আপডেট: ডিসেম্বর ১৭, ২০২১
আজ খেয়ালী গ্রুপ থিয়েটারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক চর্চার অঙ্গীকার নিয়ে ১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানের সময় ১৭ ই ডিসেম্বর এর জন্ম। বিশিষ্ট নাট্যব্যক্তিত্ব আকবর হোসেনের নেতৃত্বে কয়েকজন উৎসাহী নাট্যকর্মীর প্রচেষ্টায় খেয়ালী সাংস্কৃতিক ও সমাজ কল্যাণ সংস্থা নাম নিয়ে সংগঠনটি আত্মপ্রকাশ করে। প্রথমদিকে এ সংগঠনটিতে সংগীত শাখাও ছিল। পরে সংগীত শাখা কে বাদ দিয়ে নাট্যচর্চার মাধ্যমে কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রেখে নাম দেয়া হয় খেয়ালী নাট্যগোষ্ঠী। এরপর খেয়ালী নাট্যগোষ্ঠী খেয়ালী গ্রুপ থিয়েটারের রূপান্তরিত হয়ে গ্রুপ থিয়েটার আন্দোলন শুরু করে। আকবর হোসেন ছাড়াও আব্দুল খালেক ইউসুফ আব্দুল্লাহ সৈয়দ মীর মশাররফ হোসেন শাহ আলম আবদুস সত্তাররা এ সংগঠন প্রতিষ্ঠায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। প্রতিষ্ঠাকালে খেয়ালীর কোন কার্যালয় ছিল না।শিল্পী সংসদ মুজিব বাহিনী অফিস এবং আওয়ামী লীগ অফিসের একটি কক্ষে খেয়ালীর কার্যক্রম চলত। ১৯৭৫ সালের ১৫ ই আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর খেয়ালীর কার্যক্রম কিছুদিন স্থগিত রাখতে হয়েছিল। অনেক খোঁজাখুঁজির পরও যখন একটি কার্যালয় পাওয়া যাচ্ছিল না তখন খেয়ালীর তৎকালীন সহ-সভাপতি মীর মোস্তফা আলী নতুনবাজারে আটার মিলের উপর তলায় স্থান দিলেন। ১৯৭৯ সনের শেষের দিকে সদর রোডে আসাদ ম্যানসনের একটি কক্ষ ভাড়া করে খেয়ালী এর কার্যালয় স্থানান্তরিত হয়। বর্তমানে রায় রোডে খেয়ালীর অস্থায়ী কার্যালয়ে অবস্থান করছে। খেয়ালী একশটি নাটকের অসংখ্য প্রদর্শনী করেছে। স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় খেয়ালী গ্রুপ থিয়েটার মিন্টু বসুর ঢোল নাটক নিয়ে ছিল গণ মানুষের পাশে, তেমনি ময়মনসিংহ গীতিকার মহুয়া পালা নিয়ে করেছে শিকড়ের সন্ধান। একদিকে অনুবাদ নাটক ব্রক্টের হিম্মত ভাই অন্যদিকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিসর্জনের মতন নাটকের করেছে সফল প্রদর্শনী। আবার ইতিহাসের ফেরিওয়ালা নাটক গুলোর মাধ্যমে জানিয়েছেন রমা চৌধুরীদের মুক্তিযোদ্ধার দাবি। অগ্নি সন্ত্রাস বাউলদের ওপর হামলার প্রতিবাদ জানিয়েছে নাটক এটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনার মাধ্যমে। এমনি প্রেম-দ্রোহ ভালোবাসায় খেয়ালীর সাথে মিশে আছে অসংখ্য নাটকের অসংখ্য প্রদর্শনী। নাটকের পাশাপাশি খেয়ালী গ্রুপ থিয়েটার মীর মুজতবা আলী সাংস্কৃতিক চর্চা কেন্দ্রের মাধ্যমে শিশু-কিশোরদের ছবি আঁকা গান নাটক ও আবৃত্তি প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। ১৯৭৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে নাগরিক ঢাকায় নিয়মিত দর্শনীর বিনিময়ে নাট্য প্রদর্শনী শুরু করে। খেয়ালী ওই বছরের শেষের দিকে বরিশালে প্রথম দর্শনীর বিনিময়ে নাট্য চর্চা শুরু করে। বাঙালি সংস্কৃতি এবং প্রগতির প্রতি প্রগাঢ় ভালোবাসা ছিল সূচনালগ্নে খেয়ালীর সাথি। সুস্থ ও সুন্দর বোধগুলোকে অম্লান রেখে খেয়ালী সকল প্রকার অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে শক্তি হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে আজও।