আপডেট: মার্চ ১, ২০২২
সাইফুল ইসলাম, বাবুগঞ্জ (বরিশাল) প্রতিনিধি
দেশে ভোজ্য তেলের চাহিদা বছরে প্রায় ১৮ লক্ষ্য মেট্রিকটন। বিপরীতে তেল উৎপাদিত হয় প্রায় ৫ লক্ষ মেট্রিকটন। সরিষা দেশের প্রধান তেল জাতীয় ফসল। দেশে ৭ লক্ষ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদের বিপরীতে ৮ লক্ষ মেট্রিকটন সরিষা উৎপন্ন হয়। যা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। বারি-১৪ জাতের সরিষা আবাদে অনেকটাই পূরণ হবে ভোজ্য তেলের চাহিদা।
সাধারণ আমন ফসল ঘরে তোলার পর বেশ কিছু সময় ফাঁকা পড়ে থাকে জমি।কৃষক তো আর বসে থাকতে পারে না।
কারণ ফসল ফলিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতে হয় তাদের। তাই আমন ঘরে তোলার পরপরই তারা নেমে পড়েন সেই ফাঁকা জমিতে।
রবি মৌসুমের বিভিন্ন জাতের ফসল লাগাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন তারা। এরমধ্যে অন্যতম একটি ফসল হলো সরিষা।
জমিতে চাষ দিয়ে সরিষা বীজ জমিতে রোপণ করেন। এরপর যথাসাধ্য সেবাযত্ন শুরু করে দেন সরিষা চাষিরা।
বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার রহমতপুর ইউনিয়নের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া সুগন্ধা নদী বহমান।নদী এলাকার এসব জমি তুলনামূলক উর্বর বেশি।
সরিষা জাতের ফসলও ভাল হয় এসব জমিতে। এসব এলাকার বেশির ভাগ কৃষকই এবার তাদের জমিতে বারি-১৪ জাতের সরিষা লাগিয়েছিলেন। ফলনও বেশ ভাল পেয়েছেন। একাধিক চাষির সঙ্গে আলাপকালে সরিষা আবাদ সম্পর্কে এমনই তথ্য ওঠে আসে।
কৃষক সেলিম খান জানান, বর্তমান সময়ে তাদের মতো কৃষকদের অনেক ফসল চাষ করে লোকসান গুণতে হচ্ছে। সেই লোকসান কাটিয়ে উঠতে তাদের সব সময় বাড়তি আয়ের চিন্তা করতে হয়। সেই ভাবনা থেকে এবার তিনি প্রায় ৫ বিঘা জমিতে বারি-১৪ জাতের সরিষা লাগান। ইতোমধ্যেই ভালো ফলন লক্ষ্য করেছেন তিনি। প্রতিবিঘায় এই জাতের সরিষার ফলন হয়েছে গড়ে ৬ মণ হারে।
এই কৃষকের ভাষ্য, সরিষা ফলন মন্দ হয়নি। দামও বেশ ভাল। বাড়তি আয়ের আশায় চাষ করে সরিষা থেকে বাড়তি লাভবান হয়েছেন তিনি।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, তাদের মতো কৃষকদের সব সময় বাড়তি আয়ের চিন্তা নিয়ে ফসল ফলাতে হয়। কারণ অনেক ফসল চাষ করে লোকসান গুণতে হয় অনেক সময়। সেই লোকসানের ধকল সামলে নিতে বিকল্প ফসল নিয়ে ভাবতে হয় তাদের।
এছাড়া সরিষা চাষে খুব একটা ব্যয়ও করত সার, বীজ, চাষ, সেচ, কীটনাশক, শ্রমিকসহ প্রতিবিঘা জমির বিপরীতে বড়জোড় ৬ হাজার টাকার মতো ব্যয় হয়।
বর্তমান বাজারে প্রতিমণ সরিষা রকমভেদে ৩০০০ থেকে ৩২০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। এক বিঘা জমিতে গড়ে ৬ মণ হারে সরিষা পেলেও বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী সব খরচ বাদে তাদের ভালই লাভ হচ্ছে যোগ করেন কৃষক সেলিম খান।
আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্র রহমতপুর’র প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. আলিমুর রহমান খান জানান, চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় ১ হেক্টর জমিতে পরিক্ষামূলক উচ্চ ফলনশীল বারি-১৪ জাতের সরিষা লাগানো হয়েছে। ফলনও বাম্পার হয়েছে। পাশাপাশি কৃষক তার উৎপাদিত সরিষার ভাল দাম পাবেন বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন ওই কর্মকর্তা।
এদিকে মঙ্গলবার (১ মার্চ) উপজেলার রহমতপুর ইউনিয়নের ক্ষুদ্রকাঠী এলাকায় উদ্যান তাত্ত্বিক ফসলের গবেষণা জোরদারকরণ প্রকল্পের আওতায় বারি সরিষা-১৪ ফসল নিয়ে মাঠ দিবসের আয়োজন করা হয়। এতে প্রায় অর্ধশতাধিক এই জাতের সরিষা চাষি অংশ নেন। আঞ্চলিক কৃষি গবেষনা কেন্দ্রের মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. রফি উদ্দিন’র সভাপতিত্বে কৃষিবিদ কৃষ্ণচন্দ্র সাহার সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ তেলবীজ গবেষণা কেন্দ্র (গাজিপুর) এর মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. ফেরদৌসি বেগম।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, আঞ্চলিক কৃষি গবেষনা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. আলিমুর রহমান। এছাড়াও কৃষক মো. সেলিম খান,কৃষাণি পলি পারভীনসহ অর্ধশত কৃষক-কৃষাণি উপস্থিত ছিলেন।