৪ঠা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার

শিরোনাম
তেলবাহী লড়ি উল্টে গিয়ে আগুন লেগে এক জনের মৃত্যু। ভূমি বিষয়ক তথ্যাদি স্কুলের পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ গ্রহণ করো হয়েছে-ভূমিমন্ত্রী মির্জা ফকরুলরা তারেক জিয়ার নির্দেশে জনগনের সাথে প্রতারনা ও তামশা করছে-আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিগ বার্ড ইন কেইজ: ২৫ শে মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধুর গ্রেফতার  ঢাবি ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে ১ কোটি টাকার বৃত্তি ফান্ড গঠিত হাইকোর্টের রায়ে ডিন পদে নিয়োগ পেলেন যবিপ্রবির ড. শিরিন জয় সেট সেন্টার’ থেকে মিলবে প্রশিক্ষণ, বাড়বে কর্মসংস্থান: পীরগঞ্জে স্পীকার বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস আগামীকাল টুঙ্গিপাড়ায় যাচ্ছেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী, সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন বিশিষ্ট রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী সাদি মোহম্মদ আর নেই

গলাচিপায় পেশি শক্তির কাছে দখল ভূমিহীনদের ভূমি

আপডেট: ফেব্রুয়ারি ২, ২০২৩

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন

সঞ্জিব দাস,গলাচিপা, পটুয়াখালী,প্রতিনিধি
নদীর পাড় ভাঙে পাড় গড়ে এটাই প্রকৃতির নিয়ম। ভাঙা গড়ার এই খেলায় কেউ হারায় সবকিছু আবার কারো বদলে যায় ভাগ্যের চাকা। পটুয়াখালীর সর্ব দক্ষিণে অবস্থিত গলাচিপা উপজেলার চর বিশ্বাষ ইউনিয়নের নিকটে তেতুলিয়া নদীর কোল ঘেষে ১৯৪৪ থেকে ১৯৪৫ সালের দিকে গড়ে উঠেছে তেমনি একটি চর।
বাংলাদেশ সার্ভে (বিএস) ক্ষতিয়ান অনুসারে ২৭০ থেকে ২৮০ একরের এই চরটি ১৯৫৯-৬০ সালে তৎকালীন বাকেরগঞ্জ জেলার ভূমিহীনদের মধ্যে ৩ একর করে বন্দোবস্ত দেওয়া হয়। পরে ১৯৬৯ সালে পটুয়াখালীকে জেলা ঘোষণা করা হলে এই চরটি পটুয়াখালী জেলার অর্ন্তভূক্ত হয়। এরপর আবারো বিভিন্ন দাগে ১৯৭৭-৭৮ সালে আড়াই ও ১৯৯৭-৯৮ সালে দেড় একড় করে বিভিন্ন ভূমিহীনদের মধ্যে সরকার থেকে বন্দোবস্ত দেওয়া হয়।
চরটি পটুয়াখালী ও ভোলা জেলার মধ্য সীমানায় হওয়ার কারণে এই চরটি নিয়ে এই পটুয়াখালী জেলার চর বিশ্বাস ও চর কাজল ইউনিয়নের সঙ্গে ভোলা জেলার মুজিবনগর ইউনিয়নের মানুষদের মধ্যে প্রায় পঞ্চাশ বছর ধরে চরটির মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ চলে আসছিলো। মামলা-হামলা হয়েছে অসংখ্যবার। এমনকি দুই জেলার এ দ্বন্দে প্রাণ দিতে হয়েছিল চর বিশ্বাস এলাকার কাশেম মৃধা (৫৫) নামের এক ব্যক্তিকে। তবে ২০২২ সালে দুই জেলার জনপ্রতিনিধি ও জেলা প্রশাসনের চেষ্টায় দীর্ঘদিনের এ সমস্যার সমাধানের মধ্য দিয়ে চাষ উপযোগী উর্বর এই চরটি থেকে সরে দাঁড়ায় ভোলা জেলার মুজিবনগর ইউনিয়নের মানুষ। চরটির মধ্যে সিমেন্টের পিলার বসিয়ে নির্ধারণ করা হয় দুই জেলার দুই উপজেলার সীমানা। তবে এরপরে আবারো দেখা দেয় নতুন বিপত্তি গলাচিপা উপজেলার চর বিশ্বাস ইউনিয়ন ও চর কাজল ইউনিয়নের দুটি মৌজার মধ্যে ২২০-৩০ একর জমি রয়েছে চর বিশ্বাস ইউনিয়নের মধ্যে। আর কিছু জমি চর কাজল ইউনিয়নের কপাল ভেড়া ইউনিয়নের মধ্যে। তবে চর কাজলের কিছু ক্ষমতাধর মানুষ পেশি শক্তির জোর দেখিয়ে ৫০ থেকে ৬০ একর ভূমিহীনদের জমি জবর দখল করে চাষের কাজ করে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে অনেকবার সালিশ বিচারে কোনো কাজ হয়নি বলেও অভিযোগ করে ভুক্তভোগীরা।
ভুক্তভোগী মো. মকবুল হোসেন প্যাদা জানান, ভোলার সঙ্গে তাদের সমস্যা-সমাধান হওয়ার পরে চরবিশ্বাসের কিছু লোকের জমি চর কাজল ইউনিয়নের কপালভেড়া গ্রামের কিছু লোক জোর দখল করে খাচ্ছে। এদের মধ্যে হাতেম মাতবর, নুরু খাঁ, আনোয়ার খাঁ, দুলাল খাঁ, চর কাজল ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য শাহাবুদ্দিনসহ আরো বেশ কিছু লোক এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে। তিনি আরো জানান, চাষ যোগ্য এই জমিতে গত দুই বছর পর্যন্ত দখলদাররা অন্তত দেড় কোটি টাকার আয় করে নিয়েছে। এ বিষয় নিয়ে অনেকবার আলোচনায় বসলেও এসব দখলদাররা কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে তাদের মতো ভোগ দখল চালিয়ে যাচ্ছে।
ভুক্তভোগী মো. মাইনউদ্দিন জানান, দখলদারদের সঙ্গে অনেকবার জমির কাগজপত্র নিয়ে বসলে তারা বলে কাগজ দিয়ে জমি খেতে পারবে না। তারা বলে এসব কাগজ নিয়ে ভিজিয়ে রাখো। এসব দখলদাররা মূলত জলদস্যু। তারা বিচারে বসলে বলে এই কয়েকদিন পরেই ছেড়ে দেবো জমি। আবার কিছুদিন বাদে বলে এই তো সামনের সিজনেই ছেড়ে দেবো। কিন্তু তারা জমি ছাড়ে না।চাষকৃত জমির মালিক কে বা কার অনুমতি নিয়ে এই জমি চাষ করা হচ্ছে, চরের জমিতে চাষাবাদ করতে থাকা কৃষক মো. সিদ্দিক মাতবরের কাছে এসব প্রশ্নের জবাবে তিনি নয়া শতাব্দীকে জানান, তিনি এই জমি চর কাজল ইউপির সাবেক সদস্য শাহাবুদ্দিনের থেকে এই জমি তিন মাসের জন্য প্রত্যেক কানি প্রতি ৬০ হাজার টাকায় তরমুজ চাষের জন্য নিয়েছেন। তবে এই জমির প্রকৃত মালিক কে বা কারা এ বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না।
এদিকে কৃষক মো. শরিফুল ইসলাম জানান, তারা প্রতিদিনের ভিত্তিতে মোট আটজন কৃষক শাহবুদ্দিন মেম্বারের নিজের জমি চাষ করছেন। সেখানের আট কানি জমিতে শাহাবুদ্দিন তাদের দিয়ে তরমুজ চাষ করাচ্ছেন। এর আগে তারা একই জমিতে ধান চাষ করেছিলেন। তবে এই জমি কার, সে ব্যাপারে তারাও কিছু জানেন না। অভিযুক্ত চর কাজল ইউপির ৯নং ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য শাহাবুদ্দিনের কাছে এসব বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ৫০ থেকে ৬০ একর জমি তিনিসহ অভিযুক্তরা জোর করে ভোগ দখলের ব্যাপারটি এড়িয়ে গিয়ে তিনি বলেন, আমরা সরকারি ১২ একর জমিসহ মোট ১৮ একর জমি খাচ্ছি এটা ঠিক। তবে এ বিষয়ে থানার ওসির কাছে অভিযোগ গেলে তিনি তাদের সবাইকে ডেকে ১৮ একরের মধ্যের কার্ডধারী মালিকানা জমির সাড়ে ৪ একর জমির মালিকদের দিয়ে দিতে বললে আমরা দিয়ে দেয়। বাকি দেড় একর মালিকানা জমিতে এই বছর তরমুজ লাগানো হয়ে গেছে দেখে ওসি স্যার তরমুজ ওঠার পরে এই জমির কাগজ যাদের কাছে আছে তাদেরকে দেওয়ার জন্য বলেছেন। আমরাও সেটিই করবো।
অভিযুক্ত হাতেম মাতবর বলেন, এই জমিগুলো আমরা মূলত দুই তিন বছর ধরে খাচ্ছি। খাচ্ছি বলতে যাদের জমি তাদের কিছু টাকা পয়সা দেই আমরাও কিছু ইনকাম করে নেই। এ বিষয় নিয়ে থানায় বসা হলে ওসি স্যার বলে দিয়েছেন এই বছর পরে কার্ড হোলডারদের জমি তাদের দিয়ে দিতে। জমি নিয়ে আবারো নতুন করে দেখা দিতে পারে বিরোধ, চরের শান্ত পরিবেশের আইনশৃঙ্খলায় দেখা দিতে পারে অবনতি এমন আশঙ্কা নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন চরের দুই ইউনিয়নের প্রায় কয়েকহাজার মানুষ। তাছাড়াও থানায় সালিশ বিচার কতটা আইন সংগত এ ব্যাপারে গলাচিপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শোনিত কুমার গায়েনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গলাচিপা থানার অধিনে চরকাজল ও চর বিশ্বাস নামের দুইটা ইউনিয়ন আছে। এই জায়গায় জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধ বিভিন্ন মানুষের আছে। এ বিষয় ইউনিয়ন ভূমি অফিসার ও এসি ল্যান্ড মহাদয় দেখভাল করে। নির্বাহী কর্মকর্তা মহাদয় নিজেও যায় সরেজমীনে। তাদের প্রয়োজনে গলাচিপা থানা পুলিশ সব সময় সহযোগীতা করে। এছাড়া জমি সংক্রান্ত বিরোধ বা ভাগাভাগির বিষয় এটি পুলিশের কার্যক্রম নয়। গলাচিপা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মহউিদ্দিন আল হেলাল বলেন, আমরা অবগত আছি গলাচিপার চরের দুটি ইউনিয়নের সমস্যাগুলো বহুমুখী। এখানে আমাদের জরিপ সংক্রান্ত জটিলতা রয়েছে। আমাদের বন্দোবস্ত সংক্রান্ত জটিলতা রয়েছে। পাশাপাশি ফৌজদারি ও দেওয়ানী মোকাদমাআছে।

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন
     
Website Design and Developed By Engineer BD Network