব অর্পণ, বেরোবির বিতর্কিত উপাচার্য অধ্যাপক ড কলিমুল্লাহ কে বিভিন্ন কমিটির সদস্য করা, জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে ধারণ না করা এবং অসহযোগিতার ফলে বিভিন্ন দপ্তর স্থবির হওয়ার ঘটনা ঘটছে।
অভ্যুত্থানে শহীদদের স্মরণে ববিতে ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজনের বক্তব্যে, আন্দোলনে শহীদ বা আহতদের কথা স্মরণ না করায় তীব্র ক্ষোভ দেখা যায় শিক্ষার্থীদের মাঝে। সর্বশেষ, গতকাল রাত ৩ টায় সহকারী রেজিস্ট্রার কে তুলে নিয়ে গিয়ে নিয়মবহির্ভূত দায়িত্ব বন্টন পত্রে স্বাক্ষর করানোর অভিযোগ ওঠে।
এদিকে, যোগদান করতে এসে বাঁধার মুখে পড়া আবু হেনা মোস্তফা কামাল খান কে নিয়ে শিক্ষার্থীরা জানান, তিনি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) থাকাকালীন সীমাহীন দুর্নীতি করেছেন, যার তথ্য-প্রমাণ বিভিন্ন গণমাধ্যমে উঠে এসেছে। এমন দুর্নীতিগ্রস্ত লোককে তাঁরা বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ হিসেবে দেখতে চান না। তাঁরা কর্নেল (অব.) মোস্তফা কামালকে আওয়ামী লীগের ‘দোসর’ হিসেবে অভিহিত করেন।
আবু হেনা মোস্তফা কামাল খান তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করে বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ না করে সরাসরি কথা বলুক। আমি তাদের সঙ্গে কথা বলতে চাই। তারা যেসব অভিযোগ তুলেছে সেগুলো যে ভিত্তিহীন, তা আমি তাদের তথ্য-প্রমাণ দিয়ে জানাতে চাই।’
সার্বিক বিষয় নিয়ে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিয়াশীল রাজনৈতিক দলগুলোর নেতৃবৃন্দ, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্ছে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। সভার সিদ্ধান্তক্রমে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য’কে আগামীকাল বেলা ১২ টার ভেতর পদত্যাগের আল্টিমেটাম ও নবনিযুক্ত ট্রেজারার কে বিশ্ববিদ্যালয়ে মেনে না নেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যা সন্ধ্যা ৬ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাউন্ড ফ্লোরে ঘোষণা করা হয়।
সার্বিক বিষয়ে জানতে উপাচার্য অধ্যাপক ড. শুচিতা শরমিনের সঙ্গে সরাসরি ও মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।