আপডেট: এপ্রিল ২৫, ২০২৪
পুলিশের সোর্স না হওয়ায় বরিশালের গৌরনদীতে দুই যুবককে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসিয়ে থানায় আটকে রেখে টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এঘটনায় ভুক্তভোগিদের পরিবারের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে পৌর এলাকার ৯নং ওয়ার্ডের লিয়াকত সিকদারের ছেলে মিরাজ সিকদার অভিযোগ করে বলেন, থানার এএসআই কৃষ্ণ এবং অন্য এক এএসআই কিছুদিন যাবত আমাকে তাদের সোর্স হয়ে এলাকার মাদক সেবী ও ব্যবসায়ীদের ধরিয়ে দিতে চাপ প্রয়োগ করে আসছিলো। আমি তাদের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় আমার ওপর ক্ষিপ্ত ছিলো ওই দুই পুলিশ সদস্য। গত মঙ্গলবার দুপুরে আমার পূর্ব পরিচিত মাহিলাড়া গ্রামের বাসিন্দা গোপাল শীলের বাড়িতে কৌশলে আমাকে ডেকে নেয় তারা। আমি গোপাল শীলের বাড়িতে যাওয়া মাত্রই আমাকে আটক করে দেহ তল্লাশি চালায়। আমার কাছে কিছু না পেয়ে আমাকে এবং গোপালকে ব্যাপক মারধর করে। পরে তাদের (পুলিশের) পকেট থেকে ছয় পিচ ইয়াবা দিয়ে আমাদের দুইজনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। পরবর্তীতে থানায় নেওয়ার পর আমাদের নামে মামলা দেওয়ার হুমকি দিয়ে দুইজনের কাছ থেকে ৪০ হাজার টাকা আদায় করে আমাদের ছেড়ে দেয়।
উপজেলার মাহিলাড়া গ্রামের মৃত কালাচান শীলের ছেলে গোপাল শীল অভিযোগ করে বলেন, ওই পুলিশ সদস্যরা তাকেও পুলিশের সোর্স হয়ে কাজ করতে বলেন। তাদের প্রস্তাবে রাজি ছিলাম না। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে দশটার দিকে আমার বসতঘরে ঘুমিয়ে ছিলাম। এরইমধ্যে থানার এএসআই আল আমিন ও কৃষ্ণ আমার ঘরে ঢুকে কাউকে কিছু না বলে বসতঘর তল্লাসি করে। ঘরের মধ্যে এবং আমার কাছে কিছু না পেয়ে ওই দুই পুলিশ সদস্যে তাদের পকেট থেকে ইয়াবা বের করে সেই ইয়াবা দিয়ে আমাকে আটক করে। একপর্যায়ে আমার মোবাইল থেকে কাসেমাবাদ গ্রামের মিরাজকে কৌশলে ডেকে এনে তাকেও আটক করে। এসময় আমাদেরকে মারধর করে জোর করে মাদক বিক্রি করি মর্মে ভিডিও ধারন করে রাখে তারা। পরবর্তীতে আমাদেরকে থানায় নিয়ে দুইজনের কাছে এক লাখ টাকা দাবী করে অন্যথায় মামলার হুমকি দেয়। একপর্যায়ে দুইজনে ৪০ হাজার টাকা তাদেরকে দিয়ে থানা থেকে মুক্তি পাই। এঘটনায় জড়িত ওই দুই পুলিশ সদস্যের শাস্তি দাবী করেন তারা। তবে ঘটনাটি সম্পূর্ন মিথ্যে ভিত্তিহীন বলে দাবী করেন ওই দুই পুলিশ সদস্য। এবিষয়ে গৌরনদী মডেল থানার এএসআই কৃষ্ণ’র মুঠোফোনে জানতে চাইলে এ ব্যাপারে এসআই হৃদয় চাকলাদারের সাথে কথা বলতে বলেন। এবিষয়ে এসআই হৃদয় চাকলাদার বলেন, তাদের অভিযোগ সঠিক নয়। ওই দুইজনের দেহ তল্লাশি করা হয়েছিলো। পরবর্তীতে একজন কাউন্সিলরের জিম্মায় তাদেরকে দেওয়া হয়েছে।
অপরদিকে গত কয়েকদিন পূর্বে উপজেলার ধানডোবা এলাকার অখিল মন্ডল নামের এক পানবরজ মালিকের বাড়িতে কথিত দুই সাংবাদিক নিয়ে গাঁজা উদ্ধারের নাটক সাজিয়ে ৪৮ হাজার টাকা আদায় করে পুলিশ। এবিষয়ে ঘটনার সত্যতা শিকার করলেও ভয়ে ওই পুলিশ সদস্যেদের নাম বলতে চাননি অখিল। একই এলাকার রমিত ঘরামী অভিযোগ করে বলেন, ২৭ রমজান রাতে রাতে কয়েকজন বন্ধু মিলে আমার চায়ের দোকানের সামনে আড্ডা দিচ্ছিলাম। এরইমধ্যে সাদা পোশাকে পুলিশ পরিচয় দিয়ে আমাদের আটক করে দেহ তল্লাশি করে। আমাদের কাছে কিছু পায়নি। এরপরও আমাদেরকে থানায় নিয়ে যাওয়ার হুমকি প্রদান করে পুলিশ সদস্যরা। পরে এলাকার মুরিব্বদের মধ্যস্থতায় পুলিশ সদস্যদের ১০ হাজার টাকা দিয়ে মুক্তি পাই। এ বিষয়ে গৌরনদী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শারমিন সুলতানা রাখি জানান, পুরো বিষয়গুলো খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।