• ১৭ই এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ৪ঠা বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ


গোপালগঞ্জে অনুষ্ঠিত হলো শত বছরের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী চড়ক চড়ক ঘুল্লী

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত এপ্রিল ১৭, ২০২৫, ০৯:৫৯ পূর্বাহ্ণ
গোপালগঞ্জে অনুষ্ঠিত হলো শত বছরের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী চড়ক চড়ক ঘুল্লী

স্টাফ রিপোর্টার, গোপালগঞ্জ : নর্ববর্ষ ও চৈত্র সংক্রান্তি উপলক্ষে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার বড় ডোমরাশুর গ্রামে অনুষ্ঠিত হলো সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শত বছরের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী চড়ক চড়ক ঘুল্লী। তবে এ চড়ক ঘুল্লী মূল আকর্ষণ ছিলো অষ্টক ঘুল্লী। যা দেখতে ভীড় করে হাজার হাজার মানুষ। আর এ চড়ক ঘুল্লীকে কেন্দ্র করে বসে গ্রামীন মেলা।

জানাগেছে, পঞ্জিকা মতে বাংলা বছরের চৈত্র মাসের শেষে চৈত্র সংক্রান্তিতে চড়ক ঘুল্লীর আয়োজন করা হয়ে থাকে। তবে এবার বাংলা নববর্ষে আনন্দ দিতে বৈশাখের তৃতীয় দিন বুধবার (১৬ এপ্রিল) বিকালে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার বড় ডোমরাশুর গ্রামের পঞ্চপল্লী বড় ডোমরাশুর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আয়োজন করা হয় চড়ক ঘুল্লীর। এসময় ঢাকের বাদ্যের তালে মুখোরিত হয়ে ওঠে মাঠ। তবে এ মেলার মূল আকর্ষণ ছিল অষ্টক ঘুল্লী। এ ঘুল্লতে অংশ নেয়া ৮ যুবকের পিঠে লোহা দিয়ে তৈরী দুটি করে বড়শি ফোরানো হয়। পরে মাঠের মাঝখানে গাছের লম্বা খুঁটির আট মাথায় রশি দিয়ে বেঁধে ঝুলিয়ে দেয়া হয় আট যুবককে। পরে রশি দিয়ে বেঁধে ঘুরানো হয় কয়েক দফা। বিকাল থেকে গোধূলী পর্যন্ত চলে এ চড়ক ঘুল্লী। পূন্য লাখের আশায় এ চড়ক ঘুলি¬তে অংশ নেন তারা।

এ চড়ক মেলা দেখতে গোপালগঞ্জসহ মাদারীপুর, খুলনা, বাগেরহাট, পিরোজপুরসহ বিভিন্ন এলাকার শিশু-নারীসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের হাজার হাজার মানুষ ভীড় জামায়। অনুষ্ঠান স্থল পরিনিত হয় মিলন মেলায়। এ চড়ক ঘুল্লীকে কেন্দ্র করে বসে গ্রামীন মেলা। খাবার, গহনা, মিষ্টির দোকান ও মাটির খেলনাসহ বসে বিভিন্ন দোকান।

চড়ক ঘুল্লীতে অংশ নেয়া যুবক অর্ঘ্য রায় বলেন, পূণ্য লাভ, দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনায় এ চড়ক ঘুল্লিতে অংশ নেন তারা। তবে এভাবে ঘুড়ানোতে ব্যাথ বা শারীরিক সমস্যা হয় না বলেও জানায় ওই যুবক।

অপর চড়ক ঘুল্লীতে অংশ নেয়া যুবক সজল রায় বলেন, এতে অংশ নিলে আমাদের কোন ব্যাথা লাগে না। ঈশ্বরের আশির্বাদ লাভের আশায় আমায়ং অংশ নিয়ে থাকি। এতে আমরা যেমন আনন্দ পাই তেমনি দর্শনার্তীদের আনন্দ দিয়ে থাকি।

চড়ক ঘুল্লীতে দেখতে আসা বাপ্পী দাস বলেন, আমি বিভিন্ন জায়গায় ২ বা ৪ জনের চড়ক ঘুল্লি দেখেছি। তবে এবারই প্রথম এখানে ৮ জনের চড়ক ঘুল্লি দেখলাম। দেখে খুব ভালো লাগলো। আগামীতেও এমন আয়োজনের দাবী জানাই।

চড়ক ঘুল্লীতে দেখতে আসা স্কুল শিক্ষার্থী সাথী বিষ্বাস বলেন, এবারই প্রথম আমি চড়ক ঘুল্লি দেখতে আসলাম। দেখে খুব ভালো লাগছে। তবে এখানে মূল আকর্ষণ ছিল ৮ জনের চড়ক ঘুল্লি। প্রখমবার দেখে কতটা আনন্দ পেলাম তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না।

চড়ক ঘুল্লীতে দেখতে আসা বয়োবৃদ্ধ সুশীল বৈড়াগী বলেন, আমরা যখন চড়ক ঘুল্লি দেখতাম তখন ২ বা চার জনের ঘুল্লি হতো। আজ এখনে ৮জনের ঘুল্লি দেখে খুব ভালো লাগলো। এছাড়া এ চড়ক ঘুল্লিকে কেন্দ্র করে মিলন মেলায় পরিনত হয। পরিবারের সবাই একসাথে এসে এ চড়ক ঘুল্লি উপভোগ করে।

চড়ক ঘুল্লী ও মেলার আয়োজক উজ্জ্বল ভক্ত জানান, দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনা করে দীর্ঘ বছর ধরে আমরা চড়ক পূঁজা ও চরক ঘুল্লীর আযোজন করে আসছি। এটা আমাদের গ্রামের একটি ঐতিহ্য। এ মেলাটি শুধু হিন্দু ধর্মাম্বালম্বীরাই নয় অনান্য ধর্মের লোকজন চরক ঘুল্লী দেখতে আসেন। সৃষ্টি হয় ধর্মীয় সম্প্রিতির বন্ধন। #