আপডেট: নভেম্বর ২৮, ২০২১
নির্ধারিত ভাড়া সবার থেকে কেন নেয়া হচ্ছে না, এ প্রশ্নে সুরভী ৯ লঞ্চের সহকারী সুপারভাইজার জুয়েল মৃধা বলেন, ‘যাত্রী না থাকলে কম টাকা বইলা ডাকতে হয়। নাইলে যাত্রী পাওয়া যায় না। সবাইরে তো আর নিই না, কিছু লোক অল্প টাকায় গেলে সমস্যা হয় না।’
দেশে ডিজেলের দাম বাড়ানোর পর অন্যান্য পরিবহনের পাশাপাশি লঞ্চেরও ভাড়া বাড়ানোর দাবি ওঠে। এর জন্য ধর্মঘটও হয়। এসবের পর লঞ্চের ভাড়া ৩৫ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্তও হয়, যা কার্যকর হয় গত ৮ নভেম্বর থেকে।
তবে যাত্রীদের অভিযোগ ছিল, লঞ্চের ডেকের ক্ষেত্রে নতুন ভাড়া তারাই দিচ্ছেন যারা টিকিট কাটছেন প্রথমে লঞ্চে উঠেই। আর যারা লঞ্চ ছাড়ার ঠিক আগমুহূর্তে উঠছেন, তাদের কাছ থেকে নেয়া হচ্ছে পুরোনো ভাড়া।
বাড়ানোর পর ঢাকা-বরিশাল নৌপথে ডেকের ভাড়া হয়েছে ৩৫০ টাকা। আগের ভাড়া ছিল ২৫০ টাকা
সরেজমিনে বৃহস্পতিবার রাতে লঞ্চঘাটে দেখা গেছে, লঞ্চ ছাড়ার নির্ধারিত সময় রাত ৯টায়। ঘাটে যাত্রীর অপেক্ষায় আছে সুরভী ৯ ও পারাবত ১০-সহ আরও ছয়টি লঞ্চ।
এসব লঞ্চের ডেকে যে যাত্রীরা সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৮টার মধ্যে উঠছেন, তাদের কাছ থেকে ৩৫০ টাকা করে ভাড়া আদায় করা হয়েছে। তবে রাত ৮টার পর ডেক পূর্ণ করার জন্য ২০০ টাকায় যাত্রী তোলা হয়েছে।
ভাড়ার এই বৈষম্যে ক্ষুব্ধ দেখা গেছে অনেককেই।
সুরভী ৯ লঞ্চের ডেকের যাত্রী শামীম বলেন, ‘আমার কাছ থেকে ৩৫০ টাকা ভাড়া নিছে, কিন্তু আমার পাশের যাত্রীর কাছ থেকে ২০০ টাকা ভাড়া নিছে। আমি বলছি আমারটা কেন বেশি নিছেন? তখন ওই কন্টেকটর বলছে আমি আগে উঠছি তাই ভাড়া বেশি।’পারাবত ১০-এর ডেকের যাত্রী মারুফ ইসলাম বলেন, ‘এক একজনের কাছ থেকে এক এক ভাড়া নেয়া হয়। আমি ৩০০ টাকা দিছি, আমার পাশের জনে দিছে ২০০ টাকা।’
এই লঞ্চের আরেক যাত্রী জিয়াউল বলেন, ‘আমি তো নতুন ভাড়া ৩৫০ টাকাই জানি। ঘাটে আসার পর ডাকতেছে ২০০ টাকা কইরা ভাড়া। বুঝি না আমি তাইলে ডিজেলের দাম বাড়ায় ধর্মঘটটা হইল কিসের। সবই যখন আগের ভাড়ায় চলতেছে। ফালতু নাটক কইরা জনভোগান্তি সৃষ্টির জন্য এদের এখন শাস্তির আওতায় আনা উচিত।’
নির্ধারিত ভাড়া সবার থেকে কেন নেয়া হচ্ছে না, এ প্রশ্ন করা হলে সুরভী ৯ লঞ্চের সহকারী সুপারভাইজার জুয়েল মৃধা বলেন, ‘যাত্রী না থাকলে কম টাকা বইলা ডাকতে হয়। নাইলে যাত্রী পাওয়া যায় না। সবাইরে তো আর নিই না, কিছু লোক অল্প টাকায় গেলে সমস্যা হয় না।’
এ নিয়ে মন্তব্যের জন্য সুরভী ৯ লঞ্চের মালিক রিয়াজুল কবীরকে একাধিকবার কল দেয়া হলেও তিনি সাড়া দেননি।
তবে ভাড়াবৈষম্যের বিষয়ে কথা হয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌচলাচল যাত্রী পরিবহন সংস্থার পরিচালক সাইদুর রহমান রিন্টুর সঙ্গে। তিনি সুন্দরবন লঞ্চেরও মালিক।
তিনি বলেন, ‘যাত্রী ভাড়া সরকার নির্ধারিতটাই আদায় করা হচ্ছে। কেউ যদি কম নিয়ে থাকে তাহলে সেটা তার ব্যক্তিগত বিষয়।’
তবে যাত্রীরা কম ভাড়া দিতে চাইলেও লঞ্চের কর্মীরা সরকারনির্ধারিত ভাড়ার বাইরে অন্য ভাড়া কেন নেবেন? এর জবাবে রিন্টু জানান, বিষয়টি নিয়ে লঞ্চমালিকদের ফোরামে আলোচনা করা হবে।
বরিশাল নদীবন্দর কর্মকর্তা ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) যুগ্ম পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘কোনো লঞ্চ কর্তৃপক্ষ যদি ভাড়া কম নিয়ে থাকে, তাতে আমাদের আপত্তি নেই। তবে এর কারণে যদি যাত্রীদের সঙ্গে বৈষম্য করা হয়ে থাকে তাহলে তাদের জবাবদিহি করতে হবে।
‘ডিজেলের দাম বাড়ার পর ধর্মঘট করে ভাড়া বাড়ানোর পরও লঞ্চমালিকরা কীভাবে কম ভাড়ায় যাত্রী পরিবহন করছে সেটি আমরা দেখব। পুরো বিষয়টি আমরা নজরদারিতে আনব।’
Source:newsbangla24.com