১লা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বুধবার

শিরোনাম
তেলবাহী লড়ি উল্টে গিয়ে আগুন লেগে এক জনের মৃত্যু। ভূমি বিষয়ক তথ্যাদি স্কুলের পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ গ্রহণ করো হয়েছে-ভূমিমন্ত্রী মির্জা ফকরুলরা তারেক জিয়ার নির্দেশে জনগনের সাথে প্রতারনা ও তামশা করছে-আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিগ বার্ড ইন কেইজ: ২৫ শে মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধুর গ্রেফতার  ঢাবি ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে ১ কোটি টাকার বৃত্তি ফান্ড গঠিত হাইকোর্টের রায়ে ডিন পদে নিয়োগ পেলেন যবিপ্রবির ড. শিরিন জয় সেট সেন্টার’ থেকে মিলবে প্রশিক্ষণ, বাড়বে কর্মসংস্থান: পীরগঞ্জে স্পীকার বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস আগামীকাল টুঙ্গিপাড়ায় যাচ্ছেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী, সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন বিশিষ্ট রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী সাদি মোহম্মদ আর নেই

কালের স্বাক্ষি বানারীপাড়ার সহমরণ মঠ

আপডেট: জানুয়ারি ১৭, ২০২২

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন

জিএম রিপন, বানারীপাড়া

বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার ঐতিহ্যবাহী ঘোষের বাড়ির প্রাচীন নিদর্শন সহমরণ মঠটি দীর্ঘদিন ধরে অযত্ন-অবহেলায় পড়ে আছে। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রাচীন সতীদাহ প্রথা অনুযায়ী, স্বামী মারা গেলে স্ত্রীকেও জীবন দিতে হতো। এই মঠটি তারই নিদর্শন। এটি সরকারিভাবে রক্ষণাবেক্ষণের দাবি জানিয়েছেন উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা।

সরেজমিনে দেখা যায়, বানারীপাড়া পৌর শহরের প্রাণকেন্দ্র ৪নং ওয়ার্ডে ঘোষের বাড়ির অবস্থান। এখানে সহমরন মঠটির একপাশে কাপড় দিয়ে আড়াল করে রাখা হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, আগে মঠের গায়ে নামফলক খোদাই করা ছিল। কে বা কারা সেটি তুলে ভুল তথ্য সম্বলিত একটি টিনের সাইনবোর্ড সাঁটিয়ে দিয়েছে।

বানারীপাড়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার তরুনেন্দ্র নারায়ন ঘোষ (তরুণ ঘোষ) ও তার স্ত্রী মায়া ঘোষ জানান, প্রায় দুইশ বছর আগে এ বাড়ির ধর্ম নারায়ন ঘোষের মৃত্যু হলে পারিবারিক শ্বশানে তার সৎকার করা হয়। ওই সময় প্রাচীন রীতি অনুযায়ী একই শ্বশানের একই চিতায় তার স্ত্রী হেমলতা ঘোষকেও সৎকার করা হয়।

তরুনেন্দ্র নারায়ন ঘোষ জানান, তার দাদু সম্পর্কের পূর্ব-পূরুষ ধর্ম নারায়ন ঘোষ ও তার স্ত্রী হেমলতা ঘোষের সহমরণ হওয়ার পর এর নিদর্শন হিসেবে সেখানে মঠটি নির্মাণ করা হয়েছিল। তিনি বলেন, আমরাই এটির রক্ষণাবেক্ষণ করে আসছিলাম। কিন্তু বর্তমানে সপরিবারে বরিশাল শহরে বসবাস করায় ঐতিহ্যবাহী ঘোষের বাড়ির সেই সহমরণ মঠটি অযত্ন-অবহেলায় পড়ে আছে। এ বিষয়ে উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি দেবাশিষ দাস বলেন, প্রাচীন সহমরণ মঠটি দেখে ভবিষ্যত প্রজন্ম জানতে পারবে, সতীদাহ প্রথা আইনের কালো অধ্যায়- কিভাবে নারীদের প্রতি অন্যায় অবিচার করা হয়েছিল। তাই মঠটির রক্ষনাবেক্ষণ প্রয়োজন। একই দাবি জানিয়েছেন উপজেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ও বিভিন্ন মন্দির কমিটির নেতারাও।

বানারীপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিপন কুমার সাহা বলেন, এ ব্যাপারে লিখিতভাবে জানালে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। অপরদিকে বানারীপাড়া পৌরসভার মেয়র ও বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুভাষ চন্দ্র শীল বলেন, পৌর শহরে অবস্থিত অতিপ্রাচীন নিদর্শনগুলো সংরক্ষণে কাজ করা হবে।

জানা গেছে, ১৮১৫ থেকে ১৮১৯ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে সতীদাহ প্রথা অশাস্ত্রীয় ও নীতি বিরুদ্ধ প্রমাণ করে রাজা রামমোহন রায় দু’টি পুস্তিকা লেখেন এবং প্রতিবাদ করেন। পরবর্তীতে ১৮২৯ খ্রিষ্টাব্দের ৪ ডিসেম্বর বেঙ্গলের গর্ভনর লর্ড উইলিয়াম বেন্টিং সতীদাহ প্রথা বাতিল ঘোষণা করেন। এই আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে হিন্দু সমাজের একটি অংশ লন্ডনের প্রিভিকাউন্সিলে মামলা করেন। এ সময় রাজা রামমোহন রায় আদালতে প্রমাণ করে দেন, সনাতন ধর্মে সতিদাহ বলে কিছু নেই। ফলে ১৮৩২ খ্রিষ্টাব্দে প্রিভিকাউন্সিল উইলিয়াম বেন্টিংয়ের আদেশ বহাল রাখেন।

এরপর প্রখ্যাত সাহিত্যিক ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর তার লেখনীর মাধ্যমে সনাতন ধর্মাবলম্বী নারীদের বিধবা বিবাহ প্রথা চালুর আন্দোলন করেন। ১৮৫৬ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ জুলাই ব্রিটিশ শাসন আমলে ভারতবর্ষের তৎকালীন গভর্নর জেনারেল লর্ড ডালহৌসির সহায়তায় ভারতবর্ষের সকল বিচার ব্যবস্থায় হিন্দু বিধবাদের বিবাহ বৈধ করা হয়। পরবর্তীতে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের প্রচেষ্টায় তৎকালীন বড় লাট লর্ড ক্যানিং অইন (দ্য হিন্দু উইডো’স রিম্যারেজ অ্যাক্ট) প্রনয়ন করে বিধবা বিবাহকে আইনি স্বীকৃতি দেয়া হয়।

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন
     
Website Design and Developed By Engineer BD Network