আপডেট: এপ্রিল ২৯, ২০২০
রাস্তার মোড়, ফুটপাত ও রিকশাভ্যানে জামা-জুতা, আসবাবসহ নানা পণ্য বিক্রিই ওদের পেশা।
কেউ কেউ ফুটপাতে চট বিছিয়ে বিক্রি করে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র।
রাজধানী ঢাকার রাস্তাঘাট, অলিগলি, মোড়, বাস, ট্রেনে নিত্যদিন দেখা মেলে ওদের।
ওদের সবাই হকার নামেই চেনে।
করোনাভাইরাসের ছোবলে ভ্রাম্যমাণ এসব ব্যবসায়ী এখন ঘরবন্দি।
আয় হারিয়ে দিন এনে দিন খাওয়া এসব মানুষের এখন দুর্বিষহ অবস্থা।
বেসরকারি পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, সারা দেশে হকারের সংখ্যা প্রায় ১০ লাখ।
তাদের মধ্যে ঢাকায়ই রয়েছে চার লাখ।
এর বাইরে বিপুলসংখ্যক হকার রয়েছে বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোতে।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকার ঘোষিত ছুটি আর লকডাউনে রাজধানীসহ সারা দেশে সব কিছু বন্ধ।
রাস্তায় মানুষ নেই।
খুলতে দেওয়া হচ্ছে না ফুটপাতের দোকানগুলো।
এতে তাদের রোজগার একেবারেই বন্ধ। সরকারি-বেসকারি কোনো সহায়তাও তাদের কাছে পৌঁছাচ্ছে না।
ফলে পরিবার নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে দুর্বিষহ জীবন কাটছে তাদের।
হরেক হকার, হরেক পেশা।
আমের আচার থেকে লেবুর শরবত, দাঁত মাজার পাউডার থেকে ইঁদুর মারা ওষুধ-সবই পাওয়া যায় হকারদের কাছে।
বিভিন্ন ঢঙে-সুরে, বেশভূষায় ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণের মূল উদ্দেশ্য ফেরি করা জিনিস বিক্রি করা।
গাড়ির চাকার মতোই সারা শহর ঘুরে জিনিস বিক্রি করেই চলছিল হকার নামের মানুষের জীবন।
করোনার কারণে থেমে গেছে তাদের জীবন-জীবিকা।
বৈশ্বিক মহামারিতে রূপ নেওয়া করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে মাসখানেক ধরে দেশজুড়ে চলছে লকডাউন।
সব ধরনের গণপরিবহন বন্ধের সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ রয়েছে বাইরের সব কাজকর্ম, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান।
এ অবস্থায় রাস্তার পাশে জিনিসপত্রের পসরা সাজিয়ে বসা তো দূরের কথা, শহরই ছেড়ে গেছে হকারদের একটি বড় অংশ।
তাদের মধ্যে যারা শহরে আছে তাদের অবস্থা আরো শোচনীয় বলে জানায় কয়েকজন।
ঢাকায় সারা বছরই হকাররা থাকে উচ্ছেদ আতঙ্কে।
তার মধ্যে করোনা-লকডাউনে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও তৎপর।
তারা রাস্তায় বসতে দিচ্ছে না হকারদের।
ফুটপাতের হকাররা অনেক প্রত্যাশা নিয়ে চেয়ে থাকে রোজার মাসটির দিকে।
ঈদ সামনে রেখে মানুষের সবচেয়ে বেশি কেনাকাটা হয় এ মাসেই।
এক মাসের আয় বছরের অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি হওয়ায় তা দিয়ে ধার-দেনাও পরিশোধ করে তারা।
সারা বছর চলার রসদেরও কিছুটা জমিয়ে নেওয়া হয় জমজমাট বেচাকেনার এই সময়ে।
এবার করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে সেই ব্যবসা তো দূরে থাক, এখন পরিবারের পেট চালিয়ে নেওয়াই বড় দায় হয়ে পড়েছে।
রাজধানীর চারুকলার ফুটপাতে ভ্যানে করে বই বিক্রি করতেন হকার আবদুল হালিম।
পুরান ঢাকার চানখাঁরপুল এলাকায় অসুস্থ মা, দুই সন্তান ও স্ত্রীসহ তিনি সাত হাজার টাকা ভাড়ায় বসবাস করেন।
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে আমার অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়।
সংসার চালানো মুশকিল হয়ে পড়েছে।’
শাহবাগের ফুটপাতে লেডিস স্যান্ডেল বিক্রি করেন জব্বার হোসেন।
তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে বেশি দুর্বিষহ জীবন কাটাতে হচ্ছে হকারদের।
আমরা সরকারি-বেসরকারি, ওয়ার্ড কাউন্সিলর বা মেয়র—কারো পক্ষ থেকে কোনো সাহায্য-সহযোগিতা এখনো পাইনি।’
সংবাদপত্র ফেরি করে বিক্রি করে অসংখ্য হকার।
দেশের সব জায়গায় সংবাদপত্রের হকার রয়েছে। করোনার প্রভাবে তাদের জীবনেও নেমে এসেছে সংকট।
করোনা মহামারি পরিস্থিতিতে হকারদের জন্য অর্থ বরাদ্দ এবং সাপ্তাহিক রেশন চালুর দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ হকার্স ইউনিয়ন।
সংগঠনটির সভাপতি আব্দুল হাশিম কবির ও সাধারণ সম্পাদক সেকান্দার হায়াৎ বলেন, ‘সারা দেশে লাখ লাখ মানুষ হকারি পেশায় নিয়োজিত হয়ে দেশের বিপণন বাণিজ্যে অসামান্য অবদান রাখছে; কিন্তু হকারদের এই অবদান কখনোই স্বীকৃতি পায়নি।
তারা আর্থিক প্রণোদনা পাওয়া তো দূরের কথা, দুর্যোগ-দুর্দিনে কখনো রাষ্ট্রীয় সহায়তাও পায় না।’
বাংলাদেশ হকার্স ইউনিয়নের কার্যকরী সভাপতি মুর্শিকুল ইসলাম শিমুল বলেন, ‘রাস্তায় বসলে সংসার চলে হকারদের।
রাস্তা বন্ধ মানে তাদের রোজগারও বন্ধ।
করোনাভাইরাসের মহাদুর্যোগে হকাররা চরম মানবেতর জীবন যাপন করছে।
রাষ্ট্র এরই মধ্যে গার্মেন্টসহ বিভিন্ন সেক্টরের জন্য অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে।
আমরা বাংলাদেশ হকার্স ইউনিয়নের পক্ষ থেকে রাষ্ট্র, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও দাতাগোষ্ঠীর কাছে আরজি জানাই—হকারদের পাশে দাঁড়ান, তাদের বেঁচে থাকার ব্যবস্থা করুন।’