১৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার

শিরোনাম
তেলবাহী লড়ি উল্টে গিয়ে আগুন লেগে এক জনের মৃত্যু। ভূমি বিষয়ক তথ্যাদি স্কুলের পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ গ্রহণ করো হয়েছে-ভূমিমন্ত্রী মির্জা ফকরুলরা তারেক জিয়ার নির্দেশে জনগনের সাথে প্রতারনা ও তামশা করছে-আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিগ বার্ড ইন কেইজ: ২৫ শে মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধুর গ্রেফতার  ঢাবি ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে ১ কোটি টাকার বৃত্তি ফান্ড গঠিত হাইকোর্টের রায়ে ডিন পদে নিয়োগ পেলেন যবিপ্রবির ড. শিরিন জয় সেট সেন্টার’ থেকে মিলবে প্রশিক্ষণ, বাড়বে কর্মসংস্থান: পীরগঞ্জে স্পীকার বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস আগামীকাল টুঙ্গিপাড়ায় যাচ্ছেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী, সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন বিশিষ্ট রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী সাদি মোহম্মদ আর নেই

দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহৎ মাৎস্য যবিপ্রবির সংরক্ষণশালা “অ্যাকুয়াটিক বায়োডায়ভার্সিটি মিউজিয়াম”

আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২৩

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন

শেখ সাদী (যবিপ্রবি প্রতিনিধি):

দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহৎ মাৎস্য সংরক্ষণশালা তৈরি করেছে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (যবিপ্রবি)। সহজেই মাছের সঙ্গে পরিচিতি, বিলুপ্ত ও বিলুপ্তপ্রায় সব স্বাদু পানির মাছ ও সামুদ্রিক মাছ এবং অন্যান্য জলজ প্রাণি সংরক্ষণের মাধ্যমে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ও গবেষণা উন্নয়নে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (যবিপ্রবি) তৈরি হয়েছে ‘অ্যাকুয়াটিক বায়োডায়ভার্সিটি মিউজিয়াম’।

দেশের মাছকেন্দ্রিক সমৃদ্ধ ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে যবিপ্রবির শিক্ষার্থী তথা দেশের মানুষের সামনে তুলে ধরা এবং বিপন্ন প্রজাতির মাছের বিষয়ে জনমনে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে ‘অ্যাকুয়াটিক বায়োডায়ভারসিটি মিউজিয়াম’ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করা হয়। শুধু তাই নয়, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের গবেষণার ক্ষেত্রেও অনন্য ভূমিকা পালন করবে যবিপ্রবির এই মিউজিয়াম।

দর্শনার্থীদের প্রথমেই অভিভূত করে মিউজিয়ামটিতে প্রবেশ পথের দেয়ালে আঁকা দেশের কোথায় ইলিশ পাওয়া যায়, সেই মানচিত্র এবং কাঁকড়ার ও চিংড়ির জীবনচক্রের দেয়াল চিত্র, রয়েছে নদীর ইকোসিস্টেমের চিত্র । মিউজিয়ামে সংরক্ষিত কোনোটির রং বাদামি, কোনোটি আবার হলদেটে, কোনো জারে মাছগুলো কালচে হয়ে আছে, আবার কোনো কোনো জারে রয়েছে ললিগো, অক্টোপাস, স্কুইড, সাপসহ বিচিত্র ধরনের জলজ প্রাণী । ‘অ্যাকুয়াটিক বায়োডায়ভার্সিটি মিউজিয়াম’-এর থরে থরে সাজানো বিভিন্ন আকৃতি ও রঙের বিচিত্র সব মাছের সমাহার । বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব একাডেমিক ভবনের তৃতীয় তলায় ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন বায়োসায়েন্স (এফএমবি) বিভাগের উদ্যোগে যবিপ্রবির নিজস্ব অর্থায়নে এ মিউজিয়ামটি তৈরি করা হয়েছে।

জানা গেছে, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে এ ধরণের কোনো মিউজিয়াম এটিই প্রথম। মিউজিয়াম তৈরির প্রকল্পের পরিচালক হিসাবে ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন বায়োসায়েন্স (এফএমবি) বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সিরাজুল ইসলাম ও সহকারী প্রকল্প পরিচালক হিসেবে রয়েছেন একই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক পূজা বৈদ্য। মিউজিয়ামটি তৈরিতে বিভাগের আরও অনেক শিক্ষক-শিক্ষার্থী সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করেন।

অধ্যাপক ড. মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, IUCN এর তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রায় ৩০০ প্রজাতির স্বাদু পানির মাছ ও ৪৭৫ প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ পাওয়া যায়। কিন্তু বাস্তবে খোঁজ করতে গেলে একশত প্রজাতির স্বাদু পানির মাছের দেখা মেলে না। আমাদের দেশ থেকে দেশীয় বহু প্রজাতির মাছ হারিয়ে গেছে। আর অনেকগুলোই এখন বিলুপ্তির পথে। প্রায় ১০ শতাংশ মাছ প্রতি বছর হারিয়ে যাচ্ছে। মিউজিয়ামে সংগৃহীত নমুনা মাছের তথ্য হতে মাছের বিলুপ্তিরোধে সচেতনতা  তৈরি এবং পূর্বে বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় মাছের প্রজাতির পরিসংখ্যান জানা সম্ভব হবে। এটি নতুন প্রজন্মকে বাংলাদেশের মৎস্যভান্ডারের সমৃদ্ধতার বিষয়ে জানতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন বায়োসায়েন্স বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য মাছ চিহ্নিত করতে পারা অত্যাবশ্যকীয়। তারা এ মিউজিয়াম থেকে মাছ ও মাছের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবে।

অধ্যাপক ড. মো. সিরাজুল ইসলাম আরও বলেন, বাণিজ্যিকভাবে বাজারে সাধারণত ৬০-৭০ প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ পাওয়া যায়। কিন্তু এর বাইরে সামুদ্রিক মাছের যে বিপুল প্রজাতি রয়েছে, তা আমাদের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের চেনা-জানা ও দেখার সুযোগ হয় না। অ্যাকুয়াটিক বায়োডায়ভার্সিটি মিউজিয়ামে বর্তমানে স্বাদু পানি ও সামুদ্রিক পানির মোট ৪২৬ প্রজাতির মৎস্য সংরক্ষিত রয়েছে এবং মাছের অন্যান্য প্রজাতি সংগ্রহের কাজ চলমান রয়েছে।

তিনি জানান, বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও দর্শনার্থীদের জন্য মিউজিয়ামটি উন্মুক্ত থাকবে। দর্শনার্থী ও শিক্ষার্থীরা এসে দেখতে পারবে বাংলাদেশের মৎস্য সম্পদ কতটা সমৃদ্ধ ছিল আর এখন কত প্রজাতির মাছ রয়েছে। আবার অনেকেরই সমুদ্রে যাবার সুযোগ হয় না তারা মিউজিয়ামে এসে মাছগুলো দেখতে পারবেন এবং মাছ সম্পর্কে জানতে পারবেন। মাছের উৎস, প্রাপ্তিস্থল, জীবনকাল, প্রচলিত নাম, বৈজ্ঞানিক নাম ও প্রজনন সম্পর্কিত তথ্য দেওয়া থাকবে যাতে করে শিক্ষার্থী ও দর্শনার্থীরা সহজেই মাছ সম্পর্কে জানতে পারে। এ ছাড়া বিশেষ প্রক্রিয়ায় বড় আকৃতির মাছের অঙ্গ-সংস্থান দেখার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা মাছের অভ্যন্তরীণ গঠন দেখতে ও জানতে পারবে। মিউজিয়ামের অন্য অংশে অ্যাকুরিয়ামে সৌন্দর্যবর্ধক জীবন্ত মাছের সংগ্রহও থাকবে। সমুদ্রে জীবের বিপুল সমাহার নিয়ে মিউজিয়ামের অন্য আরেকটি অংশে ভবিষ্যতে আকর্ষণীয় বিভিন্ন প্রমাণ্যচিত্র দেখানোর ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা রয়েছে।

মিউজিয়ামের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে জানতে চাইলে এফএমবি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সুব্রত মন্ডল বলেন, ফিশারীজ বিভাগের শিক্ষার্থীদের হাতে-কলমে শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যে গড়া মিউজিয়ামটি শুধু বাস্তব শিক্ষা নয় গবেষণায় ক্ষেত্রে অনন্য ভূমিকা রাখবে। মিউজিয়ামটি আরও সমৃদ্ধশালী করার লক্ষ্যে বিভাগের শিক্ষকগণ দেশ-বিদেশ থেকে মাছ সংরক্ষণ করার জন্য অব্যাহত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন । তিনি আরও বলেন, মিউজিয়ামটি বাংলাদেশের মাৎস্যের
বৃহৎ সংরক্ষণশালা হিসেবে গড়ে তোলার জন্য এফএমবি বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীগণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। 

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে যবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল উন্নয়ন ও গবেষণা প্রকল্পের মধ্যে এটি অন্যতম একটি প্রকল্প। যশোরঞ্চলকে বলা হয় মাছের উর্বর ভূমি। মিউজিয়ামটির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ও দর্শনার্থীরা খুব সহজেই বিচিত্র সব মাছের সঙ্গে পরিচিত হতে পারবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব অর্থায়নে মিউজিয়ামটি তৈরি করা হয়েছে। এটি আরও সম্প্রসারণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে।

  • ফেইসবুক শেয়ার করুন
     
Website Design and Developed By Engineer BD Network