আপডেট: অক্টোবর ৮, ২০২০
ইতালী প্রতিনিধিঃ
ইতালীতে কয়েকটি পরিবারের কাছ থেকে ৪ কোটি টাকার বিশাল অংকের আর্থিক প্রতারনা ও আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে ইতালী প্রবাসী ময়মনসিংহের গফরগাওয়ের নিগুয়ারি গ্রামের মোহাম্মদ লিটনের বিরুদ্ধে। হোটেল ব্যবসায় প্রচুর মুনাফার লোভ দেখিয়ে এসব অর্থ হাতিয়ে নেয় মোহাম্মদ লিটন। রোমের বাংলাদেশ দূতাবাস, বাংলাদেশ কমিউনিটি নেতৃবৃন্দকে অবহিত করলেও কোনও অর্থ আদায় করতে সক্ষম হয়নি পরিবারগুলো। উপায়ন্তর না পেয়ে সংবাদ মাধ্যমের দ্বারস্থ হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী জাহিরুল ইসলাম।
বুধবার রাতে রোমের স্থানীয় একটি হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন জহিরুল ইসলাম। লিখিত বক্তব্যে জহিরুল ইসলাম পুরো ঘটনা তুলে ধরে বলেন, আমি প্রায় ২০ বছর ইতালীতে বসবাস করছি। ময়মনসিংহের গফরগাঁও এলাকার মোহাম্মদ লিটন এর সাথে ইতালীর ভিসেন্সা শহরে আমার মেজো ভাই আমিনুল ইসলামের সাথে পরিচয় হয়। সেইসূত্রে ২০১৫ সালে আমাদেরকে রোমে আসতে বলে এবং হোটেল ব্যবসায় বিনিয়োগ করার পরামর্শ দেয়। পরামর্শ্ মোতাবেক আমরা দেশের সকল জমি এবং বসবাসের বাড়ি বিক্রয় করে মোহাম্মদ লিটনকে তিন বারে মোট ৪ লাখ ইউরো (৪ কোটি টাকা) নগদ প্রদান করি। আমি এবং আমার পরিবারের আরও ৪ জন মিলে এই টাকাগুলো লিটনকে দেই। এ টাকার বিনিময়ে আমাকে ইতালীর রাজধানী রোমের টেরমিনির ভিয়া মাজ্জেনটা- ১৩ এ ঠিকানায় অবস্থিত ৩০ রুমের একটি থ্রি স্টার হোটেল ‘জর্জি’ এর ৫০ শতাংশ শেয়ার আমার নামে ক্রয়ের প্রতিশ্রুতি দেয়। একইসাথে রোমে একটি রেস্টুরেন্ট, ঢাকার মানিকদিতে ‘স্বপ্নচূড়া বিল্ডার্স’ এ শেয়ার হোল্ডার, উত্তরাতে একটি রেস্টুরেন্ট এবং ময়মনসিংহে একটি ইটভাটায় পার্টনার রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আমাদের কাছ থেকে বিশাল অংকের এই টাকা হাতিয়ে নেয়। কিন্তু বাস্তবে আমাদের সরল বিশ্বাসের সাথে মোহাম্মদ লিটন চরমভাবে প্রতারনা করে। পুরো ৪ লাখ ইউরো নেয়ার পর আমার শেয়ার প্রতারনা করে মোহাম্মদ লিটন তাঁর নামে লিখে নেয়। এ ঘটনা আমি জানতে পেরে একপর্যায়ে আমি প্রদত্ত টাকা ফেরত চাই। কয়েক বছর ঘুরেও টাকা না পাওয়ায় আমি ইতালীয় আইনের আশ্রয় নেই।কোর্টের নির্দেশ সত্ত্বেও মোহাম্মদ লিটন আমাকে অধ্যাবধি কোনও অর্থ পরিশোধ করে নাই। বিষয়টি আমি রোমের সকল বাংলাদেশী কমিউনিটি নেতৃবৃন্দকে অবগত করেছি। একই সাথে রোমের বাংলাদেশ দূতাবাসকে অবহিত করি। বাংলাদেশ দূতাবাস সকল ডকুমেন্ট ইতালীর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করে। আমি পাওনা টাকা চাইলে গেলে মোহাম্মদ লিটন আমাদের পরিবারকে বিভিন্নভাবে হুমকি দেয় এবং প্রাণে মেরে ফেলার জন্য গত ৮ আগস্ট টেলিফোনে হুমকি দেয়। একইসাথে মোহাম্মদ লিটন সরকারের উচ্চ পর্যায়ের মন্ত্রী, এমপি এবং প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে ছবি রয়েছে এমন ছবি দেখিয়ে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। এতে আমাদের পুরো পরিবার আতঙ্কে রয়েছি এবং নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। এমনকি আমার টাকা আত্মসাত করে নিজের নামে ইতালীতে হোটেল ক্রয় করে লিটন বিশাল টাকার মালিক এখন। এ যেন হুবহু ইতালীতে আরেক দ্বিতীয় সাহেদ।
প্রধানমন্ত্রীসহ বিভিন্ন মন্ত্রী, এমপির সাথে ছবি দেখিয়ে মোহাম্মদ লিটন ইতালীতে অসংখ্য লোকের কাছ থেকে বিপুল অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। ইতোমধ্যে ইতালীতে ৮টি মামলা হয়েছে লিটনের নামে। শারিরীকিভাবে লাঞ্চিত হয়েছে একাধিকবার। রোমে সামাজিকভাবে বয়কট করা হয়েছে। বিভিন্ন জনের কাছ থেকে বিশাল অংকের টাকা হাতিয়ে ঢাকায় কয়েকটি বাড়ি ক্রয় করেছে।
ভুক্তভোগী জহিরুল মিডিয়ার সার্বিক সহায়তা ও সাহায্য কামনা করেন। তিনি আরও বলেন, আমিসহ ৫টি পরিবার আজ সর্বস্ব হারিয়ে অসহায় ও নিঃস্ব। মানসিকভাবে চরম হতাশার মধ্যে দিনাতিপাত করছি। আপনারা আমাদের বাঁচান, আল্লাহ আপনাদের সহায় হবেন।