আপডেট: এপ্রিল ২২, ২০২০
দীর্ঘ লকডাউনে দেশের সব কর্মকান্ড স্থবির হয়ে যাওয়ায় ধেয়ে আসছে গভীর সংকট।
সংকটে বিপর্যস্ত হতে পারে সামাজিক জীবনও। অবনতি ঘটতে পারে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির।
সর্বগ্রাসী এই ভবিষ্যৎ সংকট থেকে মুক্তি পেতে নতুন করে ভাবছে সরকার।
পরিকল্পনা করা হচ্ছে স্বাস্থ্য উপযোগী পরিবেশ বজায় রেখে আগামী মাস থেকে শিল্পকারখানা সীমিত আকারে চালুর।
ব্যাংকিং খাতে স্বাভাবিক গতি রাখা নিয়েও চিন্তা করা হচ্ছে।
খেটে খাওয়া মানুষের কথা মাথায় রেখে আর্থিক কর্মকান্ড চালু করতেই সরকারের এ উদ্যোগ।
ফলে আগামী মাস থেকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে লকডাউন শিথিল করা হতে পারে।
জানা গেছে, গত কিছু দিন থেকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ত্রাণবাহী গাড়ি লুটের ঘটনা ঘটেছে।
খাদ্যের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে সাধারণ মানুষ। বেতন-ভাতার দাবিতে গার্মেন্ট শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন।
একই সঙ্গে কৃষিপণ্য সরবরাহে মারাত্মক সমস্যা দেখা দিয়েছে।
কৃষিপণ্য পরিবহন করা যাচ্ছে না। ফলে কৃষক বঞ্চিত হচ্ছে ন্যায্যমূল্য থেকে।
সিরাজগঞ্জ, পাবনাসহ বিভিন্ন এলাকায় দুগ্ধ খামারিরা দুধ বিক্রি করতে পারছে না।
বিপাকে পড়েছেন পোলট্রি খামারিরা।
উৎপাদিত মুরগি, ডিম বিক্রি করা যাচ্ছে না, পরিবহন সংকটে কোথাও যানবাহন পাওয়া যায় না।
এসব ঘটনা চিন্তায় ফেলেছে সাধারণ মানুষকে।
সরকার এসব পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে করোনা মোকাবিলায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিয়ম মেনে শিল্পকারখানা সীমিত আকারে চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য সবকিছু বন্ধ থাকায় শ্রমজীবী মানুষ চরম সংকটে পড়েছে।
ব্যাংকিং-ব্যবস্থা পুরোপুরি চালু করতে না পারলে চরম বিপর্যয় নেমে আসতে পারে।
তাই সরকার অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নতুন এ চিন্তাভাবনা করছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, স্বাস্থ্য নীতিমালার সঙ্গে সংগতি রেখে আর্থিক খাত নিয়ে ভাবতে হবে।
সীমিত হলেও আর্থিক খাত চলমান রাখতে সবকিছু চালু করা উচিত; যা সার্বিকভাবে ইতিবাচক হবে বলে অনেকে মনে করছেন।
এভাবে সবকিছু বন্ধ থাকলে আইনশৃঙ্খলার অবনতি হতে পারে।
চুরি, ডাকাতি বাড়তে পারে। সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ বেশি সংকটে আছে।
বিশৃঙ্খলা বেশি হলে তা আরও সংকট তৈরি করবে।
আর্থিক খাত বিশেষ করে রপ্তানি শিল্প, নিত্যপ্রয়োজনীয় উৎপাদিত শিল্পকারখানা, কৃষিপণ্য উৎপাদন, পরিবহন খাত চালু করা উচিত।
তবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে বিশ্বের অন্যান্য দেশের কর্মকান্ড বিবেচনায় রেখে চালু করা উচিত।
জানতে চাইলে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. জামালউদ্দিন আহমেদ বলেন, লকডাউনের কারণে অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের সবকিছু বন্ধ।
এটা চলমান থাকলে আমাদের বিপদ হবে।
ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশগুলো তাদের লকডাউন কিছু প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সেখানকার অর্থনীতি বা তাদের সক্ষমতা আমাদের চেয়ে অনেক বেশি।
তাই বাংলাদেশে যদি লকডাউন দীর্ঘমেয়াদি হয় তা বড় ধরনের বিপদ ডেকে আনবে।
সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ না খেয়ে থাকার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
এটা পুরো রাষ্ট্রের ওপর যে প্রভাব ফেলতে তা আমরা সামাল দিতে পারব না।
দেশের অর্থনীতি হচ্ছে রক্ত সঞ্চালক। তা বন্ধ থাকলে বাঁচা যাবে না।
লকডাউনের কারণে শিল্পকারখানা শুধু নয়, বন্দর, পরিবহন, কৃষি, রাজস্ব আদায় সবকিছু বন্ধ থাকলে মানুষ কয়েকদিন পর কী খাবে?
দুনিয়ার সব স্টক মার্কেট খোলা।
পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকারের উচিত ধীরে ধীরে এটা শিথিল করা। সামাজিক দূরত্ব মেনে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে সবকিছু খুলে দিতে হবে।
একজনের আয় আরেকজনের ব্যয়।
যে ব্যক্তি চাকরি করে তার বেতন দিয়ে পরিবার চলে।
সে দোকান থেকে পণ্য কেনে। দোকান মালিকের আয় হয়।
এখন যদি চাকরিজীবী বেতন না পায় এর মানে ক্ষতিগ্রস্ত বা সংকটে সে একা থাকবে না।
পুরো পদ্ধতিই আটকে যাবে।
প্রয়োজনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সেনাবাহিনী আরও বৃদ্ধি করে লকডাউন শিথিল করতে হবে।
তিনি বলেন, বসুন্ধরা গ্রুপ যেমন হাসপাতাল করছে, মানুষকে সহায়তা করছে এভাবে বিত্তশালীদের এগিয়ে আসতে হবে।
তারা কেন আসছে না। তাদের বাধ্য করতে হবে।
তারা এই দেশ থেকেই আয় করেছে, এই দেশে এখন ব্যয় করতে হবে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, সরকার ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য প্রচার করেছে।
আমরা আগেই বলেছি, এ প্রবৃদ্ধি সঠিক চিত্র নয় বাংলাদেশের।
এখন সেটা বোঝা যাচ্ছে। প্রবৃদ্ধির সুবিধাপ্রাপ্ত লোকের সংখ্যা একেবারে সীমিত।
দেশের অধিকাংশ লোক দরিদ্র।
দারিদ্র্যসীমার নিচের সংখ্যা অনেক বেশি।
এখন এভাবে লকডাউন করে রাখায় পরিস্থিতি খুবই মারাত্মক হয়েছে।
যারা নির্বাচিত হয়ে আসছেন এমপি, জনপ্রতিনিধিদের খুঁজে পাওয়া যায় না।
সাধারণ মানুষ কোথায় যাবে এখন? আয় বৈষম্যের এ চিত্র বঙ্গবন্ধুর অর্থনীতির বিপরীত।
সরকার ঘোষণা দিয়েছে ৫ কোটি মানুষকে খাদ্যসহায়তা দেবে।
এর অর্থ সংকটে রয়েছে আরও বেশি মানুষ।
করোনা পরিস্থিতিতে আমাদের যে সংকট প্রকাশ পেয়েছে তা খুবই মারাত্মক আকার নেবে এ লকডাউনের কারণে।
এখন করোনাভাইরাসের পরিস্থিতি কী তা সংশ্লিষ্ট গবেষক-চিকিৎসকরা ভালো বলতে পারবেন।
আমার মনে হয়, তাদের সঙ্গে কথা বলে লকডাউনের বিষয়ে ভিন্ন চিন্তা করা যেতে পারে।
আগামী মাস থেকে শিথিল করার সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
অর্থনৈতিক কর্মকান্ড সচল না রাখতে পারলে কোনো কিছুই ঠিক থাকবে না।