আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২০
নামাজ ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ।
প্রতিদিন পাঁচবার নামাজ পড়া ফরজ।
কিন্তু মনগড়াভাবে নামাজ পড়লে নামাজ আদায় হবে না।
কোরআন ও সুন্নাহর নির্দেশিত পন্থায় নামাজ আদায় করা জরুরি।
এর ব্যত্যয় ঘটলে হিতে বিপরীত হতে পারে।
অর্থাৎ নামাজ কোনো কোনো ব্যক্তিকে জাহান্নামে নিয়ে যেতে পারে।
এমন তিন শ্রেণি সম্পর্কে এখানে বর্ণনা করা হলো—
১. যারা অলসতা করে সঠিক সময়ে নামাজ আদায় করে না, তাদের নামাজ কবুল হবে না। তাদের জন্য পরকালে শাস্তি রয়েছে।
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘অতঃপর দুর্ভোগ ওই সব মুসল্লির জন্য, যারা তাদের নামাজ সম্পর্কে উদাসীন।’ (সুরা : মাউন, আয়াত : ৪-৫)
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসিরবিদরা লিখেছেন, এরা হলো সেইসব লোক, ‘যারা নামাজ থেকে উদাসীন ও খেল-তামাশায় ব্যস্ত।’
উদাসীন লোকদের মধ্যে একদল এমন আছে, যারা রুকু-সিজদা, ওঠা-বসা যথাযথভাবে করে না। কেরাত, দোয়া ও তাসবিহ যথাযথভাবে পাঠ করে না।
কোনো কিছুর অর্থ বোঝে না বা বুঝবার চেষ্টাও করে না।
আজান শোনার পরেও যারা অলসতাবশে এবং নামাজে দাঁড়িয়ে অমনোযোগী থাকে।
২. যারা দায়সারাভাবে নামাজ পড়ে এবং নামাজের বিধি-বিধানগুলো যথাযথভাবে পালন করে না।
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.) মসজিদে প্রবেশ করেন।
তখন জনৈক ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করে নামাজ আদায় শেষে রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে সালাম দিল।
তিনি সালামের জবাব দিয়ে বলেন, তুমি যাও, পুনরায় নামাজ আদায় করো।
কেননা তুমি নামাজ আদায় করোনি।
এভাবে লোকটি তিনবার নামাজ আদায় করল।
রাসুল (সা.) তাকে তিনবারই ফিরিয়ে দিলেন।
তখন লোকটি বলল, হে আল্লাহর রাসুল! যিনি আপনাকে সত্য সহকারে প্রেরণ করেছেন, তাঁর কসম করে বলছি, এর চাইতে সুন্দরভাবে আমি নামাজ আদায় করতে জানি না।
অতএব আমাকে নামাজ শিখিয়ে দিন!
অতঃপর রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যখন তুমি নামাজে দাঁড়াবে তখন তাকবির দেবে।
তারপর কোরআন থেকে যা পাঠ করা তোমার কাছে সহজ মনে হয়, তা পাঠ করবে।
তারপর ধীরস্থিরভাবে রুকু করবে।
অতঃপর সোজা হয়ে দাঁড়াবে।
তারপর ধীরস্থিরভাবে সিজদা করবে। অতঃপর মাথা উঠিয়ে সোজা হয়ে বসবে।
আর প্রত্যক নামাজ এভাবে আদায় করবে।’ (বুখারি, হাদিস : ৭৫৭)
অন্য হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘মানুষের মধ্যে সর্বাপেক্ষা বড় চোর ওই ব্যক্তি যে তার নামাজ চুরি করে।
সাহাবিরা জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! সে কিভাবে নামাজ চুরি করে?
তিনি বলেন, সে নামাজে রুকু ও সিজদা পূর্ণ করে না।’ (মুসনাদে আহামাদ, হাদিস : ২২৬৯৫)
রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ভাষায় বড় চোর হচ্ছে যারা নামাজের মধ্যে চুরি করে।
পার্থিব জীবনে মানুষ মানুষের ধন-সম্পদ, টাকা-পয়সা চুরি করে, এটাকে সামান্য চুরি বলা যেতে পারে।
কিন্তু যে ব্যক্তি নিজের মহামূল্যবান সম্পদ, জান্নাতে যাওয়ার পুঁজি, শ্রেষ্ঠতম ইবাদত চুরি করে সে-ই প্রকৃতপক্ষে বড় চোর।
তৃতীয়ত, যারা লোক দেখানো নামাজ আদায় করে।
মহান আল্লাহ বলেন, ‘যারা লোক দেখানোর জন্য তা করে।’ (সুরা মাউন, আয়াত : ৬)
মুনাফিকরা মানুষকে দেখানোর জন্য নামাজ পড়ে।
যেমন—মহান আল্লাহ অন্য আয়াতে বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই মুনাফিকরা আল্লাহকে ধোঁকা দেয়, আর তিনিও তাদের ধোঁকায় ফেলেন।
যখন ওরা নামাজে দাঁড়ায়, তখন অলসভাবে দাঁড়ায়—লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে।
আর তারা আল্লাহকে অল্পই স্মরণ করে।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ১৪২)
মহান আল্লাহ লোক-দেখানো ইবাদতকারীকে তার আমলসহ প্রত্যাখ্যান করেন।
হাদিসে কুদসিতে এসেছে, মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি অংশীবাদিতা (শিরক) থেকে সব অংশীদারের তুলনায় বেশি মুখাপেক্ষীহীন।
যে ব্যক্তি কোনো আমল করে এবং তাতে অন্যকে আমার সঙ্গে শরিক করে, আমি তাকে ও তার আমলকে বর্জন করি।’ (মুসলিম, হাদিস নম্বর : ২৯৮৫)
মহান আল্লাহ আমাদের যথাযথভাবে নামাজ আদায় করার তাওফিক দান করুন।
আমিন।