আপডেট: অক্টোবর ২৪, ২০২১
“খাদ্যদ্রব্যে ট্রান্স ফ্যাটি এসিড নিয়ন্ত্রণ প্রবিধানমালা, ২০২১” প্রণয়নের কাজ শেষ করেছে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। ২০২৩ সালের মধ্যে খাদ্য শৃঙ্খল থেকে শিল্পোৎপাদিত ট্রান্সফ্যাট নির্মূলের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নির্ধারিত লক্ষ্য অর্জন করার জন্যই এই প্রবিধানমালা প্রণয়ন করেছে কর্তৃপক্ষটি। ২০১৯ এ সর্বপ্রথম এ নিয়ে কাজ শুরু করে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ এবং অবশেষে একটি প্রবিধানমালা তৈরি করা হলেও প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে প্রবিধানমালাটি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশ অনুযায়ী “খাদ্যদ্রব্যে ট্রান্স ফ্যাটি এসিড নিয়ন্ত্রণ প্রবিধানমালা, ২০২১” সকল তেল, চর্বি এবং খাদ্যে সর্বোচ্চ ২ শতাংশ ট্রান্সফ্যাট এর সীমা নির্ধারণ করেছে। প্রবিধানমালা প্রকাশ করার সম্পর্কে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (বিএফএসএ) এর সদস্য মঞ্জুর মোর্শেদ বলেন, “আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিং প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে প্রবিধানমালাটির চূড়ান্তকরণের কাজ শেষ করেছি আমরা। কিছু দিনের মধ্যেই আমরা প্রবিধানমালাটি সরকারী গ্যাজেটে প্রকাশ করতে যাচ্ছি।”
২০২০ সালের এক প্রতিবেদনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে ট্রান্সফ্যাটঘটিত হৃদরোগে মৃত্যুর সর্বাধিক ঝুঁকিপূর্ণ ১৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। সেই সাথে সংস্থাটি বাংলাদেশে প্রতিবছর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণকারীর ৪.৪১% মৃত্যুর জন্য দায়ী ট্রান্সফ্যাট বলেও জানিয়েছে।
ট্রান্স ফ্যাটি এসিড (টিএফএ) বা ট্রান্সফ্যাট মানব স্বাস্থ্যের জন্য একটি বিষাক্ত এবং অযাচিত খাদ্য উপাদান। ট্রান্সফ্যাট এক ধরণের ফ্যাট বা স্নেহ জাতীয় খাদ্য উপাদান যা রক্তের এলডিএল বা “খারাপ কোলেস্টেরল” বৃদ্ধি করে, অপরদিকে এইচডিএল বা “ভালো কোলেস্টেরল”-এর মাত্রা কমিয়ে দেয়। অতিরিক্ত ট্রান্স ফ্যাট গ্রহণের ফলস্বরূপ রক্তবাহী ধমনিতে খারাপ কোলেস্টেরল জমা হয়ে রক্তচলাচলে বাধা সৃষ্টি করে। ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়, যা অকাল মৃত্যুর অন্যতম কারণ। এছাড়াও মাত্রাতিরিক্ত ট্রান্সফ্যাট গ্রহণ উচ্চহারে হৃদরোগ, হৃদরোগজনিত মৃত্যু, স্মৃতিভ্রংশ (ডিমেনশিয়া) এবং স্বল্প স্মৃতিহানি (কগনিটিভ ইমপেয়ারমেন্ট) জাতীয় রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি করে।
খাদ্যে ট্রান্সফ্যাটের প্রধান উৎস পারশিয়ালি হাইড্রোজেনেটেড অয়েল বা পিএইচও, যা বাংলাদেশে ডালডা বা বনস্পতি ঘি নামেই সুপরিচিত। সাধারণত বেকারি পণ্য, প্রক্রিয়াজাত ও প্যাকেটজাত খাবার, ভাজা পোড়া স্ন্যাক্স এবং হোটেল-রেস্তোরাঁ ও সড়কসংলগ্ন দোকানে খাবার তৈরিতে পিএইচও বা ডালডা ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ইপিডেমিওলজি অ্যান্ড রিসার্চ বিভাগের অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী বলেন, “আমাদের গবেষকদল ঢাকার ডালডা নমুনার ৯২ শতাংশে ডব্লিউএইচও সুপারিশকৃত ২% মাত্রার চেয়ে বেশি ট্রান্সফ্যাট (ট্রান্স ফ্যাটি এসিড) পেয়েছেন, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। হৃদরোগ ঝুঁকি থেকে রেহাই পেতে ট্রান্সফ্যাট মুক্ত খাবার গ্রহণের বিকল্প নেই।”