আপডেট: ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২১
৩৬ বসন্ত পার করে ৩৭-এ পা দিলেন বর্তমান সময়ের অন্যতম সেরা ফুটবলার ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। অভাব-অনটনকে সঙ্গী করে পর্তুগালের মাদেইরাতে ১৯৮৫ সালে ৫ ফেব্রুয়ারি তার জন্ম। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে প্রচণ্ড শ্রম আর নিয়মানুবর্তিতায় প্রতিষ্ঠা করেছেন নিজেকে।
সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তার বয়স বাড়ছে ঠিকই, কিন্তু গায়ে এখনো লেগে কৈশোরের গন্ধ। জেতার ক্ষুধা। ভুলে যাননি ভুলে যাওয়ার শৈশবকে। পড়াশোনায় মন ছিল না একদমই। ছোট্ট এক রুমে চার ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট্ট ছেলেটা, গুটিসুটি হয়ে ঘুমাতো ফুটবলকে আঁকড়ে ধরে। স্বপ্ন দেখার সেই তো শুরু।
অভাবের সংসারে বয়সটা দশের গণ্ডি পার হওয়ার আগেই কাজ নেন পাড়ার দল অ্যান্ডেরিনহার কিটম্যান হিসেবে। ফুটবলের হাতেখড়িটাও সেখানেই। পরে নজর কাড়ে স্পোর্টিং সিপির। ফার্গির হাত ধরেই তারকা বনে যাওয়া কিংবা রিয়াল মাদ্রিদের সর্বকালের সর্বসেরা ফুটবলারের তকমা।
মাত্র তিন বছর বয়স থেকে রোনালদো ফুটবলের সংস্পর্শে আসেন। কৈশোরে তার প্রিয় দল ছিল ‘বেনফিকা’। পরবর্তীকালে বেনেফিকার প্রতিপক্ষ ‘স্পোর্টিং ক্লাবে দি পর্তুগালে’ যোগ দেন।
২০০৩ সালে রোনালদো ১২.২৪ মিলিয়ন পাউন্ডের বিনিময়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে যোগ দেন। রোনালদোকে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ঐতিহ্যবাহী ৭ নম্বর জার্সি দেওয়া হয়। এ জার্সি পরে এক সময় মাঠ কাঁপিয়েছেন জর্জ বেস্ট, ব্রায়ান রবসন, এরিক ক্যান্টোনা ও ডেভিড বেকহ্যাম।
২০০৯ সালে স্প্যানিশ ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদ তাকে ৮০ মিলিয়ন পাউন্ডের বিনিময়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড থেকে নিয়ে আসে। তিনি বর্তমানে জুভেন্টাস এবং পর্তুগাল জাতীয় দলে ফরোয়ার্ড হিসেবে খেলে থাকেন।
রোনালদো ইংল্যান্ডে খেলা প্রথম খেলোয়াড় যিনি প্রধান ৪টি পিএফএ এবং এফডব্লিউএ পুরস্কার জিতেছেন, যা তিনি ২০০৭ সালে করেছেন। রোনালদো ২০০৮,২০১৩,২০১৪,২০১৬ ও ২০১৭ সালে সারা বিশ্বে সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার ব্যালন ডি অর জিতেছেন। তিনিই একমাত্র পর্তুগিজ যিনি এই পুরস্কার ৫ বার জিতেছেন।
রোনালদো পর্তুগাল জাতীয় দলের হয়ে খেলেন, যাদের হয়ে ২০০৩ সালের আগস্ট মাসে কাজাকিস্তানের বিরুদ্ধে তার অভিষেক ঘটে। তিনি জাতীয় দলের হয়ে ১০০ এর অধিক ম্যাচ খেলেছেন এবং তিনি পর্তুগালের হয়ে সর্বোচ্চ গোলের অধিকারী। তিনি পর্তুগালের হয়ে প্রধান ৫টি টুর্নামেন্ট; ২০০৪ উয়েফা ইউরো, ২০০৬ ফিফা বিশ্বকাপ, ২০০৮ উয়েফা ইউরো, ২০১০ ফিফা বিশ্বকাপ এবং ২০১২ উয়েফা ইউরোতে অংশগ্রহণ করেছেন। ২০০৪ সালের উয়েফা ইউরোর প্রথম খেলায়, গ্রিসের বিরুদ্ধে তিনি তার প্রথম আন্তর্জাতিক গোল করেন। ২০০৮ সালের জুলাই মাসে পর্তুগালের অধিনায়ক হন এবং ২০১২ সালের উয়েফা ইউরোতে অধিনায়ক হিসেবে দলকে সেমি-ফাইনালে নিয়ে যান এবং প্রতিযোগিতায় সর্বোচ্চ গোল করেন।
তিনি ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে ঐতিহ্যবাহী ৭নং জার্সি পড়ে খেলতেন, যা পুর্বে জর্জ বেস্ট, এরিক কাঁতোয়াঁ এবং ডেভিড বেকহ্যামের মত তারকারা পড়তেন। রিয়াল মাদ্রিদে প্রথম বছর তিনি ৯ নং জার্সি নিয়ে খেলেন। রিয়াল মাদ্রিদ লিজেন্ড রাউলের ক্লাব ছাড়ার পর রোনালদো ৭ নং জার্সি লাভ করেন।
বাবা ছিলেন মদ্যপ, ফলে সংসারে লেগে ছিল অশান্তি। অর্থকষ্টে ধুঁকে ধুঁকে চিকিৎসার অভাবে মরতে দেখেছেন বাবাকে। সেই থেকে অ্যালকোহল ছুঁয়ে দেখেননি রোনালদো। নিয়মিত রক্ত দেন তাই শরীরে নেই কোনো উল্কি।
মাঠে ক্রিস্টিয়ানো যতটা ক্ষুরধার বাবা হিসেবে যেন ভিন্ন অবয়ব। জুনিয়র রোনালদো, মারিয়া, মার্টিনা, মাত্তেও অবসরের পুরোটা কাটে প্রিয় ৪ সন্তানদের সঙ্গে। হরর সিনেমা তার পছন্দ, অবসরে ভালোবাসেন সপরিবারে ঘুরে বেড়াতে। ডজন খানেকের বেশি গার্লফ্রেন্ড পাল্টে এবার থিতু হচ্ছেন জর্জিনা রদ্রিগেজের প্রেমে।
ব্যক্তিগত, জাতীয় দল কিংবা ক্লাব ফুটবল। রোনালদোর রেকর্ডের গল্পে ভরে যাবে পরিসংখ্যানের পাতা। স্বীকৃত সবচেয়ে বেশি গোলের মালিকের পর এবার তার সামনে শুধুই আলী দাইয়ের রেকর্ড।
ক্রিস্টিয়ানো বিখ্যাত তার গ্রিক দেবতাদের মতো শারীরিক গঠনের জন্য। তবে এর পেছনে রয়েছে তার কঠোর শ্রম আর নিয়মানুবর্তিতা। তাইতো ৩৭ বছর বয়সেও রোনালদো যেন এক অনুপ্রেরণার নাম। গোলার গতিতে ছুটতে থাকা এই নক্ষত্র, আরও বহুকাল ছড়িয়ে যাক তার জ্যোতি। জন্মদিনে আপাতত কামনা হোক এটাই।