আপডেট: মে ৫, ২০২২
পবিত্র ঈদুল ফিতরের ছুটি শেষে কর্মস্থলে যোগ দিতে নৌপথে ঢাকা ফিরতে শুরু করেছেন দক্ষিণাঞ্চলের কর্মজীবী মানুষ। পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগির সেই সুখের স্মৃতি নিয়ে অনেকেই বুধবার থেকে কর্মস্থলে ফেরার যুদ্ধ শুরু করেছেন। তবে বুধবারের তুলনায় আজ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা উপজেলা থেকে আসা যাত্রীতে কানায় কানায় ভর্তি হয়ে গেছে লঞ্চগুলো।
বৃহস্পতিবার (৫ মে) সরকারি-বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠান খুললেও অনেকে আবার একদিন ছুটি বাড়িয়ে নিয়েছেন। শুক্রবার ও শনিবার ছুটি কাটিয়ে রোববার থেকে অফিস করার আসায়।
এদিকে ঢাকায় ফেরার জন্য বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই লোকজন ভীড় করতে দেখা যায় লঞ্চ ও বাস টার্মিনালে। প্রতিটি জায়গায় ঢাকায় ফেরা মানুষের ভিড় দেখা গেছে।
বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত বরিশাল নদী বন্দর থেকে ১২টি লঞ্চ যাত্রী নিয়ে রাজধানী ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে গেছে বলে জানান নদী বন্দর কর্মকর্তা।
প্রতিটি লঞ্চেই যাত্রীর সংখ্যা স্বভাবিক সময়ের চেয়ে দ্বিগুণ বেশি দেখা গেছে। যাত্রীরা বলেন, ঈদের ছুটি শেষ হয়ে যাওয়ায় অতিরিক্ত যাত্রী হয়েই তাদের কর্মস্থলে ফিরতে হচ্ছে। তবে যাত্রীর এ চাপ শুক্র ও শনিবার আরও বাড়বে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
কুয়াকাটা-২ লঞ্চের কেবিনের যাত্রী সজিব ঢাকা মেইলকে জানান, লঞ্চের টিকিটে বিকেল ৫টার মধ্যে লঞ্চ ছাড়ার নির্দেশনা দেওয়া ছিল। সে অনুযায়ী বিকেল ৪টার মধ্যে লঞ্চ ঘাটে এসে পৌঁছাই। অথচ সেই লঞ্চ ছেড়েছে রাত সোয়া ৯টায়। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভিড় এত বাড়তে থাকে যে কেবিনের দরজা পর্যন্ত খোলা সম্ভব হচ্ছে না। পুরো লঞ্চের মধ্যে পা ফেলার মতো জায়গা নেই। এমনকি লঞ্চের নামাজের স্থান টুকু পর্যন্ত যাত্রীতে পরিপূর্ণ।
বৃহস্পতিবার ঢাকার উদ্দেশ্যে ওঠা সুন্দরবন ১১ লঞ্চের যাত্রী মনির হাওলাদার বলেন, ‘রোববার থেকে অফিস শুরু হবে। আজ ঢাকা গিয়ে দু’দিন আত্নীয় স্বজনের বাড়িতে বেড়াবো, তারপর রোববার থেকে অফিস শুরু করবো। কিন্তু বেলা সাড়ে তিনটার সময় লঞ্চ উঠছি অথচ রাতে পৌনে ৯টা বাজে লঞ্চ ছাড়েনি। এ অবস্থায় পরিবার নিয়ে ব্যাপক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
অপর এক যাত্রী শারমিন বলেন, আসার সময় সারা রাত লঞ্চে কষ্ট করে আসছি, এখন আবার কষ্ট করেই কর্মস্থলে ফিরতে হচ্ছে। বিকেল ৫ টা থেকে নদী বন্দরে পুলিশ ও কিছু লোকজনকে হাতে মাইক নিয়ে অতিরিক্ত যাত্রী না ওঠা ও নির্ধারিত যাত্রী নিয়ে সময়মত লঞ্চ ছাড়ার জন্য মাইকিং করতে দেখছি। অথচ কে শোনে কার কথা। টিকিটের গায়ে ৫ টায় লঞ্চ ছাড়ার কথা থাকলেও কোন লঞ্চ নির্ধারিত সময়ে ছাড়তে দেখিনি।
যাত্রীদের অভিযোগ, বিকেল ৫টায় লঞ্চগুলো ছাড়ার কথা থাকলেও রাত ৯ টার আগে কোন লঞ্চ ছাড়েনি। এ অবস্থায় সাধারণ যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে।
এদিকে নদী বন্দরে যাত্রীদের নিরাপত্তায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের সদস্যরাও রয়েছে। এছাড়া লঞ্চগুলো যাতে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই না করতে পারে সেটি তদারকির জন্য জেলা প্রশাসন ও বিআইডব্লিউটিএ কাজ করছে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) বরিশালের নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিদর্শক কবির হোসেন বলেন, আমরা সার্বক্ষণিক তদারকি করছি যাতে অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে কোনও লঞ্চ না ছাড়ে। এছাড়াও আমাদের সার্বিক সহায়তায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা রয়েছে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) এর যুগ্ম পরিচালক বরিশাল নদী বন্দর কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বরিশাল নদী বন্দর থেকে আজ ১২টি লঞ্চ ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে গেছে। পাশাপাশি আরও দুটো ভায়া লঞ্চ বরিশাল নদী বন্দর হয়ে ঢাকায় যাবে।
তিনি আরও বলেন, যাত্রীদের নিরাপত্তা দিতে বন্দর কর্তৃপক্ষ সবসময় সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছে। লঞ্চগুলো যাতে অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে ছাড়তে না পারে সেজন্য জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেট টিমের পাশাপাশি আমাদের সার্বিক সহায়তায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দায়িত্ব পালন করছে।