আপডেট: এপ্রিল ২৯, ২০২০
করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করা দেশের প্রথম সাংবাদিক হুমায়ুন কবির খোকনের মৃত্যুতে তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন দৈনিক যুগান্তরের সম্পাদক ও জাতীয় প্রেসক্লাব সভাপতি সাইফুল আলম।
বুধবার রাতে অনলাইনে এক ভিডিওবার্তায় তিনি বলেন, গণমাধ্যমকর্মীরা যে দুর্ভাগ্য ও করোনার শিকার; খোকনের মৃত্যু তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে।
দেশের এই প্রবীণ সাংবাদিক বলেন, করোনাভাইরাস এই মুহূর্তে সারা বিশ্বকে নাড়া দিয়েছে।
বাংলাদেশেও উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার শেষ নেই।
সর্বশেষ যেটি ঘটলো, আমাদের সহকর্মী সাংবাদিক হুমায়ুন কবির খোকন ভাইরাসটিতে সংক্রমিত হয়ে ইন্তেকাল করেছেন।
তার রুহের মাগফিরাত কামনা করে তিনি জানান, এ ঘটনায় আমরা ভারাক্রান্ত ও শোকাহত।
বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে করোনাভাইরাস প্রতিরোধের লড়াই চলছে। সেই যুদ্ধে গণমাধ্যমকর্মীদের সম্মুখসারির যোদ্ধা আখ্যায়িত করে সাইফুল আলম বলেন, সংবাদকর্মীদের প্রতিকূলতা বহুমুখী।
খবরের একেবারে উৎসমূলে তাদের যেতে হয়। যে কারণে ঝুঁকিটাও অনেক বেশি।
‘খোকন সেই ঝুঁকি নিয়েছেন।
অসুস্থ হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি পেশাগত দায়িত্ব পালন করেছেন, কোনো ছাড় দেননি।’
জাতীয় প্রেসক্লাব সভাপতি বলেন, পেশার প্রতি আমাদের যে দায়বদ্ধতা, সেটি রক্ষা করি। তবে এটাও সত্য যে দায়বদ্ধতা, পেশাদারিত্বের পাশাপাশি করোনাভাইরাস নামের যে অদৃশ্য শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই, তাতে সম্মুখসারির যোদ্ধা হিসেবে আমাদের নিরাপত্তার বিষয়টিতেও অনেক বেশি প্রাধান্য দিতে হবে।
‘জীবনের ও চলাচলের নিরাপত্তা, সংবাদ সংগ্রহের ক্ষেত্রে অবাধ সুযোগ এবং এগুলো করতে গিয়ে গণমাধ্যমের কর্মীদের যে সুরক্ষা দরকার, তা পরিপূর্ণভাবে গ্রহণ করেই, আমার মনে হয়, দায়িত্ব পালনে অগ্রসর হওয়া দরকার,’ বললেন সাইফুল আলম।
তিনি জানান, প্রতিটি গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানে সেই সতর্কতা ও প্রতিরোধ ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু তারপরেও আমরা দুর্ভাগ্যের শিকার।
বেশ কিছু সাংবাদিক করোনা আক্রান্ত।
অনেকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, কেউ কেউ বাসায় আইসোলেশনে।
এই পরিস্থিতিকে জটিল উল্লেখ করে যুগান্তর সম্পাদক বলেন, তারপরেও খোকন তার পেশাদারিত্বের মধ্য দিয়েই যে উদহারণ রেখে গেছেন, তা আমাদের কাজের ও পেশার প্রতি উৎসাহ বাড়িয়ে দেবে।
‘তার এই আত্মত্যাগে পেশার প্রতি আমরা আরও বেশি নিবেদিত হবো, আরও বেশি কাজ করবো।
পাশাপাশি মানুষ হিসেবে নিজেদের সুরক্ষা ও নিজেদের জীবনের প্রতি যত্নবান হবো।’
তিনি বলেন, আমাদের মাঝ থেকে খোকন চলে গেছেন, আর ফিরবেন না, কিন্তু তার পরিবার ও সংবাদপত্র জগতের অনেক ক্ষতি হয়ে গেল।
সেক্ষেত্রে কেবল শোকাহত বলে ক্ষান্ত হলেই চলবে না বলে জানান সাইফুল আলম।
বললেন, নিরাপত্তা ও পেশাদারিত্ব বজায় রেখেই সংবাদ সংগ্রহ করে তা পাঠক ও দর্শকের কাছে পৌঁছাব।
প্রাতিষ্ঠানিক, ব্যক্তিগত ও পারিবারিক পর্যায়ে এই নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে বলে তিনি জানান।
জাতীয় প্রেসক্লাব সভাপতি আরও বলেন, ইতিমধ্যে প্রিন্ট মিডিয়ার পৃষ্ঠা সংখ্যা কমিয়ে দেয়া হয়েছে।
বহু কর্মকর্তা ও সাংবাদিককে ছুটিতে রাখা হয়েছে।
অনলাইনগুলো অধিকাংশই বাড়ি থেকে কাজ করছে।
কাজেই সর্বাত্মক প্রতিরোধ ও নিরাপত্তা গ্রহণ করেই দায়িত্ব পালন করতে হবে।
তার মতে, আক্রান্ত হওয়ার পরে যে ঘটনা ঘটে, অনেক ক্ষেত্রে মৃত্যু অনিবার্য হয়ে পড়লে সেই ক্ষতি আমরা পুষিয়ে নিতে পারবো না। সে ব্যাপারেও সতর্ক থাকতে হবে।
প্রতিষ্ঠানগুলোকে দায়িত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।
সাংবাদিক সংগঠন ও নেতৃবৃন্দ দীর্ঘদিন বিষয়টি নিয়ে কথা বলছেন বলেও মন্তব্য করেন সাইফুল আলম।
দৈনিক সময়ের আলো পত্রিকার প্রধান প্রতিবেদক হুমায়ুন কবির খোকনকে মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর উত্তরার একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেয়ার ঘণ্টাখানেকের মধ্যে মারা যান।
তীব্র শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে যাওয়া খোকনের নমুনা পরীক্ষায় কোভিড-১৯ সংক্রমণ পাওয়া গেছে।
বুধবার দুপুরে গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার মুরাদনগরে খোকনকে দাফন করা হয়েছে।
এদিকে ঢাকার মহাখালীতে তার পরিবারকে বাসায় আইসোলেশনে থাকতে বলা হয়েছে।
স্ত্রী, দুই মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে হুমায়ুন কবির খোকনের।
ছেলে-মেয়েরা সবাই এখনও লেখাপড়া করেন।