আপডেট: এপ্রিল ৮, ২০২১
শামিল শাহরোখ তমাল
শওকত হোসেন হিরন শুধু একটি নামই নয় তিনি বরিশালের মানুষের কাছে আস্থা এবং নির্ভরতার প্রতীক হতে পেরেছিলেন!
কথা এবং কাজের মেলবন্ধন তৈরি করে মাত্র সাড়ে চার বছরে একটি মফস্বল শহর কে আমূল পরিবর্তন করে দেখিয়েছিলেন, সত্যিকার অর্থেই বরিশাল নগরকে একটি তিলোত্তমা নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছেন,যেটা আমাদের কাছে ছিল বিস্ময় জাগানিয়া!
যদি আলোকসজ্জার কথা বলি, মেয়র নাইট এর কথা বলি, কিংবা নৌকাবাইচ, দুই লেইনের রাস্তা, এমন অসংখ্য প্রথম এর সাথে নগরবাসীকে পরিচয় করে দিয়েছিলেন মেয়র শওকত হোসেন হিরন। এমনকি সূর্যোদয়ের পূর্বে নগরের বর্জ্য অপসারণ করিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন, নগরে সবুজায়ন এবং গ্রীন সিটির মর্যাদাও তার হাত ধরে এসেছিল।
তিনি যেমন উন্নয়নের ধারা তৈরি করেছিলেন,ঠিক তেমনি সবাইকে এক করে রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে আমূল পরিবর্তন এনেছিলেন পাশাপাশি রাজনীতির সহবস্থান নিশ্চিত করেছিলেন, যা বরিশালের রাজনীতিতে অনুপস্থিত ছিল। অসম্ভব রকমের দৃঢ়চেতা গুণটিই আমাকে সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ করেছে!
তিনি নগর উন্নয়ন পরিকল্পনায় নগরের মানুষকে সম্পৃক্ত করতে পেরেছিলেন, এমনকি আমাকেও অনেক বিষয়ে জিজ্ঞেস করতেন! নতুন কি করা যায়, অথবা আর কি করলে স্থানটি আরও বেশি আকর্ষণীয় এবং সুন্দর করা যায়, আমি যেমন অবাক হয়েছি তেমনি তার প্রতি শ্রদ্ধাবনত হয়েছি। তিনি সব সময় মানুষের মাঝে থাকতেন, ফোনে যেমন তারসাথে কথা বলা যেত তেমনি, নির্দিষ্ট সময়ে বাসায় তার সাথে সরাসরি সাক্ষাতের সুযোগ পাওয়া যেত কোন ধরনের কাঠ খড় পোহানো ছাড়াই! এটিই ছিল তাঁর নেতৃত্বের অন্যতম গুণ, আর এ কারণেই তিনি জনগণের হিরন হতে পেরেছিলেন। যেদিন তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন , সেই খবর শুনে বরিশালের এমন কোন মানুষ ছিল না যারা ব্যাকুল কিংবা উৎকন্ঠিত হননি। বরিশালের মানুষ তাকে আপন করে দল-মত-নির্বিশেষে অভিভাবক হিসাবে গ্রহণ করেন, যেমনটি তিনি মানুষকে আপন করে নিয়েছিলেন! যার প্রমাণ না ফেরার দেশে চলে যাওয়ার পরে তার জানাজায়, দল মত বর্ণ পেশা ছাঁপিয়ে লক্ষ্য মানুষের উপস্থিতি।
হিরন ভাইয়ের সাথে আমার পরিচয় ১৪ দল গঠন পরবর্তী সময়ে মিছিল-মিটিংয়ের একজন ছাত্র সংগঠক হিসেবে। পরবর্তীতে, বিএম কলেজের বিভিন্ন আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ঘনিষ্ঠতা যা আরও দৃঢ় হয়েছিল বিএম কলেজ ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবিতে বৃহত্তর আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। তিনি যে সংগঠন করতেন সেই সংগঠন আমি করিনি, কিন্তু তার গুণাবলীর কারণে তাকে নেতা হিসেবে গ্রহণ করেছিলাম। ঠিক তেমনি, তিনি আমাকে ছোট ভাইয়ের মতো স্নেহ করতেন এবং ভালোবাসতেন। সিটি নির্বাচনে তিনি হেরে যাবার পরে তার সাথে আমার ফোনে কথা হয়েছিল,যে কথাটি আমার এখনো কানে বাজে….তিনি আমাকে “বাম নেতা” বলে সম্বোধন করতেন। তাকে আমি সান্ত্বনা দিতে পারিনি,উল্টো তিনিই আমাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেছিলেন, হয়তো তার জন্য আরো ভালো কিছু অপেক্ষা করছে!!
তিনি আমাকে তার বাসায় চা খাওয়া এবং গল্প করার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন, কিন্তু দুর্ভাগ্য আমার! বাসায় গিয়ে চা খাওয়া আর গল্প করা হয়ে ওঠেনি!! আমাদের কিছু না বুঝতে দিয়েই, তিনি না ফেরার দেশে চলে গিয়েছেন।
আজ তিনি হয়তো শারীরিকভাবে আমাদের মাঝে নেই, কিন্তু বরিশাল নগরীর প্রত্যেকটি স্থানে, তার কর্ম জানান দিচ্ছে…. তিনি ছিলেন, তিনি আছেন, বরিশালের মানুষের হৃদয়ের অন্তস্থলে।
যেখানেই থাকুন, ভালো থাকুন প্রিয় হিরন ভাই….
৭ম মৃত্যুবার্ষিকীতে (০৯ এপ্রিল) শ্রদ্ধাঞ্জলি।
লেখকঃ সাবেক সভাপতি বরিশাল মহানগর ও কেন্দ্রীয়
সহ সভাপতি।
বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী।
(বি.দ্র.২০২০ সালে প্রকাশিত, ঈষৎ পরিমার্জিত)