আপডেট: মার্চ ৯, ২০২৪
আপডেট:
স্টাফ রিপোর্টার, গোপালগঞ্জ : শিক্ষার মান কমে যাওয়ায় জেলা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের হুমকী দিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেছেন শিক্ষার মান উন্নয়ন না হলে শুধু বদলী নয় কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধু যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়েছিলেন সেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ আরো কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার মান পড়ে যাবে এটা কোন ভাবেই মেনে নেয়া যায় না। বিদ্যালয়ে শিক্ষার মান নষ্ট হবার পিছনে জেলা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগ রয়েছে। এটা কোন ভাবেই কাংখিত হতে পারে না। প্রতিষ্ঠান নিজের মনে করলে ইচ্ছা করলেই বিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ ঠিক রাখা যায়। আপনাদের বিষয়ে মনিটরিংন করা হবে। শিক্ষার মান উন্নয়ন না হলে শুধু বদলী নয় কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আজ শনিবার দুপুরে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় খান সাহেব শেখ মোশাররফ হোসেন স্কুল এন্ড কলেজের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পুরষ্কার বিতরণ ও জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তারা এসব কথা বলেন।
মহাপরিচালক আরো বলেন, জেলা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা উচিত ছিল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো পরিদর্শন করা। স্কুলগুলো চলছে কি চলছে না, ক্লাশ চলছে কি না, শিক্ষার্থীরা ঠিক মত ক্লাশে আসে কি না, না কি হাট বাজারে আড্ডা মারে কি মারে না। আমাদের শিক্ষকরা তো এমন ছিলো না। পরিস্কার কথা আগামী দু মাস দেখা হবে, এর মধ্যে উন্নতি না হলে কে কোথায় বদলী হবে আমি জানি না।
অনুষ্ঠানের সভাপতি শিক্ষানুরাগী ও বঙ্গবন্ধু পরিবারের প্রবীণ সদস্য শেখ কবির হোসেন বলেন, সার্টিফেকেটের জন্য পড়াশোনা না করে মানুষ হবার জন্য পাড়াশোনা করতে হবে। লেখাপড়ার মানোন্নয়নে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। তবে খান সাহেব শেখ মোশাররফ হোসেন স্কুল এ্যান্ড কলেজ জেলার মধ্যে ভাল করছে। আরো ভাল করতে হবে। লেখাপড়া মনোযোগ দিয়ে করলে জীবন মান উন্নয়ন হবে। লেখাপড়া শিখে মানুষের মত মানুষ হতে হবে, মা-বাবার মুখে হাসি ফোটাতে হবে। দেশের উন্নয়নে কাজ করতে হবে।
এছাড়া একই অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বড় বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উচ্চ শিক্ষা গ্রহনের সুযোগ পাচ্ছে না। এমনকি ভাল চাকরিতেও প্রবেশ করতে পারছে না। এ অভিযোগ এনে টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ আবুল বশার খায়ের, পৌর মেয়র শেখ তোজাম্মেল হক টুটুলসহ অন্যান্যরা উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ আবুল বশার খায়ের শিক্ষার মান নেমে যাওয়ার জন্য তিনি শিক্ষা কর্মকর্তার উদাসীনতা, প্রধান শিক্ষকদের দায়িত্বহীনতা ও পরীক্ষায় আসদুপায় অবলম্বনকে দায়ী করেন। তিনি বিদ্যালয়গুলোতে মনিটরিং সহ প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহন করে শিক্ষার মানোন্নয়নের উপর গুরুত্বারোপ করেন।
টুঙ্গিপাড়া উপজেলার সেনেরচর-বাশুরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রফুল্ল কুমার বিশ্বাস বলেন, শিক্ষার মান নেমেছে এটি জলজ্যান্ত সত্য। শিক্ষা প্রদানে শিক্ষকদের আন্তরিকতার কোন অভাব নেই। কিন্তু পরীক্ষায় অংশগ্রহনকারী শিক্ষার্থীদের শতভাগ পাশ করাতে হবে বলে আমাদের উপর চাঁপ থাকে। এ কারণে অধিকাংশ শিক্ষার্থী পড়াশেনা করে না। তাই শিক্ষার মান নেমে যাচ্ছে।
টুঙ্গিপাড়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মাহাবুবুর রহমান বলেন, অামি এ উপজেলায় গত বছর যোগদান করেছি।শিক্ষার মান বাড়াতে এসএসসি ও এইচএসসি সহ সব পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন প্রতিরোধ করেছি। এতে বেশ কিছু শিক্ষার্থী ফেল করেছে। এ কারণে আমার উপর অনেকেই নাখোশ। শিক্ষার মান বৃদ্ধিতে পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন বন্ধ। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্লাস মনিটরিংসহ অন্যান্য সব বিষয়ের প্রতি বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক প্রফেসর সৈয়দ জাফর আল বলেন, আমাদের অধিদপ্তরের নিয়োগে টুঙ্গিপাড়া থেকে ৩য়, ৪র্থ শ্রেণির কর্মী নিয়োগ পেয়েছে। উচ্চ পদে কেউ চাকরি পায়নি। এ থেকে বোঝা যায় টুঙ্গিপাড়া উপজেলার শিক্ষার মান নেমে যাচ্ছে। এখানকার শিক্ষার মানোন্নয়নে আমার বিশেষ কর্মসূচী গ্রহন করব। এতে দ্রুত শিক্ষার মানোন্নয়ন ঘটবে বলে আমি প্রত্যাশা করছি।
এর আগে খান সাহেব শেখ মোশাররফ হোসেন স্কুল এন্ড কলেজে প্রাঙ্গনে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও বঙ্গবন্ধু পরিবারের প্রবীণ সদস্য শেখ কবির হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড এর সচিব প্রফেসর আজাদ হোসেন চৌধুরী, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মুন্সি আতিয়ার রহমান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মোঃ গোলাম কবির, পুলিশ সুপার আল বেলী আফিফা, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মাহাবুব আলী খান উপস্থিত ছিলেন। পরে অতিথিবৃন্দ ৫০ জন কৃতি শিক্ষার্থীদের হাতে সংবর্ধনা ক্রেস্ট প্রদান করেন এবং বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের হাতে পুরষ্কার তুলে দেন। #