• ১১ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ২৬শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

স্বাস্থ্য সেবায় আমুল পরিবর্তনের আশা গোপালগঞ্জবাসীর গোপালগঞ্জে শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ ২৫টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন

report71
প্রকাশিত নভেম্বর ১৪, ২০২৩, ১০:৪৭ পূর্বাহ্ণ
স্বাস্থ্য সেবায় আমুল পরিবর্তনের আশা গোপালগঞ্জবাসীর গোপালগঞ্জে শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ ২৫টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন

স্টাফ রিপোর্টার, গোপালগঞ্জ : গোপালগঞ্জে শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মেডিক্যাল কলেজ, ও নার্সিং কলেজসহ ২৫ টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ ১১ বছর পর বহুল কাঙ্খিত এ মেডিকেল কলেজের উদ্বোধন করা হলো। উদ্বোধনের ফলে জেলার স্বাস্থ্য সেবায় আমুল পরিবর্ত আসবে। সেই সাথে বের হয়ে আসবে মেধাবী ডাক্তার ও নার্স। ফলে ভোগান্তি ছাড়াই সহজেই স্বাস্থ্য সেবা নিতে পারবে সাধারন রোগীরা। শুধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নয় ২৫ টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করায় জেলার মানুষ ব্যাপক সুবিধা পাওয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়েছে গোপালগঞ্জবাসী।

জানাগেছে, ২০১২ সালে গোপালগঞ্জ শহরের নবীনবাগ এলাকায় ৩৬ একর জমির উপর ৬৬৮ কোটি ৮২ লাখ ৭৯ হাজার টাকায় স্থাপত্যশৈলী দিয়ে নির্মাণ করা হয় দৃষ্টিনন্দন ৫০০-শয্যাবিশিষ্ট শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ, ও নার্সিং কলেজ। প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ ১১ বছর পর আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টায় গণবভন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বহুল কাঙ্খিত এ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

গোপালগঞ্জে ২৫০-শয্যাবিশিস্ট জেনারেল হাসপাতাল থাকলেও কাঙ্খিত স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হতে হতো জেলাবাসীর। সেই সাথে রয়েছে অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ ও চিকিৎসক সংকট। ফলে চিবিসা সেবা না পেয়ে মুমূর্ষ রোগীদের ঢাকা-খুলনা-ফরিদপুর-রবিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হতো। সেখানে শেখ সারেয়া খাতুন মেডিকেল কলেজের উদ্বোধন হওয়ায় সহজেই এ হাসপাতাল থেকে স্বাস্থ্য সেবা নিতে পারেন রোগীরা। এ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে স্বাস্থ্য সেবা নেয়ার পাশাপশি কমে অাসবে রোগী মত্যুর হার। এমনিক মেডিকেল কলেজ ও নার্সিং কলেজ থেকে বের হয়ে আসবে মেধাবী চিকিৎসক ও নার্স। এতে জেলার স্বাস্থ্য সেবায় আমুল পরিবর্তন আসবে। ফলে সহজেই গোপালগঞ্জসহ আশপাশের জেলার মানুষেরা স্বাস্থ্য সেবা নিতে পারবেন, কমে আসবে ভোগান্তি।

এ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রয়েছে মেডিসিন, পিড্রিয়াটিক, দন্ত, ইএনটি, শিশুসহ বিভিন্ন বিভাগ। রয়েছে ১০ তলা হাসপাতাল ভবন, ৬ তলাবিশিষ্ট একাডেমিক ভবন, দুটি হোস্টেল ভবনসহ ৫২টি ভবন। স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে এ মেডিকেল কলেজে স্থাপন করা হয়েছে অত্যাধুনিক মানের ১৬ অপারেশন থিয়েটার, ১৪টি আইসিউ, ৭২টি কেবিনসহ উন্নমানের স্বাস্থ্য সেবার সকল যন্ত্রপাতি।

এছাড়া উদ্বোধনকৃত প্রকল্পের মধ্যে আরও রয়েছে, জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়, কোটালীপাড়ার চৈতারবাড়ী কমিউনিটি ক্লিনিক, জেলা সমাজসেবা কমপ্লেক্স, ইসলামিক ফাউন্ডেশন কমপ্লেক্স, গোপালগঞ্জ ২৫০-শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ১০ শয্যা বিশিষ্ট আইসিইউ, কোটালীপাড়ার রামশীল কলেজের চারতলা একাডেমিক ভবন, কাজী মন্টু কলেজের চারতলা একাডেমিক ভবন, নেছারউদ্দিন তালুকদার স্কুল অ্যান্ড কলেজের চারতলা একাডেমিক ভবন, রামশীল কলেজের পাঁচতলা ছাত্র হোস্টেল, রাধাগঞ্জ দাখিল মাদরাসার চারতলা একাডেমিক ভবন, কুশলা নেছারিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসা চারতলা একাডেমিক ভবন, টুঙ্গিপাড়া সরকারি শেখ মুজিবুর রহমান কলেজের চারতলা একাডেমিক ভবন, খান সাহেব শেখ মোশাররফ হোসেন স্কুল অ্যান্ড কলেজের চারতলা একাডেমিক ভবন, বালাডাঙ্গা এস এম মুসা উচ্চ বিদ্যালয়ের চারতলা একাডেমিক ভবন, গিমাডাঙ্গা নেছারিয়া ফাজিল মাদরাসার চারতলা একাডেমিক ভবন, মুকসুদপুরে ফারুক খান উচ্চ বিদ্যালয়ের চারতলা একাডেমিক ভবন, সূর্যকান্ত জানকী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের চারতলা একাডেমিক ভবন, গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার পল্লীমঙ্গল ইউনাইটেড একাডেমির চারতলা একাডেমিক ভবন, হাজি খোরশেদ সপ্তপল্লী উচ্চ বিদ্যালয়ের চারতলা একাডেমিক ভবন, শহীদ গোলদার উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের চারতলা একাডেমিক ভবন, সালেহা কামিল মাদরাসার চারতলা একাডেমিক ভবন, টুঙ্গিপাড়া বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, সরকারি শিশু পরিবারে ২৫ শয্যা বিশিষ্ট শান্তি নিবাস ও শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র।

গোপালগঞ্জ শহরতলী নবীববাগ এলাকা রবিন শেখ বলেন, এ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে উদ্বোধন করায় আমরা এখন উন্নত স্বাস্থ্যসেবা পাবো। রোগীদের নিয়ে ঢাকা-খুলনা ছুটতে হবে না। অনেক মুমুর্ষ রোগীদের ঢাকা নিয়ে যাবার পথেই মারা যেতেন। ফলে এখন আর কোন রোগী মারা যাবেন না।

একই এলাকার সোহেল সিকদার বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিকতায় এই মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল তৈরী হয়েছে। এখান থেকে রোগীরা স্বাস্থ্য সেবা পাবেন। এছাড়া আরো ২৪টি প্রকল্পের উদ্বোধন করেছেন। ফলে এ জেলার মানুষেরা উন্নতসেবা পাবে। এজন্য আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাই।

শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজের ৫ম বর্ষের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান তাজিম বলেন, আমাদের অনেক ইচ্ছা ছিল দ্রুত এ মেডিকেল কলেজটি উদ্বোধন হবে। সেই ইচ্ছা পূরণ হলো। এতে আমরা শিক্ষার্থীরা খু্বই আনন্দিত। আমরা গর্বিত এমন একটি সুন্দর কলেজে পড়তে পারছি।

গোপালগঞ্জ শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজের প্রকল্প পরিচালক ডা: অসিত কুমার মল্লিক বলেন, বহিবিশ্বে যে ধরনের হাসপাতাল তৈরী হয় সেই ধরনের স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে এই হাসপাতালটি তৈরী করা হয়েছে। এই হাসপাতাল থেকে গোপালগঞ্জসহ আশপাশের জেলার রোগীরা উন্নত স্বাস্থ্যসেবা নিতে পারবেন। তবে এখানে চিকৎসক সংকট রয়েছে। আশা করবো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চিকিৎসক সংকট দূর করতে পয্যাপ্ত চিকিৎসক নিয়োগ দিবেন।

গোপালগঞ্জ স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী কেএম হাসানুজ্জামান বলেন, গোপালগঞ্জ শহরের নবীনবাগ এলাকায় ৩৬ একর জমির উপর ৬৬৮ কোটি ৮২ লাখ ৭৯ হাজার টাকায় স্থাপত্যশৈলী দিয়ে নির্মাণ করা হয় দৃষ্টিনন্দন ৫০০-শয্যাবিশিষ্ট শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ, ও নার্সিং কলেজ। এ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রয়েছে মেডিসিন, পিড্রিয়াটিক, দন্ত, ইএনটি, শিশুসজ বিভিন্ন বিভাগ। রয়েছে ১০ তলা হাসপাতাল ভবন, ৬ তলাবিশিষ্ট একাডেমিক ভবন, দুটি হোস্টেল ভবনসহ ৫২টি ভবন। স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে এ মেডিকেল কলেজে স্থাপন করা হয়েছে অত্যাধুনিক মানের ১৬ অপারেশন থিয়েটার, ১৪টি আইসিউ, ৭২টি কেবিনসহ উন্নমানের স্বাস্থ্য সেবার সকল যন্ত্রপাতি।

গোপালগঞ্জ শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা: মোহাম্মদ জাকির হোসেন বলেন, ২০১২ সালে থেকে সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ইতিমধ্যে ৬৫জন করে ৭টি ব্যাজের মাধ্যমে ৫ শতাধিক ডাক্তার বের হয়েছে। আগামী বছর থেকে প্রতি ব্যাচে আরো ৬৫ জন করে মোট ১২৫ জন করে শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পারে। এছাড়া নার্সিং কলেজে থেকে মেধাবী নার্স বের হয়ে আসবে। এতে গোপালগঞ্জ নয় সারা বাংলাদেশে স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত হবে।

গোপালগঞ্জ শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক, ডা: মোহাম্মদ মনোয়ার হোসেন বলেন, এ হাসপাতালে রয়েছে ৫০০ শয্যা। গোপালগঞ্জের ৯ লক্ষ মানুষসহ আশপাশের ৮টি জেলাসহ মোট ৩৯ লক্ষ মানুষ এখান থেকে স্বাস্থ্য সেবা পাবেন। এখান থেকে মেধাবী ভাল চিকিৎসক ও নার্স বের হয়ে আসার পাশাপাশি সাধারন মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত হবে বলে মনে করেন এই পরিচালক। #