আপডেট: অক্টোবর ৭, ২০২১
বাংলাদেশের নাট্য আন্দোলনে একজন প্রতিবাদী ব্যক্তিত্ব মিন্টু বসু। প্রকাশক, সাংবাদিক, বীর মুক্তিযোদ্ধা, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, নির্দেশক, অভিনেতা, সংগঠক-বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী এই মানুষটি বরিশালের সাংস্কৃতিক ও সামাজিক অঞ্চলের পুরোধা ব্যক্তিত্ব। আজন্ম প্রতিবাদী এই মানুষটির জন্ম ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলার বৈচন্ডি গ্রামে ১৯৪৮ সালের ১২ মার্চ। পিতা নরেন্দ্রনাথ বসু ও মাতা শৈলবালা বসু। পিতা-মাতার ৬ সন্তানের মধ্যে তিনি চতুর্থ। প্রতিভাবান এই মানুষটি আমাদের সমাজের একজন আলোকিত মানুষ। সুদীর্ঘ ৪৪ বছর ধরে সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম সংবাদপত্র ‘বাংলাদেশ’ পত্রিকা থেকেই মিন্টু বসুর সাংবাদিকতায় হাতেখড়ি হয়েছিল। মহান মুক্তিযুদ্ধ এই গুণি ব্যক্তির এক হাতে তুলে দিয়েছিল ‘অসি’, অন্য হাতে তিনি তুলে নিয়েছিলেন ‘মসি’। বিপ্লবী বাংলাদেশ ছিল রণাঙ্গণের মুক্তিযোদ্ধাদের মুখপাত্র। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ভারতের কোলকাতায় অবস্থানকালে মিন্টু বসু জানতে পারেন ৯নং সেক্টরের মুখপাত্র ‘বিপ্লবী বাংলাদেশ’ পত্রিকায় প্রকাশ শুরু হয়েছে। এ খবর শুনে পত্রিকার সম্পাদক নুরুল আলম ফরিদের সঙ্গে দেখা করেন তিনি। বিপ্লবী বাংলাদেশের বার্তা সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন মিন্টু বসু।
স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে সাপ্তাহিক থেকে দৈনিক হিসেবে প্রকাশিত বিপ্লবী বাংলাদেশের দীর্ঘদিন বার্তা সম্পাদক ছিলেন মিন্টু বসু। রণাঙ্গণ নিয়ে মিন্টু বসুর অনেক লেখাই ‘মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও দলিল পত্র’ গ্রন্থে সন্নিবেশিত হয়েছে। তিনি দৈনিক দক্ষিণাঞ্চল ও আজকের বার্তায় বার্তা সম্পাদক, দৈনিক গ্রাম সমাচার পত্রিকায় নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ঢাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিক আজাদ, দৈনিক দেশবাংলা এবং দৈনিক বাংলার বাণীতে বরিশাল প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেছেন। দীর্ঘদিন তিনি একুশে টেলিভিশনেরও বরিশাল প্রতিনিধি ছিলেন।
বরিশাল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি ছাড়াও বরিশাল প্রেসক্লাবের বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছেন মিন্টু বসু। লেখক হিসেবে নাটক, উপন্যাস, জীবনীগ্রন্থ ও মুক্তিযুদ্ধের উপর তার ৭৮টি বই প্রকাশিত হয়েছে। তার প্রথম লেখা উপন্যাস প্রকাশিত হয় ১৯৬৫ সালে। ৮০’র দশকে তিনি শিশু সংগঠন চাঁদের হাটের মাধ্যমে বরিশালে শিশু নাট্য আন্দোলন গড়ে তোলেন। চাঁদের হাটে তিনি দীর্ঘদিন সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। দেশের অন্যতম প্রাচীন গ্রæপ থিয়েটার খেয়ালী গ্রæপ থিয়েটারের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন দীর্ঘ ২০ বছর। তার লেখা নাটকের সংখ্যা ৩৪। এর মধ্যে প্রকাশিত হয়েছে ১৪টি। ১৯৯৪ সালে ইতালিতে তার লেখা নাটক ‘বিপ্লবের মৃত্যু নেই’ মঞ্চস্থ হয় এবং বিশেষ এ্যাওয়ার্ড লাভ করে। তার একাধিক নাটক টেলিভিশনে প্রচারিত হয়। ঢাকার নাট্য সংগঠন লোক নাট্যদল মিন্টু বসুকে ১৯৯৩ সালে দেশের শ্রেষ্ঠ নাট্যকর্মীর পদকে ভূষিত করে। শারীরিক অসুস্থতার কারণে জীবনের শেষ দিনগুলিতে মিন্টু বসু তাঁর বর্ণাঢ্য কর্মক্ষেত্রে অনুপস্থিত ছিলেন। বহুমূখী প্রতিভাবান ও সৃষ্টিশীল এই মানুষটি ৩ অক্টোবর ২০১৭, মঙ্গলবার তার সকল কাজের ইতি ঘটিয়ে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করলেন। #