আপডেট: আগস্ট ৩, ২০২০
বরিশালে পবিত্র ঈদুল আজহায় কোরবানির পশুর চামড়ার দামে পানিও পাওয়া যায়না। মাদ্রাসা এতিমখানার কর্তৃপক্ষ কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছে। ঢাকার আড়তদার ট্যানারী মালিকদের কাছ থেকে বকেয়া টাকায় আদায় করতে না পেরে বরিশালের ঐতিহ্যবাহী চামড়া ক্রয় করার পদ্ধাবতী এলাকার অধিকাংশ ব্যবসায়ী ব্যবসা থেকে হাত গুঠিয়ে নেয়ার কারনে কোন রকম পুরনাতন ব্যবসা টিকিয়ে রাখার লক্ষ সেই সাথে নতুন করে চামরা ক্রয় ও রপ্তানী করে বকেয়া টাকা আদায় করার জন্য হাতে গোনা ৪ থেকে ৫জন ব্যবসায়ী পশুর চামড়া ক্রয় করতে দেখা গেছে।
এবার অধিকাংশ পশুর চামড়া এসেছে বরিশাল নগরীর বিভিন্ন মাদ্রাসা,এতিমখানা থেকে। বাজারে চামড়ার দাম না থাকার কারনে এবার হারিয়ে গেছে মৌসুমী চামড়া ব্যবসায়ীরা।
লক্ষ লক্ষ টাকার নামী-দামী ষাঁেড়র চামড়া ক্রয় করেছে ৫শ’ থেকে সর্বচ্চ ৬শ টাকায়,এছাড়া গরুর চামড়া ক্রয় করেছে ২’শ থেকে ২৫০ টাকায়।
অপরদিকে খাশী ও ছাগলের চামড়ার দাম না থাকার কারনে রাগ করে অনেকে ফেলে দিয়ে গেছে। অন্যদিকে চামড়া ক্রয় করার পরও সেই সাথে বাজারে চামড়া প্রক্রিয়াজাত করার ক্ষেত্রে কাচা লবনের মূল্য বেশী। এছাড়া প্রতিটি চামড়া ট্যানীরিতে পাটাবার জন্য প্রতিটি চামড়া পরিপূন্ন করতে লবন ও লেবার খরচ গিয়ে পড়ে ৭শ টাকা।
এব্যাপারে রবিবার ঈদুল-আযহার দ্বীতিয় দিন রবিবার পদ্ধাবতী এলাকার সরেজমিনে গেলে দেখা যায় বরিশাল পদ্ধাবতী এলাকার চামড়া ব্যবসা সমিতির সদস্য মোঃ নাসির ছাড়া আর কোন ব্যবসায়ী নেই।
তিনি বলেন এবার চামড়ার বাজার গতবারের চেয়ে খুবই খারাপ। শুধু ব্যবসা টিকিয়ে রাখার জন্য মাল কিনতে হয়েছে তবে এটাকা কবে পাব জানি না।
গতবারের বকেয়া টাকার চেহারাতো দেখি নাই। তিনি জানান, প্রতিবছর কোরবানীর সময়ে বেশ কিছু মৌসুমী ব্যবসায়ীর পাশাপাশি কিছু সংক্ষক যুবক শ্রেনীর সদস্যরা চামড়া ক্রয় করে আমাদের কাছে বিক্রি করতে আসত।
এবার ৪ থেকে ৬ জন মৌসুমী ব্যবসায়ীর চেহারা দেখেছি। এছাড়া আমাদের সব চামড়া বিভিন্ন মাদ্রাসা ও এতিমখানা থেকে আসা তাদের কাছ থেকে ক্রয় করা হয়েছে।
অপরদিকে দেখা যায় ক্রয় করা চামড়া নষ্ট হয়ে যাবার ভয়ে অতিরিক্ত লেবার খরচ দিয়ে চামড়া প্রক্রিয়াজাত করার জন্য দ্রুত কাজ করানো হচ্ছে।
জানা গেছে বেশির ভাগ এলাকায় যারা পশু জবাই দিয়েছে এবং চামড়া দাম না থাকার কারনে তারা বিভিন্ন মাদ্রসা ও এতিমখানায় আলাহ’র ওয়াস্তে দিয়েছে।
অন্যদিকে বিক্রেতারা বরিশালে পানির দরের চেয়ে কমদামে চামড়া বিক্রির কথা জানালেও ব্যবসায়ীরা বলেছেন, গত বছরের চেয়ে এবছর চামড়ার দাম বেশি দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি পুঁজির স্বল্পতার কারণে চামড়ার দাম কমেছে।
বরিশালে পশুর চামড়ার পাইকারি বাজার পদ্মবতী এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, এ বছরে মাত্র চারজন ব্যবসায়ী পশুর চামড়া ক্রয় করেছেন।
কোরবানী উপলক্ষে বাজার থেকে সোয়া লাখ টাকার ওপরে কেনা গরুর চামড়া বিক্রি হয়েছে ৩৫০ টাকা, অপরদিকে কয়েক লক্ষ টাকায় কেনা বড় জাতের ষাঁড়ের চামড়া ৫শ’ থেকে সর্বচ্চ ৬শ’টাকা। ৭০ থেকে লাখ টাকার দামের গরুর চামড়া ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা এবং ৪০ হাজার থেকে ৬০ হাজার টাকার গরুর চামড়া বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ২৫০ টাকায়। আর ১০ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকার ছাগলের চামড়া বিক্রি হয়েছে ১০ থেকে ২০ টাকায় এমনি ক কেহ কেহ রাগ করে ফেলে দিয়ে গেছেন বলে জানান ব্যবসায়ী নাসির।।
বিক্রেতারা বলছেন, অন্য বছর কোরবানির পশু জবাই করার পরপরই মৌসুমি ব্যবসায়ীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে চামড়া কিনতেন। চামড়া দাম দিত ৫শ’ থেকে দুই হাজার ৫শ’ টাকা পর্যন্ত।আর ছাগলের চামড়া বিক্রি হতো ২শ’ থেকে ৫শ’ টাকা। আর এবছরে গরুর ও ছাগলের চামড়া বিক্রি হচ্ছে পানির দামের দামের চেয়ে কম, পানি কিনতেও এর চেয়ে বেশী টাকা লাগে।
বর্তমানে লাখ টাকার গরুর চামড়ার দাম বিগত বছরের ছাগলের চামড়া দামও পাওয়া যায় না। আর ছাগলের চামড়া তো ফ্রি, না হলে ফেলে দিতে হয়।বাজারের চামড়ার দাম কম থাকায় বেশির ভাগ মানুষ বিনামূল্যে পাশুর চমড়া দান করেছে দরিদ্র ও প্রতিবেশী, এতিমখানা ও মাদরাসায়। কয়েকটি মাদরাসার শিক্ষকরা বলেন, আমরা ২০টি গরুর চামড়া সংগ্রহ করেছিলাম। পাইকারি বাজারে এসে তা ৭ হাজার টাকা থেকে ৮ হাজার টাকায় বিক্রি করতে হয়েছে। এসকল চামড়া বেশির ভাগ দানকৃত তা না হলে পুঁজিই ওঠানো যেত না।
ব্যবসায়ী নাসির বলেন গত বছর তারা ১০ হাজারের বেশী চামড়া ক্রয় করেছি। এবছর একেইতো খুব সংক্ষক মানুষ কোরবানী দিয়েছে রবিবার পর্যন্ত প্রায় হাজারের মত চামড়া ক্রয় করেছি।
মৌসুমি চামড়া বিক্রেতারা বলেন, চামড়া নিয়ে এসেছি বরিশালের বাহির থেকে। গরুর চামড়ার দাম পাওয়া গেলেও ছাগলের চামড়ার দাম দিল না। ছাগলের চামড়া দিতে বলেন পরে ১০ টাকা ২০ টাকা দিয়ে বলে, পান-সিগারেট খাইয়েন।পদ্মবতী এলাকার পশুর চামড়া ব্যবসায়ী আবদুল জলিল জানান, প্রতিবছর ঢাকার আড়তদারা কোরবানির আগে পাইকারি ব্যবসায়ীদের বকেয়া পরিশোধ করতেন। পাশাপাশি কোরবানির পশুর চামড়া কেনার জন্য আগাম পুঁজিও দিতেন। এবছর আগাম পুঁজিতো দূরের কথা বকেয়ার কানাকড়িও পরিশোধ করেননি আড়তদার ট্যানারী কর্তৃপক্ষ। তাই পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে পুঁজি না পেয়ে এবার নিজের স্বল্পপুঁজিতে চামড়া কেনেন ব্যবসায়ীরা।
বরিশালের চামড়া ক্রয়কারী ব্যবসায়ী সমিতির সাধারন সম্পাদক শাহিদুর রহমান শাহিন বলেন, এভাবে চামড়ার বাজার চলতে থাকলে সামনে হয়ত অনেকেই চামড়া ব্যবসা থেকে সরে দাঁড়িয়েছে।
বদলে গেছে পদ্ধবতী এলাকার চেহারা। ইতি মধ্যে অনেকেই এব্যবসা থেকে সরে অন্য ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছে। লক্ষ লক্ষ টাকা পুজি খাটিয়ে তা আবার বছরের পর বছর আড়তদার কাছে কেহ ঘুড়তে চায় না।