আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২০
রাতে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় উঠে ছিনতাই ও হত্যাকারী চক্রের কবলে পড়েছে এমন প্রায় ৩০০ জনের ব্যাপারে তথ্য পেয়েছে পুলিশ।
তাদের বেশির ভাগই শ্রমজীবী, যারা ঢাকা ও ঢাকার উপকণ্ঠে জীবিকার কারণে রাতে বাইরে ছিল।
এসব ঘটনায় বেঁচে যাওয়া ভুক্তভোগীরা পুলিশের কাছে যায়নি।
এমনকি হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়াদের লাশ উদ্ধারের ঘটনাও সড়ক দুর্ঘটনা বলে ধারণা করা হয়েছিল।
চক্রের গ্রেপ্তারকৃত সদস্যরা জিজ্ঞাসাবাদে ঢাকায় চারটি হত্যাকাণ্ড ছাড়াও গাজীপুর, টঙ্গী, সাইনবোর্ড এলাকায় কয়েকটি লাশ ফেলেছে বলে জানায়।
এর মধ্যে টঙ্গী ও গাজীপুর এলাকায় দুটি লাশ উদ্ধারের তথ্য পেয়েছেন তদন্তকারীরা।
অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী এক নারী ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় তাঁর বাবার ‘দুর্ঘটনায়’ মৃত্যু নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।
ছিনতাইকারীচক্রের সদস্যরা অটোরিকশাচালক ছাড়াও সবজি বিক্রেতা, লেগুনাচালক, পাখি বিক্রেতার ছদ্মবেশে চলাচল করত।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগের ধারাবাহিক অভিযানে এই চক্রের অটোরিকশাচালকসহ তিনজন গ্রেপ্তার, দুজন বন্দুকযুদ্ধে নিহত এবং সর্বশেষ আরো দুজন গ্রেপ্তার হয়েছে।
চক্রটিকে অটোরিকশা সরবরাহকারী গোলাম মোস্তফা জীবন ও অটোরিকশার মালিক রফিকুল ইসলাম গ্রেপ্তার হওয়ার পর এসব নতুন তথ্য পেয়েছেন তদন্তকারীরা।
রফিকুল ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
এ ছাড়া পুলিশের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করে এবং সামাজিক মাধ্যমেও তথ্য দিচ্ছেন ভুক্তভোগীরা।
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, জীবন ছিল আটজনের ছিনতাইকারী দলের সমন্বয়ক।
এ দলের আরো চারজন আছে বলে জানা গেছে।
জীবন চালানোর কথা বলে অটোরিকশা নিয়ে সহযোগীদের কাছে ভাড়া দিতেন।
ছিনতাই করা টাকা অটোরিকশায় থাকা তিনজনের সঙ্গে একটি ভাগ নিতেন জীবন।
তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) বিপ্লব বিজয় তালুকদার বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র মিজান খুনের তদন্ত করতে গিয়ে ছিনতাইকারীচক্রটিকে শনাক্ত করা গেছে।
এই দলের পাঁচজনকে এরই মধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দুজন অভিযানে নিহত হয়েছে।
তারা আড়ালে থেকে আড়াই হাজারের মতো ছিনতাই করেছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে।
অটোরিকশায় গামছা ও মাফলার দিয়ে শ্বাস রোধ করে অনেককে তারা হত্যা করেছে।
এর মধ্যে তেজগাঁও ও কুড়িল ফ্লাইওভার এলাকার চারটি খুনের ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত হয়েছি।’
গত ৫ জানুয়ারি হাতিরঝিলের ফ্লাইওভারের কারওয়ান বাজার অংশে মিজানুর রহমান নামে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের এক শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
এ ঘটনার তদন্তে নেমে তেজগাঁও বিভাগের পুলিশ সিএনজিচালিত অটোরিকশায় একজন করে যাত্রী তুলে গামছা দিয়ে শ্বাস রোধ করে হত্যার তথ্য পায়।
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, চক্রের অন্যতম সদস্য শাহিন পাখি ব্যবসায়ী ছদ্ম পরিচয়ে অনেক দিন ধরে ছিনতাই করে আসছিলেন।
আর নাজমুল লেগুনাচালক ছিলেন।
তাঁরা প্রতি রাতে জীবনের কাছ থেকে অটোরিকশা নিয়ে বের হতেন।
টঙ্গীর হোন্ডা রোড এলাকার শাহিন মাদারীপুরের শিবচরের মুন্সী কাদিরপুর গ্রামের নূরুল ইসলামের ছেলে।
আর গাজীপুরা এলাকার বাসিন্দা নাজমুল শেরপুরের নালিতাবাড়ীর ওয়াহেদ আলীর ছেলে।
শাহিনের ভাই বাচ্চু মিয়া ও নাজমুলের মা নাজমা বেগম জানান, দুজনের নামে আগে কোনো মামলা ছিল না।
তাঁরা কোনো অপরাধে জড়িত ছিলেন—এমন কথা কেউই জানতেন না।
তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) হাফিজ আল ফারুক জানান, ফেসবুকে ও সরাসরি যোগাযোগ করে অনেকে অটোরিকশায় প্রায় ৩০০ ছিনতাইয়ের ঘটনার ব্যাপারে জানিয়েছে।
এসব ঘটনার শিকার বেশির ভাগই শ্রমজীবী মানুষ।
তারা পুলিশের কাছে যায়নি।
নিহত হলেও দুর্ঘটনা বলে ধারণা করা হয়।