আপডেট: এপ্রিল ২৪, ২০২০
করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে সরকারের পক্ষ থেকে ছুটি ঘোষণা করা হয় গত ২৫ মার্চ থেকে।
সারা দেশে ওই দিনই বন্ধ হয়ে যায় গণপরিবহন। বেকার হয়ে পড়ে এই খাতের ৭০ লাখ মানুষ।
মাঝে ছুটির সময়সীমা এক দফা বাড়িয়ে আগামী ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত করা হয়েছে।
সে হিসাবে পরিবহন শ্রমিকদের বেকারত্বের সময় এক মাস পার হতে চলেছে।
আর উপার্জন হারিয়ে এই বিপুল মানুষ চরম দুর্দশায় পতিত হয়েছে।
সূত্র জানায়, দেশে পরিবহন শ্রমিকদের কোনো নিয়োগপত্র দেওয়া হয় না।
মালিকরা শ্রমিকদের প্রতিদিনের মজুরি প্রতিদিন পরিশোধ করেন।
সে হিসাবে দিনের আয়ে দিন চলে পরিবহন শ্রমিকদের।
আর নথিভুক্ত তালিকা অনুসারে দেশে পরিবহন খাতে কার্ডধারী শ্রমিক ৫০ লাখ।
এর বাইরে হিউম্যান হলারসহ বিভিন্ন ধরনের পরিবহনে কর্মরত শ্রমিকসংখ্যা ২০ লাখ।
কর্মহীন এসব শ্রমিক এখন দুঃসময় পার করছেন।
বেশির ভাগই কোনো খাদ্য সহায়তা পাননি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে পরিবহন মালিকরা কিছু অনুদান দিলেও তা পর্যাপ্ত নয়।
পরিবহনসহ আরো কয়েকটি শ্রমিক সংগঠনের জন্য সরকার ৭৬০ কোটি টাকা প্রণোদনার পরিপত্র জারি করলেও পরিবহন শ্রমিকরা ওই প্রণোদনার অর্থ কার কাছ থেকে কিভাবে গ্রহণ করবেন তা স্পষ্ট করা হয়নি।
গতকাল বুধবার সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা যায়, কয়েক শ’ শ্রমিক অবস্থান করে আছেন।
এ সময় শ্রমিক নেতা আবদুল কাদের কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মাঝে মাঝে মালিকরা কিছু টাকা দেন। তা দিয়ে আমরা এখানে রান্না করে খাই।
কোনো কোনো দিন না খেয়েও থাকতে হচ্ছে।’
মিরপুরের বিকল্প পরিবহনের চালক জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা দিনের মজুরিতে দিন চলি।
প্রায় এক মাস বেকার হয়ে আছি।
এখন কেউ ধারও দেয় না।
এক বেলার খাবার দিয়ে সারা দিন চলতে হয়।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী বলেন, ‘২৫ মার্চ পরিবহন বন্ধ ঘোষণার পর শ্রমিকদের জন্য ত্রাণ সহায়তা চেয়ে ২৭ মার্চ আমরা সরকারকে চিঠি দিয়েছি।
সরকারের পক্ষ থেকে একবার বলা হচ্ছে মন্ত্রণালয়ে তালিকা দিতে, আবার বলা হচ্ছে জেলা প্রশাসকের কাছে দিতে।
এক জেলায় আমরা এক হাজার শ্রমিকের তালিকা দিয়েছিলাম; ওই জেলায় ত্রাণ দেওয়া হয়েছে চার শ শ্রমিককে।
গত ৫ এপ্রিল সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ে আমরা আবারও চিঠি দিয়ে বলেছি, আমাদের ত্রাণের প্রয়োজন নেই, প্রতিটি বাস টার্মিনালে ওএমএসের মাধ্যমে পণ্য বিক্রি করুন। শ্রমিকরা কার্ড দেখিয়ে পণ্য কিনে নেবে।
আমরা ইউনিয়নের কল্যাণ ফান্ড থেকে শ্রমিকদের টাকা দেব।
সে বিষয়েও আমাদের কোনো সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি।’
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শাহজাহান খান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘পরিবহন শ্রমিকরা একেবারেই সহায়তা পাচ্ছে না তা নয়; তবে এটা ঠিক, সবাই এখনো পায়নি।
প্রধানমন্ত্রী ইতিমধ্যে কয়েক
শ্রেণীর শ্রমিকের জন্য ৭৬০ কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করেছেন।
আমরা তিনটি খাত থেকে পরিবহন শ্রমিকদের সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করছি—সরকারি প্রণোদনা, মালিকদের অনুদান ও শ্রমিক কল্যাণ তহবিল।
এ ছাড়া সরকারের কাছে থাকা শ্রমিক কল্যাণ ফান্ডের টাকা চেয়েছি।’
শাহজাহান খান জানান, শ্রমিকদের সহায়তা দেওয়া হবে প্রশাসনের মাধ্যমে।
যেসব শ্রমিক জেলায় রয়েছেন তাঁরা পাবেন জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে এবং ঢাকাসহ সিটি করপোরেশনগুলোতে থাকা শ্রমিকরা পাবেন সিটি করপোরেশনের মাধ্যমে।
খাতগুলোর সমন্বয় হলেই পরিবহন শ্রমিকদের বিষয়টির সমাধান হয়ে যাবে আশা করা যায়।
ঢাকা জেলা সড়ক পরিবহন ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. বাচ্চু বলেন, ‘সরকার প্রণোদনার কথা বলছে; কিন্তু তা কিভাবে বিতরণ হবে সে ব্যাপারে সুস্পষ্ট কোনো বক্তব্য নেই।
ওদিকে শ্রমিকরা চরম দুরবস্থায় রয়েছে।
তারা খাবারের জন্য রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছে।