১০ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

শিরোনাম
তেলবাহী লড়ি উল্টে গিয়ে আগুন লেগে এক জনের মৃত্যু। ভূমি বিষয়ক তথ্যাদি স্কুলের পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ গ্রহণ করো হয়েছে-ভূমিমন্ত্রী মির্জা ফকরুলরা তারেক জিয়ার নির্দেশে জনগনের সাথে প্রতারনা ও তামশা করছে-আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিগ বার্ড ইন কেইজ: ২৫ শে মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধুর গ্রেফতার  ঢাবি ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে ১ কোটি টাকার বৃত্তি ফান্ড গঠিত হাইকোর্টের রায়ে ডিন পদে নিয়োগ পেলেন যবিপ্রবির ড. শিরিন জয় সেট সেন্টার’ থেকে মিলবে প্রশিক্ষণ, বাড়বে কর্মসংস্থান: পীরগঞ্জে স্পীকার বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস আগামীকাল টুঙ্গিপাড়ায় যাচ্ছেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী, সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন বিশিষ্ট রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী সাদি মোহম্মদ আর নেই

করমজলে একদিন

আপডেট: ফেব্রুয়ারি ২, ২০২৩

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন

শেখ সাদী (যবিপ্রবি প্রতিনিধি):

শীতের কাক ডাকা ভোরে ব্যস্ত সবাই।ইতিমধ্যে ক্যাম্পাসে বাস চলে এসেছে, এক এক করে সবাই বাসে ওঠার পরে বাস ছেড়ে দিলো।গন্তব্য মোংলার পশুর নদী তীরবর্তী ম্যানগ্রোভ সুন্দরবন। সুব্রত স্যারের সাথে আমাদের সাথে রয়েছে সদা হাস্যউজ্জ্বল শিক্ষিকা কানিজ ফাতেমা কানন ম্যাম। গানের তালে তালে, সবার উৎসবমুখর নাচে যানজটবিহীন পথে বাস পৌছায় মোংলার পশুর নদীর তীরে।

দুপুরের খাবার সঙ্গে নিয়ে সুন্দরবনের করমজল পর্যটন কেন্দ্রের উদ্দেশ্যে ট্রলারে যাত্রা শুরু, চলছি পশুর নদীর ঢেউয়ের তরঙমালার উপর দিয়ে। করমজল পয়েন্টে পৌঁছানোর পর দেখি রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ কেউ(ভিআইপি) এসেছেন,সেজন্য নদীর মধ্যে অবস্থান করতে হবে।প্রায় আড়াই ঘন্টা পর ঘাটে ভিড়লো ট্রলার। টিকিট কেটে পর্যটন কেন্দ্রে প্রবেশের পরে প্রথমেই চোখে পড়ে করমজলের মানচিত্র।

এরপর আমাদের বরণ করে নেয় করমজলের একঝাঁক বানর।বানরগুলো একগাছ থেকে আরেক গাছে, রাস্তায় পথচারীদের দিকে তাকিয়ে থাকে খাবার কেড়ে নেওয়ার জন্য। ওদের দৌড়াদৌড়ি আর পর্যটকদের থেকে খাবার কেড়ে নেওয়ার দৃশ্য অসাধারণ।এর মাঝেই স্মৃতি হিসেবে তোলা হলো গ্রুপ ফটো। আরো দেখলাম গেওয়া,সুন্দরী, হারগোজা,গোলপাতা আর যার জন্য সুন্দরবনের গাছ গুলো অনন্য সেটা হলো শ্বাসমূল বা নিউমেটাফোর।

ডানদিকে এগিয়ে ছিলো হরিণের বন্দীখানা,ছোটবড় হরিণের এক বিশাল সমাহার। তৃণভোজী এই প্রাণীগুলো খাবারের জন্য তাকিয়ে থাকে পর্যটকদের নিজ হাতে দেওয়া ১০ টাকার ঘাস খাওয়ার জন্য।পাশেই কুমিরের প্রজনন কেন্দ্র, বিভিন্ন স্তরে সাজানো কুমিরের প্রজননস্থল। ছোট্ট থেকে বড় যেমন ৩ ফুট থেকে ১০ ফুট লম্বা তথা আকার ভেদে পুকুরের মতো দেয়াল ঘেরা চৌবাচ্চাতে বিভিন্ন প্রজাতির প্রজনন কার্যক্রম চলে এখানে। দুটি জায়গায় ছোট কুমিরের মাতৃ পরিচর্যা করা হয়,মা কুমিরগুলোকে চতুর্দিকে দেয়ালঘেরা একটি পুকুরে রাখা হয়েছে।

কুমির প্রজননের দুটি পুকুরের মধ্য দিয়ে প্রবেশ করলাম সুন্দরী, গেওয়া, হারগোজার বনে। কাঠের সাঁকোর দিয়ে সরু রাস্তা দিয়ে চলাচল করছে পর্যটকরা। দীর্ঘ সাঁকোর মাঝে মাঝে পর্যটকদের বসার জন্য রয়েছে কাঠের বা বাঁশের তৈরি বেঞ্চ,যেখানে কেউ কেউ তুলছে গ্রুপ সেলফি, কেউবা করছে ভিডিও। এক পর্যায়ে চোখ আটকে যায় লাল কাকঁড়ার উপর,লোভ সামলাতে না পেরে বন্ধু মেহরাব থেকে একটি ছোট ডিবি নিলাম। যাতে কাঁকড়া ধরে এর ভিতরে রাখতে পারি। ওয়াচ টাওয়ারের একশগজ সামনে ছোট্ট ব্রিজের নিচে অসংখ্য লাল কাকঁড়া দেখতে পায়। ধরার জন্য নিচে নেমে যায়। দেখলাম কাছে যাওয়ার আগেই সব কাঁকড়া গর্তের মধ্যে ঢুকে পড়েছে। বন্ধুদের বেশিরভাগ বলল এই কাকড়া ধরতে পারবোনা। এই কথা কানে না নিয়ে, ব্যর্থ হয়ে উপরে উঠতে যাব, সেই মূহুর্তে ম্যাম এসে বললেন একটা কাঁকড়া ধরতে। কিন্তু কাঁকড়া ধরা আর সম্ভব হয়ে ওঠেনি।এরপর দেখা মিললো মাডসকিপার, এটা ধরতেও মরিয়া হয়ে উঠেছিলাম। কিন্তু এখানেও ব্যর্থ হয়ে, আমাদের অক্সিজেন সরবরাহকারী গাছে উঠে একটা ছবি নিলাম।

কাঁকড়া কিভাবে ধরা যায়?এনিয়ে বিভিন্ন জন বিভিন্ন মন্তব্য করছে। কেউবা কাকড়া ধরা নিয়ে বাজি ধরছে। হতাশ হয়ে যখন করমঝল থেকে বের হবো, তখন ঠিক প্রবেশদ্বারের ৬০ গজ আগে অনেকগুলো লাল এবং কালো কাকড়া দেখতে পেলাম। সর্বশেষ প্রচেষ্টা চালালাম।এবার কাঁকড়া যে গর্তে ঢুকেছে, সেই গর্ত হাত দিয়ে খুড়তে শুরু করি কাঁকড়ার কামড়ের ভয়কে উপেক্ষা করে। কিছুক্ষণ খুড়ার পর হাতে স্পর্শ পায় কাঁকড়ার। কাকড়াটিকে গর্ত থেকে বের করে দেখি কালো কাঁকড়া। এবার কিছুটা হতাশ হলেও কানিজ ফাতেমা কানন ম্যাম সান্ত্বনা দিয়ে বলে এটাই অনেক কিছু। মাটিসহ নমুনা নিলাম।আরেকটি গর্তে হাত দিয়ে কিছুটা খুড়তেই কাঁকড়া পেলাম, অতিরিক্ত টানের জন্য কাঁকড়ার চিলেট লেগটি ছিড়ে চলে আসে।পরবর্তীতে দুটি কাঁকড়া ধরতে সক্ষম হয়।

ফেরার পালা তবে করমজলের ট্রলারের মধ্যেই খেয়ে নিলাম দুপুরের খাবার খুলনার বিখ্যাত চুইঝালের খাসির মাংস দিয়ে। ক্লান্ত শরীরে সবাই ঝিমিয়ে গেছে ততক্ষণে, পার্কিং স্পট সবাই যার পছন্দ বা ঐ জায়গার আকর্ষণীয় জিনিস কিনে নিলো।এবার সুন্দরবনকে বিদায় জানাতে চড়লাম বাসে।স্যার জানালেন যেহেতু চন্দ্রমহল ইকোপার্কে সময় স্বল্পতার জন্য যেতে পারিনি, তাই আমরা মোংলা বন্দরের ভিতরে প্রবেশ করব।এসে দেখলাম এখানেও ভিআইপি,তাই প্রবেশ করা যাবেনা।স্যার সিদ্ধান্ত নিলেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে সবাইকে নিয়ে যাবেন, পথিমধ্যে রুপসা ব্রিজে নামবেন। রুপসা ব্রিজ হয়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় পৌঁছেছি। স্যার সময় দিয়েছেন ১৫ মিনিট, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুদের সাথে দেখা হলো।বিকালের নাস্তা খেয়ে গন্তব্য প্রিয় ক্যাম্পাস যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

সুন্দরবন থেকে নিয়ে আসা মাটি এবং পানির লবনাক্ততা পরীক্ষা করতে হবে আমাদের,সাথে পানির মধ্যে কোন ধরনের প্লাংকটন আছে সেটাও জানতে হবে। একদিন রাখার পর একটি লাল এবং একটি কালো কাকড়া মারা যায়। যেটা বেঁচে ছিলো, সেটাকে যত্নের সাথে পরিষ্কার করে ফরমালিন দিয়ে এ্যাকুয়াটিক বায়োডাইভারসিটি মিউজিয়ামে সংরক্ষণ করা হয়েছে । আমাদের সংরক্ষিত কাঁকড়াটির নাম Horseshoe Crab. ফিশ মিউজিয়ামে এটাই আমার প্রথমবার সংরক্ষিত প্রাণী।

লেখক:
শেখ সাদী
শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক,
ফিশারীজ এন্ড মেরীন বায়োসাইন্স বিভাগ,
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন
     
Website Design and Developed By Engineer BD Network