• ১৬ই এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ৩রা বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ


ক্যান্সার রোগীরা পাচ্ছে না রেডিও থেরাপী

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২৫, ০৭:৪৩ পূর্বাহ্ণ
ক্যান্সার রোগীরা পাচ্ছে না রেডিও থেরাপী

শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

★ এরিনা রায়
বিশ্বব্যাপী ক্যান্সার একটি উল্লেখযোগ্য জনস্বাস্থ্য সমস্যা। মৃত্যুর কারণ হিসেবে এর অবস্থান তৃতীয়। বাংলাদেশেও এর ব্যতিক্রম নয়। স্বাভাবিক কারণেই ক্যান্সার রোগীদের মানসিক স্বাস্থ্যঝুঁকি অনেক বেশি। উন্নত দেশগুলোতে গবেষণায় দেখা গছে, প্রায় ৩০ শতাংশের অধিক ক্যান্সার রোগী বিষন্নতা, উদ্বেগসহ বিভিন্ন মানসিক রোগে আক্রান্ত থাকে। ২০২৪ সালে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ক্লিনিকাল অনকোলজি বিভাগে আগত রোগীদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর একটি গবেষণা পরিচালিত হয়। গবেষণায় ক্যান্সার রোগীদের মধ্যে তিনটি প্রধান মানসিক সমস্যার জন্য দায়ী কারণগুলো চিহ্নিত করার চেষ্টা করা হয়। এ গবেষণায় দেখা যায় শতকরা ৬৬ ভাগ ক্যান্সার রোগী বিষন্নতায় ভুগছেন। এছাড়া ৫৭ ভাগ রোগী উদ্বেগে ভুগছেন। এমনকি শতকরা ৪৪ ভাগ রোগী মানসিক চাপে ভুগছেন।

ক্যান্সার রোগীদের চিকিৎসায় দেরির কারণ:
গবেষণায় দেখা গেছে, শতকরা ৬৯ ভাগ রোগী আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করতে পারছে না। শতকরা ৬৩ ভাগ রোগী সচেতনতার অভাবে দুকেদুকে ভুগছেন। ৫০ ভাগ হোমিও বা কবিরাজি চিকিৎসা গ্রহণ করে। শতকরা ৪১ ভাগ চিকিৎসক ভুল রোগ নির্ণয় করে। মানসিক সমস্যায় ভোগেন ৩১ ভাগ রোগী। পারিবারিক অসহযোগিতায় ২২ ভাগ চিকিৎসা সুবিধার অভাবে ১৬ ভাগ যাতায়াত সমস্যার অভাবে ৬ ভাগ রোগী ভুগছেন।

শেবাচিমে প্রতিদিন গরে ১৫ রোগী চিকিৎসা নেয়:
বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২৭ টি ক্যান্সার বেড রয়েছে। ২০২৪ সালে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ৪ হাজার ৮০১ জন রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। প্রতিদিন ১৫ জন রোগী চিকিৎসা নেয়। এছাড়া ২০ থেকে ২৫ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি থাকে। ওই বছর ১৮৬০ জন রোগীকে কেমোথেরাপি দেয়া হয়েছে। এছাড়া ২৬০ রোগীকে ডে-কেয়ার সেবা দেয়া হয়েছে।

রেডিও থেরাপি নেই ১০ বছর:
ক্যান্সার আক্রান্ত ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ রোগীদের রেডিও থেরাপী দিতে হয়। কিন্তু ২০১৫ সালের পর থেকে বরিশাল শেরে-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল রেডিও থেরাপি চিকিৎসা বন্ধ হয়ে যায়। ফলে এই হাসপাতালের ৬০ ভাগ রোগীকে অন্যত্র চিকিৎসা নেয়। এছাড়া ফ্রোজেন সেকশন সুবিধাও নেই বরিশালে। দেশের অন্যত্র হাসপাতাল চিকিৎসা নিতে হলে লম্বা সিরিয়াল এবং অধিক ব্যয়বহুল। তাই চিকিৎসার অভাবে ক্যান্সার রোগীদের একটি অংশ মারা যায়।
হাসপাতালের অনকোলজি বিভাগের চিকিৎসক ফারহানা খান বলেন, ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ৩৬ শতাংশ স্তান ক্যান্সারে আক্রান্ত। আর পুরুষদের ক্ষেত্রে ৩২ শতাংশ ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত। এছাড়া মুখগহ্বর ও গলার ক্যান্সার রয়েছে। আরো আছে জরায়ুমুখ ক্যান্সার। শেবাচিম ছাড়া জেলা পর্যায়ে ক্যান্সার শনাক্তকরণের জন্য স্ক্রিনিং পরীক্ষাসহ কোন ব্যবস্থা নেই। জানতে চাইলে রেডিওথেরাপি বিভাগের সহকারি অধ্যাপক মো. মহসীন হাওলাদার বলেন, যদি জেলা কিংবা উপজেলা পর্যায়ে ক্যান্সার চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হতো, তাহলে রোগীদের ভোগান্তিও কমে যেত। এ কারণে প্রতি বছর বরিশাল শের-ই বাংলা হাসপাতালে রোগী বৃদ্ধি পায়। এসব রোগীদের প্রায় ৬০ শতাংশকে রেডিও থেরাপি দেয়ার প্রয়োজন। কিন্তু রেডিওথেরাপি যন্ত্রটি নষ্ট থাকায় রোগীদের থেরাপি দেয়া যাচ্ছে না। তাদের ঢাকায় পাঠানোর পরামর্শ দেয়া হলেও অর্থের অভাবে অনেকেই যেতে পারেন না।
হাসপাতালের ক্লিনিক্যাল অনকোলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহকারী অধ্যাপক ডা. আ.ন.ম মঈনুল ইসলাম বলেন, ২০২৪ সালে প্রায় ৫ হাজার ক্যান্সার রোগীকে সেবা দেয়া হয়েছে। এক হাজার ৮৬০জনকে কেমোথেরাপি দেয়া হয়েছে। কিন্তু ক্যান্সারে আক্রান্ত প্রায় ৬০ ভাগ রোগীকে রেডিও থেরাপী দিতে হয়। যা এখানে নেই। প্রতি বছরই আমরা স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ে চিঠি দেই। কিন্তু মেশিনটির দাম বেশি হওয়ায়, তা সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না।

তবে আশার বাণী হচ্ছে, শেবাচিম হাসপাতালের পাশেই গড়ে উঠছে একটি পূর্ণাঙ্গ ক্যান্সার হাসপাতাল। এই হাসপাতালে সব ধরনের আধুনিক সুযোগ-সুবিধা থাকবে। অনকোলজি, রেডিওথেরাপি, ব্রেকেথেরাপি এবং অনকোসার্জারিও থাকবে। শয্যাসংখ্যা প্রাথমিকভাবে ৪৬০ বলা হলেও তা কমে আসতে পারে। একই ভবনে কিডনি রোগীও থাকবে। চলতি বছরই এটি চালু হওয়ার কথা রয়েছে।