আপডেট: নভেম্বর ২৭, ২০১৯
সাঈদ পান্থ
বরিশালের অক্সফোর্ড মিশন চার্চ দেশের অন্যতম অভিজাত ও সুন্দর গির্জা। এই গির্জা নাম এপিফ্যানি গির্জা। ১৯০৩ সালে এই গির্জার প্রতিষ্ঠা। এই গির্জাটি দেখতে দেশী ও বিদেশী পর্যটকের আনাগোনা হয়ে থাকে। এই অপরূপ গির্জাটির সৌন্দর্য্য বিনষ্টে চক্রান্তে নেমেছে একটি চক্র। গুটি কয়েক স্বার্থলোভী ব্যক্তির প্ররোচনায় ও বিতর্কিত ফাদার জন হালদার ক্ষমতা অপব্যবহার করে এই গীর্জার মূল নকশা পরিবর্তন ঘটিয়ে এর সৌন্দর্য-পবিত্রতা বিনষ্ট করার পায়তারা চালাচ্ছে। তারা সেখানে বহুতল বাণিজ্যিক স্টল নির্মাণ করার চেষ্টা চালাচ্ছে। ইতোমধ্যে এই চক্রান্তের প্রতিবাদে বরিশালের খ্রিষ্টীয় সমাজ ও সর্বস্তরের জনগণ সৌন্দর্য-পবিত্রতা রক্ষায় বাণিজ্যিক ষ্টল নির্মাণ চক্রান্ত বন্ধে মানববন্ধন করেছে। এমনকি ওই কুচক্রি মহল বরিশাল সিটি কর্পোরেশন মেয়র বরাবর ষ্টাল নির্মানের অনুমোতি চাইলেও মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ রাজি হননি।
জানা গেছে, একতলা বিশিষ্ট এপিফ্যানি গির্জার মূল প্রার্থনা কক্ষটির আয়তন প্রায় ৫০ ফুট। এ কাঠামোর প্রধান প্রকৌশলী ফ্রেডেরিক ডগলাস। মূলত গ্রিক স্থাপত্য শৈলীতে নির্মিত এ গির্জার প্রধান আকর্ষণ বিশাল ও নান্দনিক প্রার্থনাকক্ষ। এর ছাদ কাঠের তৈরি, আর ফ্লোরে সুদৃশ্য মার্বেলের টাইলস। মূল বেদীর উপর একটি বড় ক্রশ স্থাপিত আছে। এমন স্থাপত্য বৈশিষ্ট্যের গির্জা আর দুটি চোখে পড়ে না। চল্লিশটি খিলানের উপরে এ গির্জাটি দাঁড়য়ে। ৩৫ একর জমির উপরে উঁচু দেয়াল দিয়ে ঘেরা। তেরটি ছোট-বড় পুকুর, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়, আবাসিক ছাত্র হোস্টেল, ফাদার ও সিস্টারদের আবাসন, পাঠাগার ও হাসপাতাল নিয়ে এ চার্চটি অবস্থিত।
লাল ইট দিয়ে নির্মিত শতবর্ষী এই চমৎকার চার্চটি প্রথম থেকে বিদেশী মিশনারীদের তত্বাবধানে ভালভাবে চলছিল এর সকল কার্যক্রম। কিন্তু যখন বিদেশী মিশনারীরা এটির তত্বাবধায়ন ছেড়ে বাঙ্গালীদের হাতে দিয়ে চলে যায়। তারপরও দীর্ঘদিন ভালভাবেই চলছিল এই চার্চ। কিন্তু ২০১৫ সালে নতুন ফাদার হিসেবে দ্বায়িত্ব নেন জন হালদার। তার হাতে দ্বায়িত্ব আসার পর থেকে বড় ফাদার ফ্রান্সিস পান্ডেকে সামনে রেখে বিভিন্ন্ অপকর্মে মেতে ওঠেন বিতর্কীত জন হালদার। প্রথমত, তিনি ক্ষমতায় অধিষ্টিত হয়েই এই ঐতিহ্যবাহি প্রতিষ্ঠানের জমি তারা একান্ত অনুসারীদের নিয়ে ভিন্ন একটি ট্রাষ্ট এসোসিয়েশনের নামে হস্তান্তর করার ঘৃন্য চক্রান্তে মেতে উঠেছিলেন। চার্চের উধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপে সেই মিশন আর সফল হয়নি। দ্বিতীয়ত, ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে প্রাইমারী স্কুলের এসএমসি সভাপতি বিশপ সৌরভ ফলিয়াকে হটিয়ে নিজেই সভাপতি হন। পরে স্কুলের প্রধান শিক্ষককে চাপ দিয়ে ২২ লাখ টাকা স্কুল ফান্ড থেকে উত্তোলন করে নিয়ে যান। একই ভাবে হাই স্কুলের ম্যানেজিং কমিটিতে না থাকার পরও নানা কৌশলে ৭৪ লাখ টাকা স্কুল ফান্ড থেকে তুলে নেন। তৃতীয়ত, বিতর্কীত ফাদার জন হালদার ও তার সহযোগি শিমুল মন্ডলসহ অন্যান্যরা মিলে মিশনের ঐতিহ্যবাহি কলেজ হোষ্টেল ভবন ও পার্শ্বপর্তি শতবর্ষী বেশ কিছু বৃক্ষ নির্বিচারে কর্তণ করে। প্রতিষ্ঠানের বিধিবিধান না মেনে টেন্ডার ছাড়া পানির দরে বিক্রি দেখায়। অন্তরালে চার্চকে ঠকিয়ে লাভবান হন জন হালদার ও শিমুল মন্ডল।
চতুর্থত, কলেজ হোষ্টেল ধ্বংসসহ গির্জার মূল্য নকশা পরিবর্তণ ও সৌন্দয্য হানি তথা পবিত্রতা ক্ষুন্ন করে বহুতল বানিজ্যিক ষ্টল নির্মানের পায়তারা চালায়। আর এই ষ্টল নির্মানের কাজ শিমুলকে দেয়ার চেষ্টা চালায় ফাদার জন। যদিও এই অপকর্ম মেনে নিতে পারেনি বরিশালের খ্রিস্টান সমাজ ও সর্বস্থরের জনগণ। তারা চার্চের কলেজ হোষ্টেল, শত বছরের পুরোন বৃক্ষ, গির্জার সৌন্দর্য-পবিত্রতা, বিনষ্ট করে বাণিজ্যিক স্টল নির্মানের প্রতিবাদে মানববন্ধন করে।
এ ব্যাপারে অক্সফোর্ড মিশনের ফাদার জন হালদার বলেন, ‘২০০৩ সালে কলেজ হোষ্টেল বন্ধ হয়ে যায়। যার কারণে ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। আর কিছু ছোট ছোট গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। শত বছরের গাছ সিডরের সময় পড়ে গেছে। ওটা এখন কাটা হয়নি। ওই স্থানে আমরা ৩ তলা একটি ষ্টল ভবন নির্মানের পরিকল্পনা নিয়ে ছিলাম। সেই অনুযায়ী বরিশাল সিটি কর্পোরেশনকেও প্লান দেয়া হয়েছে। এদিকে গির্জার সৌন্দর্য্য নস্ট হয় ও একটি মানববন্ধন হওয়ায় আমরা নিজেরা সিদ্ধান্ত পাল্টে ফেলি। সেখানে এখন একতলা ষ্টল করার প্লান রয়েছি।’ টেন্ডারের মাধ্যমে গাছ ও ভবন ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে কি না এ প্রসঙ্গে ফাদার জন বলেন, ‘মিশনের আমরা নিজেরাই কাজ করে থাকি। তাই টেন্ডার করা হয়নি। আমাদের লোকেরাই কাজ করেছে। এমনকি নতুন ভবনের কাজও আমরাই করবো।’