• ২৬শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ১২ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সুন্দরগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জনবল সংকট,সুচিকিৎসা সেবা বঞ্চিত লাখ লাখ মানুষ

report71
প্রকাশিত জানুয়ারি ১০, ২০২৫, ০৪:২৩ পূর্বাহ্ণ
সুন্দরগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জনবল সংকট,সুচিকিৎসা সেবা বঞ্চিত লাখ লাখ মানুষ

 

আসাদুল ইসলাম, গাইবান্ধা

জনবল সংকটের কারণে চিকিৎসা সেবা চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। এর ফলে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন দূর দূরান্ত থেকে চিকিৎসা নিতে আসা সাধারণ রোগীরা। সুচিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে লাখ লাখ মানুষ।

দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়েও দেখা পাচ্ছেন না কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসকের। এক রোগের চিকিৎসা নিতে এসে অন্য রোগের চিকিৎসককে দেখাতে বাধ্য হতে হচ্ছে তাদের।

১টি পৌরসভা ও ১৫টি ইউনিয়নের প্রায় ৬ লক্ষ মানুষের চিকিৎসা সেবার জন্য আশির দশকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি নির্মিত হলেও ২০১৪ সালে তা
৫০ শয্যা বিশিষ্ট বেডে উন্নীত হয়। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে দৈনিক গড়ে প্রায় ৪’শ থেকে ৫’শ জন রোগী চিকিৎসা নিতে আসে। এছাড়াও ৫০টি বেডেই রোগী ভর্তি থাকে সবসময়। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রতিষ্ঠার ৪১বছর পর অপারেশন থিয়েটার চালু হলেও বর্তমানে চিকিৎসক অভাবে তা আবারও বন্ধ রয়েছে।রোগীর চাপ সামলাতে রীতিমত হিমশিম খেতে হচ্ছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তৃপক্ষকে।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ইউনিয়ন সাব সেন্টারসহ মেডিকেল অফিসারের পদ ২৪টি থাকলেও বর্তমানে রয়েছে ৯জন।এর মধ্যে সংযুক্তিতে আছে ৩জন ,মাতৃকালীন ছুটি ও ট্রেনিংয়ে রয়েছে ২জন। বাস্তবে কর্মরত রয়েছে ৪জন। খালি পদ রয়েছে ১৫টি।
কনসালটেন্ট মোট ১১জনের পদ থাকলেও কর্মরত রয়েছে ২জন এর মধ্যে একজন সংযুক্তিতে রয়েছে সদর হাসপাতালে। খালি পদ রয়েছে ৮টি।
ডেন্টাল সার্জন ১জন থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে সেই পদটিও রয়েছে খালি।
উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসারের ১৭জনের পদ সংখ্যা থাকলেও মাত্র ১জন কর্মরত রয়েছে , তিনিও এমাসেই অবসরে যাবেন। বর্তমানে ১৬টি খালি পদ রয়েছে।

এছাড়া দ্বিতীয় তৃতীয় শ্রেণীর কর্মকর্তা-কর্মচারীর মোট ১’শ ৮৬ পদ‌ সংখ্যা থাকলে বর্তমানে কর্মরত রয়েছে ৯৬জন। বাকি ৯০টি পদ খালি রয়েছে।

সরজমিনে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ঘুরে দেখা গেছে, রোগীদের দীর্ঘ লাইন থাকলেও অনেকেই তাদের কাঙ্খিত ডাক্তরকে দেখাতে না পেরে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। পুরুষ রোগী থেকে নারী রোগীর সংখ্যা তুলনামূলভাবে বেশি। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে আছেন অনেক মুমূর্ষু রোগী। অপরদিকে জনবল সংকটে স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত হচ্ছে। রোগী অনুপাতে চিকিৎসক স্বল্পতা, ওষুধ সংকটে তেমন সন্তোষজনক সেবা পাচ্ছেন না চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনেরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক রোগী জানান, জনবল সংকটে এখানে ঠিকমত ডাক্তার থাকেনা। সকালে একবার ডাক্তার রাউন্ড দেয়। আর সারাদিন কোন ডাক্তার আসেনা। মাঝে মাঝে নার্স এসে খোঁজ খবর নেন।

একজন রোগীর স্বজন বলেন, একদিন আগে ভর্তি হয়েছি এখনো ডাক্তার দেখেনি। একজন নার্সকে ডাক্তারের কথা বলাতে তিনি উচ্চ বাক্যে বলেন ডাক্তারের কাছে যান আপনারা, কোনখানে ভর্তি হয়েছেন সেখানে যান।

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলার যুগ্ম আহ্বায়ক নুর আলম বলেন , চিকিৎসক সংকটের কারণে সুন্দরগঞ্জের প্রায় ৬লক্ষ মানুষ চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অনেক রোগী সেবা না পেয়ে ঘুরে যাচ্ছে। অনেকে উন্নত সেবা না পেয়ে বিভাগীয় বা জেলা শহরে যাচ্ছেন। এছাড়াও আমরা কিছু দিন আগে যে সুফলটা পাচ্ছিলাম সিজার করা , চিকিৎসক অভাবে সেটাও ব্যহত হচ্ছে। আমরা চাই দ্রুত চিকিৎসক সংকটে নিরসনে সেবার মান ফিরে আসুক।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ তারিকুল ইসলাম তারেক জানান, আমাদের হাসপাতালে এখন মাত্র ৪জন ডাক্তার। আমাদের উপজেলা অনেক বড়। ১পৌরসভা ও ১৫ টি ইউনিয়নের প্রায় ছয় লক্ষ মানুষের বসবাস এখানে। এই চারজন ডাক্তার দিয়ে হাসপাতাল চালানো খুবই কষ্টকর ও স্বাস্থ্য সেবার মান নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়েছে। আউটডোর ও ইমারজেন্সি সেবা দিতে আমরা হিমশিম খাচ্ছি। এতে স্বাস্থ্যসেবার ব্যাঘাত ঘটছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদের আকুল আবেদন হাসপাতালটিতে বেশ কিছু ডাক্তার প্রদায়ন করলে আমরা ইনশাল্লাহ আমরা আমাদের সর্বোচ্চটা দিয়ে কাঙ্কিত সেবা নিশ্চিত করবো।

এপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ দিবাকর বসাক জানান, আমাদের সুন্দরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি গাইবান্ধা জেলার উত্তর-পূর্বের তীরবর্তী একটি সরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান।এই উপজেলার প্রায় ৬ লাখ জনগোষ্ঠীর জন্য।সবাই এই ৫০ বেড হসপিটালে সেবা নিতে আসে।আমি সবেমাত্র যোগদান করেছি।তবে হাসপাতালে সব পদেই লোকবল সংকটের কারণে চিকিৎসা সেবা কিছুটা ব্যহত হচ্ছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট চাহিদা পাঠানো হয়েছে। আশা করি দ্রুত এসমস্যা সমাধানে হাসপাতালে কাঙ্ক্ষিত সেবার মান ফিরে আসবে।
জেলার সিভিল সার্জন ডাঃ কানিজ সাবিহা মুঠোফোনে বলেন- সারা বাংলাদেশের হাসপাতালগুলোর চিত্র প্রায় একই। এই মুহূর্তে কেবলমাত্র নতুন নিয়োগের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান সম্ভব।