• ১৫ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৩০শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এসআই মহিউদ্দিন (পিপিএম) এর বিরুদ্ধে একাট্টা মাদক ও চোর চক্র

report71
প্রকাশিত অক্টোবর ১৭, ২০১৯, ০৬:৩৫ পূর্বাহ্ণ
এসআই মহিউদ্দিন (পিপিএম) এর বিরুদ্ধে একাট্টা মাদক ও চোর চক্র

বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ এর কোতোয়ালি থানার অফিসার এসআই মহিউদ্দিন (পিপিএম) এর বিরুদ্ধে একাট্টা হয়েছে মাদক ও চোর চক্র। চক্রটির মূল হোতা হিসেবে অনুসন্ধানে বেড়িয়ে এসেছে বরিশাল নগরীর রূপাতলির হাউজিং এর মাদকের গডফাদার বাপ্পি ওরফে বাপ্পি মৃধার। এই বাপ্পিকে রুপাতলি হাউজিং এর বাপ্পি ওরফে র্যাব বাপ্পি হিসেবে স্থানীয়রা চেনেন। র্যাবের সোর্স পরিচয়ে বাপ্পি তার আধিপত্য বিস্তার করে বলে স্থানীয়রা তাকে এ উপাধি দিয়েছেন বলে জনশ্রুতি রয়েছে। পোষ্ট মাষ্টারের ছেলে সেই বাপ্পি মৃধার শেল্টালে হারিছ গ্রুপ ও বরিশালের আরও বড় কয়েকটি গ্রুপ এবার সংঘবদ্ধভাবে সাহসী পুলিশ অফিসার মহিউদ্দিনকে প্রতিহত করতে ও সামাজিক মর্যাদা ক্ষুন্ন করতেই মরিয়া হয়ে উঠেছে।

বিগত দিনের এমন একটি ঘটনা ঘটেছিল ২০১৭ সালে। তখন চুরি মামলায় আটক হওয়া আত্মস্বীকৃত চোরদের নাম চার্জশীট থেকে বাদ না দেওয়ায় উল্টো মামলা খেয়েছিলেন তদন্তকারী কর্মকর্তা এস.আই মহিউদ্দিন।সেবছর ৮ ফেব্রুয়ারী বরিশাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি দায়ের করেছিলেন নগরীর রুপাতলী খান সড়ক এলাকার মৃত আবুল হাসেম মৃধার ছেলে মো: রিপন মৃধা। সরেজমিনে খোজ নিয়ে তখন জানা গিয়েছিল , ঘটনার বেশ কিছুদিন আগে রুপাতলী সবুজ খানের বাড়ীতে চুরি মামলায় (জি আর ১৫১/১৬ ধারা-৪৫৪/৩৮০ দঃবিঃ) রিপন মৃধা, আফজাল, রিপন আকন আটক হয়। আদালতে ফৌঃকাঃ ১৬৪ ধারা মোতাবেক তারা চুরির ঘটনায় স্বীকারোক্তি মুলক জবান বন্ধি দেয় । সেখানে স্বর্ণ, টাকা চুরি ও ভাগাভাগির বিস্তারিত তথ্য তারা স্বীকার করে গ্রিল কেটে চুরির বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেয়। ঐ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ছিলেন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কোতোয়ালি মডেল থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) মো: মহিউদ্দিন। আসামীরা তদন্তকালে চার্জশীট থেকে তাদের নাম বাদ দেওয়ার জন্য আর্থিক প্রলোভন সহ নানান ভাবে দাবী জানায়। কিন্তু এস আই মহিউদ্দিন তা বাদ না দিয়ে তাদের নামে চার্জশীট দিয়ে দেয় । মামলার চার্জসিট থেকে রিপন মৃধা নাম বাদ না দেয়ার কারনে তিনি দীর্ঘদিন হাজতবাসের পর জামিনে মুক্ত হয়ে এই মামলাটি দায়ের করে। তাই উল্টো তদন্তকারী কর্মকর্তাই তখন আদালতের কাঠগড়ায় দাড়িয়েছিলেন । এবং পরবর্তীকালে সেটি সম্পূর্ণ মিথ্যা প্রমাণিত হয় এবং এসআই মহিউদ্দিন গভীর ষড়যন্ত্র থেকে বাঁচতে সক্ষম হন।

প্রায় একই ঘটনার পুঃনারাবৃত্তি হল ২০১৯ সালেও। গভীর অনুসন্ধানে তথ্য পাওয়া গেছে রুপাতলির ২৪ নং ওয়ার্ডের কথিত ইট-বালু ব্যাবসায়ী, চিন্হিত মাদকসেবি ও কারবারি হারিছুল ইসলাম (করাল) সুদীর্ঘদিন ধরে শহরে বীর দর্পে মাদকের চালান সরবরাহ করে আসছে। তবে এর মধ্যে (কারবারে) বড় বাধা হয়ে দাড়িয়েছে বাংলাদেশ সরকারের মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স হওয়া ও সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশকে ম্যানেজ না করতে পারা। হারিছ মাদকসহ একাধিকবার আটক হলে একটি কুচক্রী মহলের বুদ্ধিতে পুলিশ হেড কোয়ার্টার ও পুলিশের মহা পরিদর্শক, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইজিপি সেল, পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়সহ সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ প্রায় উনিশটি দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করে যা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপূর্ন। লিখিত অভিযোগে হারিছ গ্রুপ অভিযোগ করে যে, এসআই মহিউদ্দিন তার নিজের সরকারি অস্র ঠেকিয়ে তাদের ক্রসফায়ারের হুমকি দিয়ে টাকা পয়সা আত্মসাৎ করেছেন এবং মামলা দিয়ে অহেতুক হয়রানি করে চলেছেন। প্রায় দশজনের নির্যাতিত হওয়ার অভিযোগ করলেও লিখিত ওই অভিযোগের কথিত নির্যাতিতদের সাথে যোগাযোগ করলে কোন প্রমাণ তারা দিতে পারেনি এসআই মহিউদ্দিনের বিরুদ্ধে। এবং তথ্যের বিভ্রান্তি পাওয়া যায়।

আবার, হারিছ গ্রুপের পক্ষ থেকে যাদেরকে নির্যাতিত বলা হয়েছে তারা প্রায় সকলেই বিভিন্ন ফৌজদারি অপরাধে যুক্ত ও মামলাপ্রাপ্ত বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে অভিযোগকারী হারিছকে জানতে চাইলে তিনি বলেন ” এসআই মহিউদ্দিন আমাকে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে টাকা চায়। ভুক্তভোগী সবাই তার শিকার। ” একইসাথে হারিছ নিজেকে মাদকসেবি হিসেবে স্বীকারও করেন। তবে মাদক কারবারের কথা অস্বীকার করে।

অভিযুক্ত হাউজিং এর বাপ্পি মৃধা বলেন ” এসআই মহিউদ্দিন একজন দাম্ভিক ও অহংকারী পুলিশ অফিসার। তিনি অভিযোগপত্রের সবাইকে অত্যাচার করেছেন। আর আমাকে তিনি মাদকের শেল্টারদাতা বলে আখ্যা করেছেন। অথচ আমার নামে কোন মাদক,সন্ত্রাস মামলা নাই। এসআই মহিউদ্দিনের অঢেল সম্পদ রয়েছে। ” হারিছ প্রসঙ্গে বাপ্পি স্বীকার করেন হারিছ মাদকসেবি তবে কারবারি বলে অস্বীকার করেন।

এসআই মহিউদ্দিন জানান ” আমি আমার কর্তব্য ঠিকমত পালন করতে বাধ্য। আমি অভিযোগকারীদের হাতেনাতে আটক করি এবং বিভিন্ন অপরাধে মামলা দেই। বিভিন্ন মামলার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী চার্জশিট দেয়াও শেষ। তাই এরা মিলে এসব মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে আমাকে প্রতিহত করতে চেষ্টা করছে। আর আমি কোনদিনই অবৈধ সম্পদের মালিক ছিলামনা। বাকিটা পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তারা ও আমার সিনিয়র অফিসাররা তদন্ত করলে সব জানতে পারবেন।

সূত্র- দৈনিক নাগরিক