আপডেট: নভেম্বর ২৫, ২০২১
মিরপুরে পোশাক শ্রমিকদের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, পুলিশ বক্সে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় মামলা করেছে পুলিশ। মামলায় অজ্ঞাতনামা কয়েক হাজার ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৫ নভেম্বর) বিকালে মিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তাজিজুর রহমান জানান, বুধবার (২৪ নভেম্বর) রাতেই ট্রাফিকের সার্জেন্ট আসিফ বাদী হয়ে মামলা করেন।
তিনি বলেন, ‘শ্রমিক মারা গেছে— এমন গুজব শ্রমিকদের মাঝে ছড়িয়ে দিয়ে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করা হয়। মিরপুর-১০ নম্বর মোড়ে পল্লবীর সহকারী কমিশনারের কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়। আগুনে পুড়িয়ে দেয় দুটি মোটরসাইকেল। কাফরুল থানাতেও হামলা তারা করে।’
হামলকারীদের বিরুদ্ধে মামলা হলেও কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি বলে জানান ওসি মোস্তাজিজুর রহমান।
গত ২৩ নভেম্বর মিরপুর ১৩ নম্বর সেক্টরে পোশাক শ্রমিকদের বেতনভাতার দাবিতে চলমান আন্দোলন চলাকালে একদল ‘ভাড়াটে সন্ত্রাসী’ তাদের মারধর করে। এতে ছয় জন আহত হন। তবে শ্রমিকদের মাঝে খবর যায়— একজন শ্রমিক মারা গেছেন। পুলিশ বলছে, দু’জন আহত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তারা কেউ মারা যাননি।
এরপর ২৪ নভেম্বর সকালে শ্রমিক মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে শ্রমিকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা চালান।
তবে শ্রমিক মৃত্যুর খবরটি রাজনৈতিক ইন্ধনে ছড়ানো হয়েছে বলে দাবি পুলিশের। গুজব ছড়িয়ে বুধবার (২৪ নভেম্বর) সকাল থেকে মিরপুর ১০ নম্বর হয়ে কাফরুল থানা সড়কে বিক্ষোভে নামেন পোশাক শ্রমিকরা।
বিনা উসকানিতে কাফরুল থানায়ও ইট- পাটকেল ছোঁড়া হয়েছে এবং মিরপুর ১০ নম্বরে ট্রাফিক পুলিশবক্স ভাঙচুর করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বুধবার সকাল থেকে মিরপুর ১০, ১৩, ১৪ নম্বর, ইব্রাহিমপুর, কাফরুল, ভাসানটেক ও পল্লবীসহ অন্তত সাতটি পয়েন্টে শ্রমিকদের অবস্থান ছিল। তারা পুলিশ দেখলেই ঢিল ছুঁড়েছে। তবে পুলিশ লাঠিচার্জ বা কোনও অ্যাকশনে যায়নি।
বিক্ষোভ প্রসঙ্গে রাজন নামে একজন শ্রমিক বলেন, ‘বেতন ১০% বাড়ানোর দাবিতে আমরা তিন দিন ধরে আন্দোলন করছিলাম। বুধবার বিকালে আমাদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেন মালিকরা।
ভাড়াটে সন্ত্রাসী নয়, স্থানীয় দোকানিরা শ্রমিকদেরকে বুধবার মারধর করেছে বলে জানান কাফরুল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) হাফিজুর রহমান।
তিনি বলেন, ‘গত কয়েকদিন ধরেই শ্রমিকরা তাদের দাবি দাওয়া নিয়ে সড়ক অবরোধ করছিল। আমরা কোনও ধরনের অ্যাকশনে যাইনি। তাদেরকে বুঝিয়ে সরানোর চেষ্টা করেছি। শ্রমিকরা আজকেও রাস্তা অবরোধ করেছে। কারণ হিসেবে তার বলছে যে, তাদের শ্রমিক নাকি মারা গেছে। আমরা দু’জন আহতের খবর পেয়েছি গার্মেন্টস কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে আহত দুই শ্রমিকের চিকিৎসা হচ্ছে। মৃত্যুর খবরটি গুজব।’
এই কয়েকদিনের আন্দোলনে রাজনৈতিক ইন্ধন থাকতে পারে বলে সন্দেহ হাফিজুর রহমানের।
তিনি বলেন, ‘গুজব ছড়িয়ে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার চেষ্টা চলছে। গার্মেন্টসের শ্রমিক নয়, এমন অনেক লোককে লাঠিসোটা নিয়ে রাস্তায় নামতে দেখা গেছে। আমার মনে হয়, এর পেছনে রাজনৈতিক ইন্ধন থাকতে পারে। নয়তো কেন বিনা উসকানিতে থানা ও পুলিশ বক্সে হামলা হবে। কাফরুল থানায় ইট ছোঁড়া হয়েছে। ভাঙা হয়েছে ১০ নম্বর ট্রাফিক পুলিশের বক্স। আমরা খুব সহনীয় থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি।’
সূএঃ বাংলা ট্রিবিউন